খালি পেটে ধর্ম হয় না- বলেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। আর এদিকে বর্তমান ভারতে ধর্মের জন্য খালি পেটে থাকা যেন আর অবাক করা কোনও ঘটনা নয়। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশ সরকারের এক ফরমানে ফের উঠল সেই প্রসঙ্গ। ঠিক কী নিয়ে এই বিতর্ক? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
শ্রাবণ এলেই কানওয়ার যাত্রায় শামিল হন অসংখ্য ভক্তরা। প্রতি বছরই এই রীতি নিষ্ঠাভরে পালন করা হয়। এ বছরও তার ব্যতিক্রম কিছু নয়। তবে, এবার উত্তরপ্রদেশ সরকারের জারি করা এক নিয়ম নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
কানওয়ার যাত্রা পথে মাংস বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছ যোগী সরকারের পক্ষ থেকে। গত মাসের শেষেই নির্দেশিকা জারি করে জানানো হয়, যে পথে যাবেন যাত্রীরা সেই পথের দুধারে মাংস বিক্রি বন্ধ থাকবে। যতদিন যাত্রা চলবে, ততদিন জারি থাকবে এই নিয়ম। ভক্তদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও ভাবাবেগের কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয় সরকারি তরফে। এর মধ্যেই গাজিয়াবাদ পুলিশ হরিদ্বার থেকে প্রায় ১০০০ লিটার গঙ্গাজল এনে তা থানায় থানায় দিয়ে রেখেছে। যাতে কোনও কারণে রাস্তা অপবিত্র হলে তা শুদ্ধ করে নেওয়া যায়। এই পদক্ষেপে কানওয়ার যাত্রীদের যে সুবিধা হবে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে অন্য মানুষের জীবন-জীবিকা নিয়ে। এই নির্দেশিকার দরুন, যাত্রা চলাকালীন এই এক মাস দোকান বন্ধ রাখতে বাধ্য হবেন মাংস বিক্রেতারা। এমনকী ভক্তের পথ যাতে শুদ্ধ থাকে, সেই দায়ভার মাথায় নিয়ে বিরিয়ানি দোকানদাররাও ব্যবসা বন্ধ রাখতে বাধ্য হবেন। আর ঠিক এই নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন। কারোর ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত হোক, তা নিশ্চিতই কাম্য নয়। কিন্তু তার জন্য যদি অন্য কারও রুটি-রুজিতে টান পড়ে, তা-ও আবার সরকারি নির্দেশিকার খাতিরে, তাহলে অবশ্যই প্রশ্নচিহ্ন ফুটে ওঠে। এক্ষেত্রেও তা-ই বিতর্ক জমেছে। অনেকেরই মত। উপার্জন করা তো মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। তা সরকারি নির্দেশিকা জারি করে বন্ধ করা যায় কীভাবে? অন্যদিকে সরকার পক্ষের সাফাই যে, এই পদক্ষেপে দুই ধর্মের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা প্রায় ঘটবেই না। এলাকায় শান্তি বজায় থাকবে। রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার দায় নিশ্চিতই রাজ্যের। কিন্তু তা কি অন্যের উপার্জন বন্ধ রেখে হওয়া উচিত? সে প্রশ্নের অবকাশ কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।
আরও শুনুন: সংখ্যালঘুরা বেশি সুবিধা পেয়েছেন মোদির আমলেই! কোন তথ্যে এমন দাবি বিজেপি নেতার?
এই প্রসঙ্গে আরও একটি প্রশ্ন অবশ্য উঠছে। হিন্দু ধর্মের অনুষ্ঠানের জন্য মাংস বিক্রি বন্ধ যেমন হয়েছে, তা কি ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য? সেক্ষেত্রে রমজান মাস জুড়ে মদ বিক্রি নিষিদ্ধ হওয়া উচিত ছিল। যা সাধারণত হয় না। এবং তার জন্য সংখ্যালঘুদের ধর্মপালনেও কোনও বাধা দেখা যায় না। ফলত যখন কোনও কোনও সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানের জন্য বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা করতে হয়, তখন প্রশ্ন ওঠে বইকি! কানওয়ার যাত্রায় যোগী সরকারের নির্দেশিকা নিয়ে সেই প্রশ্নই উঠছে। সকল ধর্মের প্রতি যে সমান ভাব বজায় রাখার কথা, এই ধরনের নির্দেশিকা দেশের ধর্মভাবের সেই মূল কথাটিকে গুরুত্ব দিচ্ছে? উত্তরপ্রদেশ সরকারের প্রতি এই প্রশ্নই ছুড়ে দিয়েছে ওয়াকিবহাল মহল।