প্রথা অনুযায়ী মৃতদেহ চিল- শকুনকে অর্পণ করে পারসিরা। রতন টাটার ক্ষেত্রে সে নিয়ম মানা হয়নি। পারসি হলেও তাঁর মৃতদেহ পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাহ করা হয়েছে। কিন্তু কেন পারসিদের চিরাচরিত প্রথা মানা হল না শিল্পপতির ক্ষেত্রে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ভারতীয় শিল্প জগতে মহীরুহ পতন। ৮৬ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান রতন টাটা। তাঁর প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন সর্বস্তরের শীর্ষ স্থানীয়রা। এমনকি মহারাষ্ট্রে একদিনের ছুটিও ঘোষণা হয়েছে রতন টাটার স্মরণে। কিন্তু শিল্পপতি শেষকৃত্য কীভাবে সম্পন্ন হবে, সেই নিয়ে প্রশ্ন জেগেছে অনেকের মনেই।
তার কারণ শিল্পপতি পারসি সম্প্রদায়ের অংশ। নিয়ম অনুযায়ী তাঁর শেষকৃত্য পারসি মতেই হওয়ার কথা। আর সেখানেই যত গোল। সাধারণত মৃতদেহ সৎকারের ক্ষেত্রে দুটি নিয়ম মানা হয়, দাহ করা বা কবর দেওয়া। হিন্দু সমাজে মৃতদেহ আগুনে পুড়িয়ে পঞ্চভূতে বিলীন করা হয়। কেউ কেউ দাহকার্যের পর অস্থিভস্ম সমাধি হিসেবে রেখে দেন। আবার মুসলিম বা খ্রিশ্চানরা মৃতদেহ মাটির নীচে কবর দেন। তারপর বিশেষ স্মৃতি সৌধ তৈরি করেন অনেকে। তবে অন্যান্য সম্প্রদায়ে শেষকৃত্যের নিয়ম বেশ খানিকটা আলাদা। পারসিদের কথাই ধরা যাক, এঁরা মৃতদেহ দাহ করে না বা কবর দেয় না। বরং নিথর দেহটি রেখে আসে উঁচু পাহাড়ের কোনও চাতালে। এমন কোনও জায়গা যেখানে চিল-শকুনের নিত্য আনাগোনা। মাংসাশী পাখিদের উদ্দেশেই মৃতদেহ অর্পণ করা হয়। পারসি সমাজে এই প্রথা ‘দোখমেনাশিনি’ হিসেবে পরিচিত। তবে এই মৃতদেহ রেখে আসার কাজটি অত্যন্ত নিষ্ঠাভরে পালন করে পারসিরা। এমনকি রাখার আগে দেহটিকে পরিস্কার করা হয়। আরও অনেক নিয়মের মধ্যে দিয়ে সম্পন্ন হয় পারসি সমাজের শেষকৃত্য।
তবে এই প্রথা রতন টাটার শেষকৃত্যে মানা হয়নি। কারণ, বর্তমানে পারসি সমাজে এই নিয়ম একপ্রকার অবলুপ্ত। আসলে, শহরের দিকে এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া কঠিন যেখানে চিল-শকুনের নিত্য আনাগোনা। তারওপর এই নিয়মের সঙ্গে পারসিদের অনেকেই সহমত হতে পারেন না। ধর্মবিশ্বাসের বিরোধিতা না করলেও, অনেকেই নিজেদের মতো করে নিয়ম বদলে নিয়েছেন। বিশেষ করে যারা শহরের মানুষ, তাঁরা তো বটেই। তাই শিল্পপতি রতন টাটা শেষকৃত্য হয়েছে সাধারণ প্রচলিত পদ্ধতিতেই। মহারাষ্ট্রের ওরলিতে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। শেষবারের জন্য শিল্পপতির দেখা পেতে অনেকেই পৌঁছে গিয়েছিলেন শ্মশানে। তাতে রাজনীতি থেকে বিনোদন এমনকি ক্রিড়াজগতেরও অনেকে ছিলেন। রতন টাটার মৃত্য শিল্পজগতের অপূরণীয় ক্ষতি, মনে করছেন প্রায় সকলেই। সেইসঙ্গে চর্চা শুরু হয়েছে এত বড় সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী কে হবেন। তবে টাটা পরিবার সেই নিয়ে কিছু ভাবতে বা মন্তব্য করতে চায়নি। পূর্ণ মর্যাদায় রতন টাটার শেষকৃত্য হওয়ার পরই এ বিষয়ে সঠিক তথ্য সামনে আসবে।