তিনি ঈশ্বর। তিনি পৃথিবী। তিনি আমাদের ভালোবাসা। শচীন তেণ্ডুলকর। যে নামের সামনে নতজানু ভারতবাসী। আগেও ছিল, এখনও আছে। গোটা বিশ্ব যে বিস্ময় প্রতিভাকে স্মরণ করে সম্ভ্রমে। তাঁরই ৫০তম জন্মদিনে সংবাদ প্রতিদিন-এর আয়োজন ‘বাহ্ শচীন’। নিরলস সাধনায় যে সাধক দেশকে এনে দিয়েছেন অনন্ত ঐশ্বর্য, তাঁকেই ফিরে ফিরে দেখা স্বজন, সতীর্থ-অনুরাগীদের চোখে। আসুন মেতে উঠি এই শচীন পার্বণে।
আশা ভোঁসলে: শচীনের ব্যাটিং যেন লতা মঙ্গেশকরের গানের মতোই– চিরন্তন, চিরকালীন। আপনারা খেয়াল করে দেখবেন, জীবনের প্রায় প্রত্যেকটা অনুভূতির সঙ্গেই মিলে যায় লতা মঙ্গেশকরের কোনও না কোনও গান। একইভাবে, যে কোনও পরিস্থিতিতে ও ফরম্যাটে শচীনের ব্যাটিং চোখ জুড়িয়ে দেয়। কী অবলীলায় ও নিজেকে নানা পরিস্থিতির সঙ্গে আত্মস্থ করে নিতে পারে। দিনের যে কোনও সময় লতাদিদির গান শুনতে আপনার যেমন ক্লান্তিবোধ হবে না, শচীনের ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আমি তো তাই বলি, শচীন হল ক্রিকেটের সর্বোত্তম শিল্পী।
[email protected]: শচীনের সঙ্গে মিল মূল্যবোধে, জন্মদিনের উদযাপনে জানালেন অঞ্জলি
ক্রিকেট তো আমি কমদিন হল দেখছি না। সেই সুভাষ গুপ্তে থেকে পলি উমরিগড়, বিজয় মঞ্জরেকর, ভিভিয়ান রিচার্ডস থেকে সুনীল গাভাসকর- সকলকেই দেখেছি। তারপর এল শচীন।আমি তো বলব ভিভের আক্রমণাত্মক মনোভাব আর গাভাসকরের আভিজাত্যের এক অনবদ্য মিশেল হল শচীন। এমন একজন যে নিজের ক্লাস আর এলিগ্যান্সের চমৎকার ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে। দিনে দিনে ওকে এই সর্বোত্তম বিন্দুটিতে পৌঁছতে দেখেছি আমি। ওর যখন বছর পনেরো বয়স, তখন থেকেই তো ওর কথা শুনছি। রাজ সিং দুঙ্গারপুর ওর কথা প্রথম বলেন। শুনলাম, মুম্বইয়ের একটা ছেলে দারুণ খেলছে। এ-ও শুনলাম যে গাভাসকর নাকি তাকে প্যাড উপহার দিয়েছে। কৌতূহল বাড়ল। তারপর ১৯৮৯-তে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওকে খেলতে দেখলাম। উলটোদিকে ইমরান, আক্রম। সেদিন ওর খেলা দেখেই বুঝলাম, শচীন এক বিরল প্রতিভা। নিজের খেলায় ও সবার থেকে আলাদা। আর তারপর তো ক্রমে ইতিহাস লেখা শুরু হয়ে গেল। ভারতবর্ষ পেয়ে গেল এমন একজনকে যার তুলনা করা যায় স্যর ডন ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে। ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে তুলনা এমনিতেই এতবড় একটা বিষয়, যা ব্যাখ্যার অতীত। আমরা বুঝতে পারি, এই গ্রহে শচীনের অবস্থান ঠিক কোন উচ্চতর বিন্দুটিতে।
আরও শুনুন:[email protected]: বেন অ্যাফ্লেক, রবার্ট প্যাটিনসন নন, আমার দেখা সেরা ‘ব্যাটম্যান’ শচীন
আমি মনে করি, মৃত্যু ছাড়া শিল্পীর আর কোনও অবসর নেই। নব্বই বছর বয়সেও আমি তাই পারফর্ম করি, মানুষকে আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করি। শচীনও আজীবন সেই কাজটিই করে গিয়েছে। আর ওর পরিসর তো ব্যাপক। কোটি কোটি মানুষকে ও আনন্দ দিয়েছে ওর শিল্পের মাধ্যমে। আমার তো মনে হয়, শচীন নিজেই একটা উৎসব। বছরে একাধিকবার যে উৎসবে আমরা শামিল হতে পারি। আমি চাই ও যেভাবে পারে সেভাবে যেন ক্রিকেটের আঙিনা আলো করে রাখে চিরকাল। আর একটা ব্যাপার উল্লেখ করতেই হবে, সেটা খানিক ব্যক্তিগত। শচীনের মতো সফল মানুষরা কোথাও গেলে নির্দিষ্ট অঙ্কের পারিশ্রমিক নেন। অথচ শচীন এক ডাকে আমার অনুষ্ঠানে এসেছে, একটি পয়সাও নিতে চায়নি। এত বড় মাপের মানুষ অথচ এমন বিনয়ী- আজকের দিনে এরকমটা আর দেখা যায় না। শচীন সত্যিই ব্যতিক্রমী। আমি একবার জানতে চেয়েছিলাম, তুমি কী নেবে? ও বলেছিল, কিছু একটা ব্যক্তিগত জিনিস দিন। আমি তখন আমার খাতার যে-পাতায় ‘আঁখো কি মস্তি’ গানটা লিখেছিলাম, সেই পাতাটাই ওকে ফ্রেমে বাঁধিয়ে উপহার দিয়েছিলাম। বলেছিল, এটা ও ঘরে যত্ন করে তুলে রাখবে। শুনে আমি খুব আনন্দ পেয়েছিলাম।
আরও শুনুন: [email protected]: কতটা পথ পেরোলে তবে ‘শচীন’ হওয়া যায়?
দেশের জন্য এত কিছু করেছে যে মানুষটা, সে যে আজও এত ছাপোষা, এতখানি নম্র মাটির মানুষ হয়ে থাকতে পারে তা শচীনকে না-দেখলে সত্যিই বিশ্বাস করা যায় না।