বিয়ের বছর ঘোরেনি। তার আগেই সিয়াচেনে ঝরে গিয়েছে ক্যাপ্টেন অংশুমান সিং-এর প্রাণ। সেই বীরত্বের সম্মানে এবার কীর্তিচক্রে ভূষিত করা হল তাঁকে। সেই সূত্রেই তাঁকে ছুঁয়ে দেখছেন তাঁর তরুণী স্ত্রী।
একসঙ্গে ঘর বাঁধার স্বপ্ন পূরণ হয়নি ‘শেরশা’ বিক্রম বাত্রা আর ডিম্পল চিনার। সেনার জীবনে এমন কত স্বপ্নই হারিয়ে যায়। তবে ক্যাপ্টেন অংশুমান সিং আর স্মৃতির গল্পটাও যে তেমন অপ্রাপ্তির দলেই নাম লেখাবে, সে কথা তাঁরা ভাবেননি। অন্তত ঘর বাঁধার স্বপ্নটুকু তো সত্যি হয়েছিল। সেই সত্যিতে ভর করে ভেবেছিলেন, বাকিটাও জীবন ভরিয়ে দেবে ঠিক। নিজেরা সমস্ত সাধ আহ্লাদ দিয়ে বাড়ি বানাবেন, থাকবেন একসঙ্গে, সে বাড়ি ভরে উঠবে শিশুর হাসিতে… কিন্তু, সবকিছুর উপর নিষ্ঠুর টানে একটা কালো কালির পোঁচ বুলিয়ে দিয়ে গেল নিয়তি। দুহাতে জড়ো করা স্মৃতি নিয়ে জীবনের পথে একলা দাঁড়িয়ে পড়লেন স্মৃতি সিং। যিনি এখনও বুঝতেই পারছেন না, এরপর কোনদিকে যেতে হয়। কলেজের প্রথম দেখাতেই যে ছেলেটির প্রেমে পড়েছিলেন, যাঁর সঙ্গে দীর্ঘ আট বছর ধরে লং ডিসট্যান্স রিলেশনশিপ চলতেই থেকেছে, সেই অংশুমানের সঙ্গে সম্পর্কে যে বরাবরের মতো দাঁড়ি টানা হয়ে গিয়েছে, এ কথা তিনি বিশ্বাস করবেন কী করে! তবে, স্মৃতি বলছেন, স্বামীর নামে কীর্তিচক্র হাতে ধরেই যেন প্রথমবার এই কঠিন সত্যিকে বিশ্বাস করলেন তিনি। আর তখনই তিনি বলতে পারলেন, এতখানি অর্জন করতে গিয়ে অনেক কিছু সামলাতে হয়েছে তাঁর স্বামীকে। বাকিটুকু সামলানোর দায়িত্ব নাহয় তিনিই নেবেন।
আরও শুনুন:
শহিদ ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রার স্মৃতি নিয়েই দিন কাটাচ্ছেন প্রেমিকা ডিম্পল, শুনে আপ্লুত কিয়ারা
২০২৩-এর ফেব্রুয়ারি মাসে বিয়ে হয়েছিল অংশুমান ও স্মৃতির। যদিও দুজনের দেখা হয়েছিল তার অনেক আগে, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়তে ঢুকে প্রথম দিনেই। স্মৃতি মনে করেন, প্রেমটা সেদিনই হয়ে গিয়েছিল। যদিও এক মাস পরেই আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ-এ পড়ার সুযোগ পান অংশুমান। কিন্তু একসঙ্গে পড়া না হলেও, একসঙ্গে জীবন কাটানোর স্বপ্নটায় ছেদ পড়েনি। অনেক স্বপ্ন নিয়েই সাত পাকে বাঁধা পড়েছিলেন দুজনে। কিন্তু তারপরেই যেন বাধা হয়ে দাঁড়াল নিয়তি। বিয়ের দুমাসের মাথাতেই সিয়াচেনে পোস্টিং হয় ক্যাপ্টেনের। দেখতে দেখতে আসে অভিশপ্ত জুলাই মাস। একদিন ভোররাতে সিয়াচেনে জওয়ানদের অস্ত্রশস্ত্রের ভাণ্ডারে আগুন লেগে যায়। নিজের পরোয়া না করে উদ্ধার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন অংশুমান। আগুন ছড়িয়ে পড়ে চিকিৎসাকেন্দ্রের দিকেও। জীবনদায়ী ওষুধগুলি বাঁচানোর তাগিদে আর কোনওদিকে তাকাননি ক্যাপ্টেন। ফলশ্রুতিতে শরীরে অনেকগুলি পোড়ার ক্ষত নিয়ে মৃত্যু হয় তাঁর।
আরও শুনুন:
নর্তকীর ছদ্মবেশে উদ্ধার করেন বন্দি সেনাকে, নেতাজিকেও প্রাণে বাঁচিয়েছিলেন এই নারী গুপ্তচর
সেই বীরত্বের কথা মনে করেই এবার মরণোত্তর কীর্তিচক্রে ভূষিত করা হল ক্যাপ্টেন অংশুমান সিং-কে। তাঁর স্ত্রী এবং মায়ের হাতে সেই সম্মান তুলে দিলেন খোদ রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। স্মৃতির কাঁধে হাত ছুঁইয়ে সান্ত্বনাও দেন রাষ্ট্রপতি। যদিও এ শোকের সান্ত্বনা হয় না। তবে স্মৃতি জানেন, সাধারণভাবে মরে যেতে চাননি তাঁর স্বামী। বরং মৃত্যুর সময় তাঁর বুকে গুলির ক্ষত থাকবে, এ-ই কাম্য ছিল তাঁর। মৃত্যুর সময়েও ব্যক্তিগত সব চাওয়াপাওয়া ভুলে বীরত্বকেই আলিঙ্গন করেছিলেন তিনি। তাই ব্যক্তিগত শোকের পাহাড় সরিয়ে, স্বামীর কীর্তিচক্র আঁকড়েই সান্ত্বনা খুঁজে নিচ্ছেন তরুণী।