রিক্লেম দ্য রাইটস, বলছেন মেয়েরা। নাগরিক হিসেবে যা যা প্রাপ্য অধিকার, তা বুঝে নিতে সরব হচ্ছেন তাঁরা। এই দাবি আদায়ের জন্য আগেও হাতিয়ার হয়েছে অনশন। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
নিজের কর্মক্ষেত্রে এক চিকিৎসক তরুণীর মৃত্যু মেয়েদের নিরাপত্তার অধিকার নিয়ে প্রশ্ন উসকে দিয়েছে নতুন করে। একজন মানুষ হিসেবেই মেয়েদের যা যা নাগরিক অধিকার প্রাপ্য, তা বুঝে নেওয়ার কথা বলছেন মেয়েরা। কেন-না সমাজ তো বটেই, আইনও নারীকে সহনাগরিক, সমনাগরিকের মর্যাদা না দিয়ে তাকে ‘মেয়ে-মা-বোন’, ‘পরনির্ভরশীল’ এমন নানা পিতৃতান্ত্রিক রেটরিকে বন্দি করে ফেলে। যেখানে দাঁড়িয়ে মেয়েদের চুপ করে থাকা, মানিয়ে নেওয়াই শোভন বলে গণ্য হয়। ফলে মেয়েদের প্রয়োজন আর অধিকারের কথা অতলেই তলিয়ে যেতে থাকে, আর আরও প্রশস্ত হয় হেনস্তার পথ।
আরও শুনুন:
রাতের পথে কেবল ধর্ষকের অধিকার নাকি! বহু আগেই শুরু ‘টেক ব্যাক দ্য নাইট’ আন্দোলনের
নারীমুক্তির ইতিহাসে সৌভাগ্যের কথা এটাই যে, সব মেয়েরা ‘লক্ষ্মী মেয়ে’-র মতো চুপ করে থাকতে চাননি। তাঁরা আন্দোলনের পথ খুঁজেছেন নানাভাবে, নানা পথে নিজেদের কথা শাসকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। মেয়েদের অধিকার দখলের এই লড়াইয়ে হাতিয়ার হয়েছে অনশনও। আর সেই প্রেক্ষিতে অ্যালিস পল-এর কথা মনে না রেখে আমাদের উপায় নেই।
এই অ্যালিস ‘ওয়ান্ডারল্যান্ডের’ কেউ নন, তবে তিনিও এক বিস্ময় দুনিয়ার কথা ভাবতেন বইকি। যে দুনিয়ায় মেয়েদের অধিকারের পদে পদে বেড়া টেনে দেওয়া হয়নি। নিজের বাস্তব দুনিয়াটায় সেই যে বেড়াগুলোয় তাঁকে ও তাঁর মতো আরও অনেক মেয়েকে নিয়ত ধাক্কা খেয়ে পড়তে হত, সেই বেড়াগুলো উপড়ে ফেলার জন্য কোমর বেঁধেছিলেন তিনি। আর তার জন্যই তিনি বেছে নিয়েছিলেন অনশনের পথ।
সেই সময়টা বিশ শতকের একেবারে গোড়ার দিক। আজকের চোখধাঁধানো পাশ্চাত্যও তখন নারীর অধিকারের বিষয়ে অনেক পিছিয়ে। সেসময়েই ব্রিটেনে নারীমুক্তি আন্দোলনে যোগ দেন অ্যালিস। Women’s Social and Political Union-এর সদস্য অ্যালিস মোট সাতবার গ্রেপ্তার হন, তিনবার জেলে যেতে হয়। শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদের পথ হিসেবে এই সংগঠনের সদস্যরা বারেবারেই অনশনের পথে হেঁটেছেন। ১৯০৯ সালের জুন মাসে ভাস্কর এবং সংগঠনের কর্মী মেরিয়ন ওয়ালেস ডানলপ এই পথ দেখিয়েছিলেন। এরপর আন্দোলনকারী বা জেলবন্দিদের প্রতি অন্যায়ের কথা ছড়িয়ে দিতে একাধিকবার এই পথ নিয়েছেন তাঁরা। অ্যালিসও জেলে গিয়ে অনশন করেন, প্রথম দুবার তাঁকে সে কারণে তড়িঘড়ি ছেড়ে দেওয়া হয়। ১৯১৭ সালে তৃতীয়বার যখন মাসখানেকের জন্য কারাবাস হয় তাঁর, সেবারেও তিনি অনশন শুরু করেন। কিন্তু সেবার তাঁকে বলপ্রয়োগ করে খাওয়ানোর নির্দেশ দেয় জেল কর্তৃপক্ষ। এই পদ্ধতি যে কতখানি অমানবিক এবং অত্যাচারের নামান্তর ছিল, সে কথা বলেছেন অ্যালিস। কারামুক্তির পরও তাঁর শরীরের সেই ক্ষত স্থায়ী হয়ে বসেছিল।
আরও শুনুন:
নির্যাতনের দামে কেনা, তাই খোলা আকাশের অধিকার মেয়েদেরও
সংগঠনের তরফে ‘হাঙ্গার স্ট্রাইক মেডেল’ দিয়ে সম্মান জানানো হয় অ্যালিসকে। তবে আন্দোলনকারীদের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল মেয়েদের ভোটাধিকার, যে দাবিটি কয়েক বছর পর স্বীকৃত হয়। ১৯২০ সালে মেয়েদের ভোটাধিকার দেয় ব্রিটেনের আইন। নারীদের সমানাধিকার প্রসঙ্গে সংশোধনীও লিখেছিলেন অ্যালিস। মেডেল নয়, এই বদলই সম্ভবত তাঁর অনশনের যোগ্য পুরস্কার।