আর জি কর কাণ্ডের প্রেক্ষিতে রাজ্য জুড়ে রাত দখলের ডাক দিয়েছেন মেয়েরা। প্রশ্ন তুলেছেন, রাতের পথের অধিকার কেবল ধর্ষকের? রাতের অধিকার মেয়েদের নয়? এই প্রশ্নে ভিত্তি করেই অনেক আগেই শুরু হয়েছিল ‘টেক ব্যাক দ্য নাইট’ আন্দোলন। এই পরিস্থিতিতে যা ফিরে এল নতুন করে।
ইতিহাস বারবার ফিরে ফিরে আসে, এও ইতিহাসেরই শিক্ষা। সেই কথা মেনেই আর জি কর কাণ্ডের প্রেক্ষিতে ফিরে এল ‘টেক ব্যাক দ্য নাইট’ আন্দোলন। রাতের দখল নেওয়ার ডাক দিলেন মেয়েরা। যে ডাক ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে শহর ছাড়িয়ে মাঠ-পাথার-বন্দরে। কলকাতার নানা এলাকায় তো বটেই, শিলিগুড়ি-কোচবিহার থেকে নৈহাটি-চুঁচুড়া, মেদিনীপুর-বাঁকুড়া-বর্ধমান পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে মেয়েদের সেই স্পর্ধার ডাক। রাত কেবল হেনস্তাকারী পুরুষের অবাধ বিচরণক্ষেত্র হবে, আর রাতে ভয়ে গুটিয়ে থাকবে মেয়েরা, এই নিয়ম পালটাতে চেয়েই রাত দখলের ডাকে মুখর মেয়েরা।
আরও শুনুন:
দাবি ১১ দফা, আর জি কর কাণ্ডের প্রেক্ষিতে রাত দখলের ডাক রাজ্যের মেয়েদের
তবে কথা হল, এই ডাক কিন্তু আদৌ বিচ্ছিন্ন কোনও একটি কর্মসূচি নয়। বরং এর বীজ লুকিয়ে আছে অন্তত পাঁচ দশক আগের ইতিহাসে। মেয়েরা এ পর্যন্ত যতখানি পথ এগিয়ে এসেছেন, সেই পথচলার ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক আন্দোলন শুরু হয়েছিল সত্তরের দশকে। ‘টেক ব্যাক দ্য নাইট’ শিরোনামে সে আন্দোলন রাতের দখল ফিরে পেতে চেয়েছিল। ১৯৭৫ সালে আমেরিকার ফিলাডেলফিয়ায় রাতে বাড়ি ফেরার সময়ে খুন হন একজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে পথে নেমেছিলেন মেয়েরা। সাতের দশকেই বেলজিয়ামে একটি ট্রাইব্যুনাল কাউন্সিল বৈঠকে যোগ দেন অন্তত ৪০টি দেশের প্রায় ২০০০ নারী। ক্রমে ক্রমে নারীর যৌন হেনস্তার প্রতিবাদে আন্দোলনের সামনের সারিতে এসে দাঁড়ায় ‘টেক ব্যাক দ্য নাইট’। ধর্ষণ এবং ধর্ষিতাকে দোষারোপের যে সংস্কৃতি, তার বিরুদ্ধে নানা আন্দোলন ‘টেক ব্যাক দ্য নাইট’ ব্যানারের তলাতেই অনুষ্ঠিত হয়ে এসেছে বহুদিন ধরে।
আরও শুনুন:
নির্যাতনের দামে কেনা, তাই খোলা আকাশের অধিকার মেয়েদেরও
রাতের মধ্যে তো আসলে কোনও ভয়াবহতা নেই। তা ভয়াবহ হয়ে ওঠে কিছু মানুষের হিংস্রতায়। সেই হিংস্রতা মেয়েদের পথচলার সামনে কাঁটার বেড়া তুলে দেয়। মেয়েদের ঘরে বন্ধ করে। যেভাবে মেয়েরা অন্যান্য লক্ষ্মণরেখা পেরিয়ে পেরিয়ে পথ গড়েছেন, সেভাবেই এই গণ্ডিও নাকচ করতে চেয়েছেন তাঁরা, বরাবর। নানা ঘটনায় পৃথিবীর নানা দেশে এভাবে পথে নেমেছেন মেয়েরা। ‘রাতের বেলা বেরনো উচিত হয়নি’, বলে পুরুষ নিজের হিংস্রতার দায় এড়ায়। সেই দায় চাপানোর পালটা দিতেই রাত দখলের ডাক দিয়েছিলেন মেয়েরা। আর জি কর নতুন করে বুঝিয়ে দিয়েছে, সেই প্রয়োজন এখনও জারি। নির্যাতনের সামনে অধিকার বুঝে নিতেই তাই মেয়েরা ফের বোঝাতে চাইছেন, রাত কেবল পুরুষের নয়, রাতের মালিকানায় লেখা আছে নারীরও নাম।