ভগবানের ভালোবাসা পেতে অনেকেই রাশিরাশি ধনসম্পত্তি ব্যয় করেন। তাঁদের ধারণা, এতে ঈশ্বর তুষ্ট হবেন। তাঁর ভালোবাসায় ধন্য হবে ক্ষুদ্র মানবজীবন। কিন্তু ভগবান নিজে কি তা-ই মনে করেন? কৃষ্ণ-সত্যভামা আর রুক্মিণীর গল্পে আমরা পেয়ে যাই সেই উত্তর। আসুন শুনে নিই।
শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী সত্যভামার সঙ্গে একবার দেখা হল দেবর্ষি নারদের। সে এক চমৎকার রাত্রি। জ্যোৎস্নাপ্লাবিত চরাচর। পুষ্পসুবাসে বাতাস আমোদিত। যেন এক অপার্থিব পরিবেশ তৈরি হয়েছে। নিজের কক্ষে বসে আছেন সত্যভামা। এমন সময় সেখানে এলেন দেবর্ষি নারদ। নারদ সত্যভামাকে বললেন, তাঁর স্বামী কৃষ্ণ তো তাঁকে ভালোবাসেন নিশ্চিতই। কিন্তু তিনি যদি আর একটি ব্রত করেন, তাহলে কৃষ্ণের আরও ভালোবাসা পাবেন তিনি। নারদ জানালেন, এই ব্রতের নাম তুলাব্রত। কী করতে হবে এই ব্রতে? তুলাদণ্ডের একদিকে বসাতে হবে স্বামী কৃষ্ণকে। অন্যদিকে দিতে হবে ধনরত্ন। তুলাদণ্ডের কাঁটা যখন স্থির হবে, অর্থাৎ কৃষ্ণের ওজনের সমান ধনরত্ন যদি সত্যভামা দান করেন, তবে তিনি স্বামীর আরও ভালবাসা পাবেন।
আরও শুনুন: স্বর্গের সিংহাসন পেয়েও কেন পতন হয়েছিল রাজা নহুষের?
সত্যভামা ভাবলেন, এ তো তেমন বড় কিছু নয়। ধনরত্নের অভাব তাঁর নেই। তিনি তখন শ্রীকৃষ্ণকে ডাকলেন। বললেন, নারদ তাঁকে তুলাব্রত পালনের কথা বলেছেন। সে ব্রতের নিয়মও বলে দিলেন। শুনে শ্রীকৃষ্ণ হাসিমুখে তুলার একদিকে গিয়ে বসলেন। সত্যভামা, তখন তাঁর সঞ্চিত ধনরত্ন এনে চাপালেন তুলার অন্য পাল্লায়। কিন্তু কৃষ্ণের দিকেই হেলে রইল কাঁটা। সত্যভামা তখন নিজের গায়ের অলংকার খুলে চাপালেন তুলায়। তাতেও বদলাল না পরিস্থিতি। এবার নারদ জানতে চাইলেন, সে কী সত্যভামা! কৃষ্ণের ওজনের সমান ধনরত্ন দিতে পারলেন না? সে কথা শুনে লজ্জা পেলেন সত্যভামা। তাঁর চোখে এল জল। যা তিনি অতি সহজ ভেবেছিলেন, তাই যে ভারি কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও শুনুন: কেন নৃসিংহ অবতার ধারণ করেছিলেন ভগবান বিষ্ণু?
সত্যভামা তখন গেলেন শ্রীকৃষ্ণের আর-এক স্ত্রী রুক্মিণীর কাছে। রুক্মিণীর কৃষ্ণভক্তির কোনও তুলনা ছিল না। তিনি সত্যভামার এই সংকটের কথা শুনে বললেন, বেশ তো, আমি নাহয় আমার কাছে যা ধনরত্ন আছে তা দিয়ে দিচ্ছি। রুক্মিণীর দেওয়া ধনরত্ন যখন সত্যভামা চাপালেন, তখনও তুলাদণ্ড হেলে রইল শ্রীকৃষ্ণের দিকেই। কিছুতেই কৃষ্ণের সমপরিমাণ ধনরত্ন আর জোগাড় করতে পারলেন না সত্যভামা। বুঝলেন তিনি, তাঁর ভাবনায় কোথাও একটা গলদ ছিল। তাঁর দুচোখ ভরে এল জলে। আকুল হয়ে তিনি আবার গেলেন রুক্মিণীর কাছেই।
বাকি অংশ শুনে নিন।