ধর্মের দোহাই দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হল পাকিস্তানের প্রথম ব্রেস্টমিল্ক ব্যাঙ্ক। মৌলবিদের দাবি, স্তনদুগ্ধ ব্যাঙ্কে জমানো ইসলাম বিরোধী! যদিও পাক চিকিৎসকদের একাংশ নতুন করে ব্রেস্টমিল্ক ব্যাঙ্ক খোলার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
মাতৃস্তন্যের কোনও বিকল্প নেই। অথচ যাঁরা নিরুপায় মা, সন্তানের পুষ্টির জন্য তাঁদের ভরসা করতে হয় বাইরের বেবি ফুডের উপরেই। কিন্তু তাতেও সমস্যা মেটে না। অনেকসময় দেখা যায় স্তনদুগ্ধ ছাড়া আর কিছুতে পর্যাপ্ত পুষ্টি পাচ্ছে না খুদে। সেক্ষেত্রে সহায় হতে পারে ব্রিস্টমিল্ক ব্যাঙ্ক।
:আরও শুনুন:
তুঙ্গে মাতৃদুগ্ধের চাহিদা, প্রায় ১১৮ লিটার স্তনদুগ্ধ বিক্রি করে নজির মহিলার
বিজ্ঞানের কল্যাণে আজকাল এমন অনেক কিছুই করা যায়, যা একসময় ভাবাই যেত না। স্তনদুগ্ধ ব্যাঙ্কে জমিয়ে রাখাও বিজ্ঞানের আরেক দান বলা যায়। ব্লাডব্যাঙ্কে রক্ত জমিয়ে রাখার মতোই কেউ চাইলে বাড়তি স্তনদুগ্ধ ব্যাঙ্কে জমিয়ে রাখতে পারেন। সেখান থেকে যার প্রয়োজন সে সংগ্রহ করতে পারে। পশ্চিমের দেশগুলিতে এই ব্যাঙ্কের চল রয়েছে ভালমতো। এমনকি ভারত সহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও ব্রেস্টমিল্ক ব্যাঙ্ক রয়েছে। ব্যতিক্রম পাকিস্তান। এমনিতেই সে দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়মের কড়াকড়ি রয়েছে। বেশিরভাগই ধর্মের দোহাই দিয়ে তৈরি। ঠিক সেই কারণেই পাকিস্তানে চালু হয়নি কোনও ব্রেস্টমিল্ক ব্যাঙ্ক। এদিকে এই ব্যাঙ্কের যে প্রয়োজন কতটা তা ভালোমতো বুঝতেন পাকিস্তানের চিকিৎসকরা। তাই অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে করাচির এক হাসপাতাল পাকিস্তানের প্রথম ব্রেস্টমিল্ক ব্যাঙ্ক খোলার উদ্যোগ নেয়। সেইসময় স্থানীয় ইসলাম সংগঠনের অনুমতিও নেওয়া হয় হাসপাতালের তরফে। সবুজ সংকেত মিলতেই শুরু হয় কাজ।
:আরও শুনুন:
কেন প্রকাশ্যে স্তন দেখানো হল! খোদ ব্রিটেনে কোপ অন্তর্বাসের বিজ্ঞাপনে
কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। ব্রেস্টমিল্ক ব্যাঙ্ক খোলার খবর পেতে না পেতেই তা ফতোয়া জারি করলেন পাকিস্তানের একদল মৌলবি। তাঁদের দাবি, স্তনদুগ্ধ ব্যাঙ্কে জমানো ইসলাম বিরোধী। তাই অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে ওই ব্যাঙ্ক। একপ্রকার বাধ্য হয়েই ব্যাঙ্ক বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় করাচির হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে এই পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন পাক চিকিৎসকদের একাংশ। মাতৃদুগ্ধের অভাবে কত শিশু প্রাণ হারাচ্ছে সেই পরিসংখ্যান তুলে ধরেন তাঁরা। তাতে নড়েচড়ে বসে প্রশাসনও। পাকিস্তানের জাতীয় ইসলাম কাউন্সিলের তরফে জানতে চাওয়া হয়, ঠিক কোথায় সমস্যা? আসলে, ইসলাম ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী, কোন মহিলার স্তনদুগ্ধ সদ্যজাতকে পান করানো হচ্ছে তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি একই মহিলার বুকের দুধ ছেলে ও মেয়ে দুজনেই পান করে, তাহলে ভবিষ্যতে তারা বিবাহ বন্ধনে জুড়তে পারবে না। ব্যাঙ্কে জমানো দুধ পান করলে এই ঘটনা ঘটতেই পারে। সেই আশঙ্কা থেকেই কি ব্রেস্টমিল্ক ব্যাঙ্ক বন্ধের ফতোয়া? প্রশ্ন তুলেছে কাউন্সিল। কারণ এমনটা হলে, বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্তনদুগ্ধ যিনি দান করছেন তার পরিচয় সদ্যজাতের পরিবারকে জানালেই মিটতে পারে সমস্যা। ইন্তু ঠিক এই সমস্যার কারণেই যে ফতোয়া জারি হয়েছে, তা স্পষ্টভাবে জানাননি মৌলবিরা। তাই এই মুহূর্তে পাকিস্তানের ব্রেস্টমিল্ক ব্যাঙ্ক পুনরায় খোলার সম্ভাবনাও প্রায় ক্ষীণ।