শিশুদের কাছে মাতৃদুগ্ধ অমৃতসমান। এ কেবল কথার কথা বা চিরকালীন বিশ্বাস নয়। পুষ্টি থেকে রোগ প্রতিরোধের যাবতীয় উপাদান শিশু পায় মাতৃদুগ্ধেই। এ কথা বিজ্ঞানভিত্তিক ভাবে প্রমাণিত সত্য। তবে স্রেফ শিশুদের জন্য নয়। মাতৃদুগ্ধ বড়দের জন্যও উপকারী। সাম্প্রতিক গবেষণা এমনটাও জানাচ্ছে। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
মাতৃদুগ্ধ। শিশুর জন্য এর বিকল্প নেই। কিন্তু বড়রাও যদি এ জিনিস পেতে চান? এমনটাই সাম্প্রতিক ট্রেন্ড। অর্থাৎ বড়দের মধ্যেও স্তন্যদুগ্ধের চাহিদা বাড়ছে রীতিমতো। নিয়মিত স্তন্যপান করতে চাইছেন কেউ কেউ। মোটা টাকা দিয়ে কিনতেও আপত্তি নেই। তবু বড়বেলাতে স্তন্যপান করতে মরীয়া অনেকে। কিন্তু এমনটা কি শরীরের জন্য সঠিক?
বিজ্ঞান বলছে ক্ষতি নেই, বরং উপকার রয়েছে ঢের। এর থেকে একাধিক রোগের ওষুধ হতে পারে, দাবি বিজ্ঞানীদের। তাই নতুন করে অনেকের মনে স্তন্যদুগ্ধ সম্পর্কে আগ্রহ জন্মেছে। আবার কেউ কেউ বিষয়টাকে বাঁকা নজরেও দেখছেন। আসলে এই বুকের দুধ ঘিরে ট্যাবুরও অভাব নেই সমাজের। লোকসমাজে সন্তানকে দুধ খাওয়াতে গিয়ে কটাক্ষের শিকার হতে হয় অনেক মাকেই। কেউ কেউ মনে করেন, এমন আচরণ আসলে শালীনতার বেড়া টপকে যাওয়া। সেখানে শিশুর বদলে স্তন্যপান করছে বড়রা! স্বাভাবিক ভাবেই বিষয়টা সহজে মেনে নেননি অনেকে।
বেশিদিনের ঘটনা নয়। সোশাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় এক ইনফ্লুয়েন্সর লিখলেন, তিনি নিজেই নিজের স্তন্যদুগ্ধ পান করেছেন। দাবি, এটাই জ্বরের পথ্য। কাজ হয় মারাত্মক। শুধু তাই নয়, এর আগে আরও অনেককে এই ওষুধ হিসেবে স্তন্যদুগ্ধ দিয়েছেন তিনি। তাতে কারও জ্বর সেরেছে কারও অন্য কোনও সমস্যা। নেটদুনিয়া অবশ্যই বিষয়টাকে সহজ ভাবে মেনে নেয়নি। বিতর্ক হয়েছে। সমালোচনাও চলেছে। ঠিক যেমনটা হয়েছিল স্তন্যদুগ্ধ দিয়ে গয়না তৈরির সময়। আসলে, অতিরিক্ত মাতৃদুগ্ধ কোনওভাবেই যাতে নষ্ট না হয়, সেই উদ্দেশেই এমন ভাবনা। তাতে প্রথমে সায় দেননি কেউই। এবার চর্চায় বড়দের স্তন্যদুগ্ধ পান। নেহাতই শখে নয় মোটেও। একে ওষুধ হিসেবেই দেখছেন অনেকে। তাই বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার পথ্য হিসেবে স্তন্যদুগ্ধ পানের পরামর্শ দিচ্ছেন। এ বিষয়ে ভুল দেখছেন না বিজ্ঞানীরাও। বরং ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, স্তন্যদুগ্ধকে ওষুধ হিসেবে মান্যতা দিয়েছিলেন ১৫ শতকের মানুষরাও। সেকালের চিকিৎসকরাও জ্বরের পথ্য হিসেবে স্তন্যদুগ্ধ পানের কথা বলতেন। তা শুধু শিশুদের নয়, বড়দেরও। চোখের সমস্যাতেও একে অব্যর্থ ওষুধ হিসেবে উল্লেখ করেছেন কেউ কেউ। পরামর্শ মেনে ব্যবহারও করেছেন অনেকে। উপকৃত হয়েছেন বলেই দাবি করেন তাঁরা। এত কিছুর পরেও বড়দের মাতৃদুগ্ধ পান ট্যাবু বললে ভুল হয় না। সমাজের একটা বড় অংশ বিষয়টাকে সহজ ভাবে মেনে নেন না। তাই নতুন করে চর্চা। তাতেও একই কথা উঠে এসেছে। শিশুদের মতো, বড়দের জন্যও উপকারী স্তন্যদুগ্ধ। এই আবহে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, বড়রা স্তন্যদুগ্ধ পান করলে শিশুদের সমস্যা হবে না তো?
বিশেষজ্ঞরা এই প্রশ্নকে অবান্তর মনে করছেন। কারণ, এক্ষেত্রে স্রেফ অতিরিক্ত স্তন্যদুগ্ধের কথাই বলা হচ্ছে। সদ্যোজাত সন্তান বহু ক্ষেত্রেই মায়ের বুকের দুধের সবটা খেয়ে উঠতে পারে না। সেক্ষেত্রে বুকের দুধের বড় একটা অংশই নষ্ট হয়। সেটাই ঠিকমতো সংরক্ষণের কথা বলা হচ্ছে। অনেক দেশেই এর জন্য ব্যাঙ্ক রয়েছে। সেখান থেকে স্তন্যদুগ্ধ সংগ্রহ করতে পারেন যে কেউ। তাতে সদ্যজাতের ক্ষতির প্রশ্নই ওঠে না। এক্ষেত্রে সুবিধা স্রেফ বড়দের নয়, যেসব মায়েদের শরীরে নানা সমস্যার কারণে দুধ তৈরি হয় না, তাঁদের সন্তানও এখান থেকে দুধ পেতে পারে। তাই আখেরে এই নিয়ে নতুন করে চর্চা ব্রেস্ট মিল্ক ব্যাঙ্কের প্রয়োজনীয়তার কথাও মনে করিয়েছে। পাশাপাশি সকলের মনে এই সংক্রান্ত ট্যাবু কেটে যাক এমনটাও চাইছেন বিশেষজ্ঞরা। বানিজ্যিক ভাবে ওষুধ তৈরিতে মাতৃদুগ্ধের ব্যবহার শুরু না হলেও, একসময় তা হতেই পারে, মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। মোটের উপর বিষয়টি নিয়ে আরও চর্চা এবং গবেষণা হোক চাইছেন সকলেই। বিশ্বের মোটামুটি সব দেশেই শিশুর প্রধান খাদ্য হিসেবে মাতৃদুগ্ধকে রাখা হয়। সেক্ষেত্রে এ জিনিসের যে আরও অনেক গুন থাকবে তা বলাই বাহুল্য। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, সত্যিই তাই। স্তন্যদুগ্ধ বড়দেরও অনেক উপকার করছে।