তিনি ঈশ্বর। তিনি পৃথিবী। তিনি আমাদের ভালোবাসা। শচীন তেণ্ডুলকর। যে নামের সামনে নতজানু ভারতবাসী। আগেও ছিল, এখনও আছে। গোটা বিশ্ব যে বিস্ময় প্রতিভাকে স্মরণ করে সম্ভ্রমে। তাঁরই ৫০তম জন্মদিনে সংবাদ প্রতিদিন-এর আয়োজন ‘বাহ্ শচীন’। নিরলস সাধনায় যে সাধক দেশকে এনে দিয়েছেন অনন্ত ঐশ্বর্য, তাঁকেই ফিরে ফিরে দেখা স্বজন, সতীর্থদের চোখে। আসুন মেতে উঠি এই শচীন পার্বণে।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়: জীবনে এমন কোনও কোনও সম্পর্ক থাকে যার মাধুর্য একেবারে অন্যরকম। শচীনের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা তেমনই।
Sachin@50: শচীনের সঙ্গে মিল মূল্যবোধে, জন্মদিনের উদযাপনে জানালেন অঞ্জলি
শচীনের সঙ্গে বন্ধুতার সম্পর্কে আমার বাঁধা পড়ে যাওয়াটা তো আজকের কথা নয়। সেই ইন্দোরে অনূর্ধ্ব-১৪ ক্যাম্পে ওকে প্রথম দেখি। তখন আমরা দুজনেই বছর তেরোর কিশোর, শচীন আমার থেকে মাস আষ্টেকের ছোট। মধ্যপ্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের তত্ত্বাবধানে হওয়া সেই ক্যাম্প পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন বাসু পরাঞ্জপে। সঞ্জয় জগদলেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। সেই প্রথম দেখলাম দেখলাম শচীনকে। বম্বে থেকে আসা কোঁকড়ানো চুলের একটা ছেলে, যে কিনা ব্যাট করতে বেজায় ভালবাসে। সবার আগে নেটে চলে যেত, আর ব্যাটিং করছে তো করেই চলেছে। কিছুতেই আর তাকে থামানো যায় না। সে এক দেখার মতোই জিনিস। একটা ছেলে লাগাতার ব্যাট করে চলেছে। নিরবচ্ছিন্ন অধ্যবসায়, অখণ্ড মনোযোগ। বাসুই বরং মাঝেমধ্যে গিয়ে ওকে থামাত। ক্যাম্পে সকলেই তখন ওর সম্বন্ধে, ওর বিরল প্রতিভা সম্বন্ধে বলাবলি শুরু করেছিল। সাধারণত যেভাবে ব্যাট ধরা হয় শচীনের ব্যাট ধরার ধরন ছিল তা থেকে বেশ আলাদা। ও একটু নিচুতেই ব্যাটটা ধরত, মানে ওর ব্যাটের ভারটা ওর খেলাকে সেভাবে প্রভাবিত করত না। আমরা দেখতাম ওইভাবেই কী চমৎকার শট নিতে পারত ও, আর টাইমিং তো লা-জবাব।
আরও শুনুন:Sachin@50: বেন অ্যাফ্লেক, রবার্ট প্যাটিনসন নন, আমার দেখা সেরা ‘ব্যাটম্যান’ শচীন
এর ক-বছরের মধ্যেই জাতীয় দলের দরজা খুলল শচীনের জন্য। মাত্র ১৬ বছর বয়সে ওর এই ডাক পাওয়া আমার কাছে অন্তত আশ্চর্যের কিছু ছিল না। কেননা শচীন তখন দুরন্ত খেলছিল। ততদিনে রনজি আর ইরানি ট্রফির সেঞ্চুরি চলে এসেছে ওর ঝুলিতে। ১৯৮৯-এর পাকিস্তানের টুরে জাতীয় দলে চলে এল শচীন। সিরিজের সব ম্যাচ দেখা হয়নি, আমি তখন বেঙ্গল টিমের হয়ে খেলছি। একটা ম্যাচ দেখেছিলাম, যেটায় আব্দুল কাদিরকে মাটি ধরিয়ে দিয়েছিল শচীনের ব্যাট। এমনিতেই বৃষ্টির জন্য ম্যাচটা কুড়ি ওভারের হয়ে গিয়েছিল; কিন্তু তা হোক, ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচ, সে যত ওভারেরই হোক না কেন, চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা সেখানে থাকবেই থাকবে। একটা সময় তো আস্কিং রেট ওভারপিছু দশের বেশি হয়ে গিয়েছিল। একটা মিরাকল না হলে ভারতের জেতা প্রায় অসম্ভব, এমনই একটা পরিস্থিতিতে মাঠে নামল শচীন। আর সত্যিই যেন মিরাকলের সাক্ষী থাকলেন সকলে। ১৮ বলে শচীন সেদিন শুধু ৫৩ রানই করেনি, কাদিরকে যে চারটে ছয় মেরেছিল তা আজও চোখের সামনে ভাসে। মাঠের প্রায় প্রত্যেকটা কোণে সেদিন শচীনের শট গোলার মতো আছড়ে পড়েছিল। অল্পের জন্য ভারত সেদিন ম্যাচটা জিততে পারেনি বটে, কিন্তু ক্রিকেটবিশ্ব জেনে গিয়েছিল এই দুনিয়া শাসন করতে একজন এসে গিয়েছে- নাম তার শচীন তেণ্ডুলকর।
আরও শুনুন: Sachin@50: আমার লেগ গার্ড শচীনকে দিতে দ্বিধা করিনি
১৯৯২-এ আমাদের আবার দেখা হল অস্ট্রেলিয়া টুরে। আমি দলে ছিলাম, তবে প্রথম একাদশে ছিলাম না। ওদিকে শচীন ততদিনে দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান হিসাবে নিজের জায়গা পাকা করে ফেলেছে। এই সিরিজটায় আমরা রুমমেট ছিলাম। অস্ট্রেলিয়ায় ওর প্রথম সেঞ্চুরির আগের রাতের কথা আমার স্পষ্ট মনে আছে। এমনিতে ভারতের অবস্থা তেমন সুবিধার নয়, দলের প্রত্যেকের ভাল খেলা খুব জরুরি। তাতে অন্তত আত্মবিশ্বাসটা ফিরে আসে। কিন্তু শচীন সে-রাতে কিছুতেই ঘুমোতে পারছিল না। আমি ওকে পইপই করে ঘুমোতে বলছি আর ও আমাকে দেখিয়ে যাচ্ছে বোলারকে কীভাবে মারবে, কোথায় মারবে সেইসব। একটা সময় আমি হাল ছেড়ে দিয়ে নিজেই ঘুমিয়ে পড়লাম। পরদিন শচীন আমায় বলল, ড্রেসিংরুমেই ও টুক করে একটু ঘুমিয়ে নেবে, আমি যেন ওকে ঠিক সময়ে জাগিয়ে দিই। ভগবান জানেন, সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের ড্রেসিংরুমে ওর কী করে ঘুম এসেছিল। যাই হোক, আজহারউদ্দিন আউট হতেই আমি ওকে জাগালাম। উঠে বলল, এখন বেশ ঝরঝরে লাগছে। তারপর মাঠে নেমে ১৪৮ রানের একখানা দুরন্ত ইনিংস খেলে ফিরল। সেবার সিডনি টেস্টটা আমাদের জেতা উচিত ছিল। তবে পিকচার আভি বাকি হ্যায়।
আরও শুনুন: Sachin@50: কতটা পথ পেরোলে তবে ‘শচীন’ হওয়া যায়?
শচীনের ভিতরকার আগুনটা জ্বলে উঠল পারথে। এমনিতেই এখনকার উইকেট অত্যন্ত দ্রুতগামী, তার উপর বড় ফ্যাক্টর শচীনের উচ্চতা। ওই আগুনে গতির বাউন্স সামলে খেলা যে কত কঠিন ছিল, তা যাঁরা বোঝার তাঁরা বুঝবেন। সেই পিচে অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের বিপক্ষে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে সেঞ্চুরি করল শচীন। আমি আজও বাজি ধরে বলতে পারি, ওটা ছিল ওর জীবনের সেরা ইনিংস। যেখানে ব্যাটে-বলে এক করতে অন্য ব্যাটসম্যানরা রীতিমতো নাকানিচোবানি খান, সেখানে মোটে আঠেরো বছরের একটা ছেলের পারফরম্যান্স যেন হয়ে উঠল ব্যাটিংয়ের মাস্টারক্লাস।
আরও শুনুন: Sachin@50: দেবতাজ্ঞানে যাঁকে ভক্তি করি, তাঁর অধিনায়ক হওয়া ছিল স্বপ্নের মতো
এই অস্ট্রেলিয়া টুরের পর আমি দল থেকে বাদ পড়লাম। ১৯৯৬-এর ইংল্যান্ড টুরে শচীন আর আমি আবার একই ড্রেসিংরুমে। সেবার প্রথম টেস্টে আমি খেলিনি, শচীন ওই টেস্টে সেঞ্চুরি করেছিল। দ্বিতীয় টেস্টে আমি সুযোগ পেলাম। শচীন তিন নম্বরে, আর আমি চারে নামলাম। আমাদের প্রথম পার্টনারশিপে সেদিনের মতো দুজনেই অপরাজিত থাকলাম। পরদিন সকালে ক্রিশ লুইস ওকে আউট করে দিল। এই টেস্টে আমি সেঞ্চুরি করেছিলাম। মনে আছে, টি-সেশনের এর শেষে যখন ড্রেসিংরুমে ফিরলাম তখন আমার ব্যাটে একটা কিরকিরে শব্দ হচ্ছিল। শচীন এগিয়ে এসে বলল, ও ব্যাটে টেপ লাগিয়ে দেবে, আমি যেন এসব নিয়ে টেনশন না করি। ও কিন্তু সত্যি তা-ই করেছিল। সেদিনের খেলা শেষ হতে শচীন আমাকে বলেছিল, এই তো সবে শুরু। টেস্ট কেরিয়ারে এখনও অনেকটা পথ যেতে হবে আমায়। নিজের ক্ষমতার উপর যেন ভরসা না হারাই। দ্বিতীয় আর তৃতীয় টেস্টের মাঝের সময়টায় হ্যাম্পশায়ারে আমরা একটা ম্যাচ খেলছিলাম। সেই ম্যাচটায় আমি শচীনের ব্যাট নিয়েই খেলতে নামি, কেননা আমার ব্যাটটা ভেঙে গিয়েছিল। সে সময়ে টিমে প্রায় প্রত্যেকেই আমার থেকে সিনিয়র। কারও কাছে গিয়েই ব্যাট চাইতে পারতাম না। শচীনের কাছেই গিয়েছিলাম। বরাবরের মতোই ও কিন্তু ওর ব্যাটটা আমায় দিতে এক মুহূর্ত দ্বিধা করেনি। ওই ম্যাচেও আমি সেঞ্চুরি পেলাম।
আরও শুনুন: Sachin@50: স্যরকে দেখব বলে পুলিশের মারও খেয়েছি, শচীন তেণ্ডুলকর আমার ঈশ্বর
টেন্টব্রিজে পরের টেস্টে আমরা দু’জনেই সেঞ্চুরি করলাম। এই টেস্টের একটা ঘটনার কথা বলি। একটা সেশনে দেখলাম সুইং সামলাতে শচীনের বেশ অসুবিধা হচ্ছে। কিন্তু আউট হয়নি। লাঞ্চের সময় ওর রান তিরিশ বা তিনের ঘরে, আমি ব্যাট করছিলাম ৪৪-এ। উলটোদিকে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম, শচীন খুব জোরে শট নেওয়ার চেষ্টা করছে। বরং টাইমিং-এ জোর দিলে আরও ভাল খেলবে। লাঞ্চের সময় চুপিচুপি ওকে বললাম সে-কথা। আর তারপরেই ও একেবারে বদলে গেল। মাঠে যেন অন্য কোনও ব্যাটসম্যান খেলছে, সুইং সামলাতে যার বিন্দুমাত্র সমস্যা নেই। আমার থেকে আগেই ও সেঞ্চুরি করল। জিওফ্রে বয়কট ধারাবিবরণীতে মজা করে বলেছিলেন, লাঞ্চে শচীন কী এমন খেল যে, একেবারে অন্য রূপে মাঠে ধরা দিল! এই-ই হল শচীন। কথা না বাড়িয়ে যদি সংক্ষেপে বলি, তাহলে একটাই কথা বলতে হয়, আমার দেখা শ্রেষ্ঠ ক্রিকেটার শচীনই। আমি ব্র্যাডম্যানকে দেখিনি। কিন্তু শচীনকে দেখেছি। একজন মানুষ পারফেকশনের ঠিক যতটা কাছাকাছি পৌঁছতে পারে, শচীন যেন তারই সমার্থক। যেমন অবিশ্বাস্য প্রতিভা, তেমনই নিজের ভিতর জাগিয়ে রাখা চিরঅতৃপ্তির আগুন। সাধে কি আর শচীন জিনিয়াস হয়ে উঠেছে! ওর সম্পর্কে যখনই কেউ কিছু বলতে এসেছে, আমি শুধু ওর ওই একশো শতরানের অবিশ্বাস্য নজিরের দিকে আঙুল তুলে দেখিয়েছি। একজন খেলোয়াড়ের ভিতর কী অসম্ভব খিদে, পারফর্ম করার তাড়না থাকলে তবে এই অত্যাশ্চর্য মাইলফলক স্পর্শ করা যায়, তা বোধহয় কল্পনাও করা যায় না। অন্য যে কোনও ভাল খেলোয়াড়ের থেকে শচীনের একটা মূল ফারাক আছে। ধরা যাক, একজন ভালো খেলোয়াড় প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করলেন, দ্বিতীয় ইনিংসে পঞ্চাশে পৌঁছলেন। এবার সমূহ সম্ভাবনা থাকে যে, তিনি একটা ভুল শট খেলবেন। এটা আমাদের সবার ক্ষেত্রেই হয়। কিন্তু শচীন তো শচীন-ই। শচীন এই দ্বিতীয় ইনিংসেও একটাও ভুল শটের ধার দিয়েও যাবে না, বরং সেঞ্চুরি করে তবেই ফিরবে। আমি তো তাই সবসময় বলি লারা ‘গ্রেট’, পন্টিং ‘ব্রিলিয়ান্ট’, কিন্তু শচীন ‘গ্রেটেস্ট’।
আরও শুনুন: Sachin@50: শচীন সর্বোত্তম ক্রিকেট-শিল্পী, ওঁর ব্যাটিং লতা মঙ্গেশকরের গানের মতোই
শচীনের খেলার ধরন আমিই সবথেকে ভাল বুঝতে পারতাম, এ-কথা বললে নিশ্চয়ই অত্যুক্তি হবে না। সত্যি বলতে, কখন-সখনও আমি ওর মন পড়তে পারতাম। হয়তো দেখছি যে, অফসাইডে সামান্য অ্যাঙ্গেলে ওর পা ঘোরাফেরা করছে, বুঝতে পারতাম যে, ও স্কোয়ার লেগ মারার জন্য তৈরি হচ্ছে। এরকম একবার হয়েও ছিল। শন পোলককে মারবে বলে ও তৈরি, অফসাইডের দিকে এগিয়েও গিয়েছে। কিন্তু পিচে তেমন পেস ছিল না, আমার তাই মনে হচ্ছিল যে, চতুর পোলক কিছুতেই শচীনকে শর্ট বল করবে না। গিয়ে বললাম সে-কথা। সঙ্গে সঙ্গেই ও মত বদলে ফেলল, পালটে ফেলল আক্রমণের ধরন। অনেক সময় শচীনও আমাকে এরকম পরামর্শ দিত। হয়তো পরপর অফে শট খেলছি, তখন গিয়ে সতর্ক করত। আসলে বহুবছর টানা একসঙ্গে ব্যাট করেছি তো, আমরা দুজনেই দুজনকে বুঝতে পারতাম। একে অন্যের মন পড়ে ফেলতাম দুজনে। একসঙ্গে খেলাটা তাই আরও উপভোগ্য হয়ে উঠত।
আরও শুনুন:Sachin@50: চাপ সামলানোর ক্ষমতা ছিল ঐশ্বরিক, আমরা শচীনকে দেখেই শিখি
আমার দেখা শ্রেষ্ঠ ক্রিকেটারের সম্পর্কে লিখতে শুরু করলে সত্যি শেষ হবে না। তবে আর-একটা ঘটনার কথা আমাকে বলতেই হবে। ২০০৩-এর বিশ্বকাপ, দক্ষিণ আফ্রিকায়। জীবনের সেরা খেলাগুলি সাজিয়ে রাখতে হয়, তবে এই টুর্নামেন্টের কথা সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে। আমার মনে হচ্ছিল যে, শচীন যদি চার নম্বরে নেমে মিডল অর্ডারকে একটু ভরসা দেয়, তাহলে দলের ভাল হবে। এই নিয়ে জন রাইট, অনিল কুম্বলে শচীন আর আমার একটা মিটিং হল। শচীনকে জিজ্ঞেস করলাম যে, ও ঠিক কী চাইছে? শচীন বলল যে, ও টপ অর্ডারেই থাকতে চায়। আমি কখনোই আমার ইচ্ছে-অনিচ্ছে সতীর্থদের উপর চাপাইনি, এবারও ওকে ওর ইচ্ছের পজিশনেই খেলতে দিলাম। বাকিটা তো ইতিহাস। সারা বিশ্ব দেখেছে কীভাবে প্রতিপক্ষের বোলিং-কে প্রায় একা হাতে ধ্বংস করেছিল শচীন। তারপর এল সেঞ্চুরিয়নে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেই বিখ্যাত ম্যাচ। পাকিস্তান প্রথমে ব্যাট করে ২৭৩ তুলেছিল। দুই ইনিংসের মাঝখানে শচীনকে আমি জিজ্ঞেস করলাম যে, টিমের সকলের সঙ্গে কি একবার কথা বলব? শচীনের জবাব, কোনও দরকার নেই। দল এমনিতে ভাল ছন্দে আছে, এই নিয়ে আর ব্যতিব্যস্ত করে লাভ নেই। বেশি কথা বললে সকলে বিভ্রান্ত হতে পারে, এমনটাই মত ওর। আমিও তাই আর কাউকে কিছু বললাম না। ভাবলাম, সকলে নিজের খেলাটাই খেলুক। শচীন নিজেও তাই-ই করল। একেবারে নিজস্ব ছন্দে শুরু করল ম্যাচটা। প্রথম পাঁচ ওভারেই যখন আমরা ষাট রান তুলে ফেললাম, মোটামুটি তখনই পাকিস্তানের হাত থেকে ম্যাচের রাশ আমাদের হাতে চলে এসেছে। বিশ্বকাপের আসরে ভারত-পাক ম্যাচ যে কীরকম হাই-ভোল্টেজ, তা বোধহয় বলার অপেক্ষা রাখে না। আর সেখানেও শচীন দেখা দিয়েছিল শচীন হয়েই। ঠিক যে ম্যাচে ওকে যেভাবে দরকার, সেই ম্যাচে ঠিক সেভাবেই নিজের সেরাটা দিয়ে গিয়েছে শচীন।
আরও শুনুন: Sachin@50: শচীন স্যরকে প্রথম দর্শনে কেঁপে উঠেছিলাম
শচীন পঞ্চাশে পা রাখছে, ওকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই। আর প্রথমত দ্বিতীয়ত আমি যা বলেছি শেষ পর্যন্ত আমি সেই একটা কথাই বলতে চাই, আমার দেখা শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়ের নাম শচীন। জানি না শচীনের মতো দ্বিতীয় আর কাউকে কখনও দেখব কি না। একশো শতরানের ওই অবিশ্বাস্য মাইলফলক আর হয়তো কেউই স্পর্শ করতে পারবেন না। এই বিস্ময়-প্রতিভা আমার বন্ধু। তাকে কী আর বলি! শুধু বলি, কী অবিশ্বাস্য কীর্তি তুমি গড়েছ শচীন, তোমার তুলনা আমি খুঁজি না কোথাও। শুভ জন্মদিন, ভাল থেকো।