আমাদের দেশে নাগপূজার চল বেশ প্রাচীন। বাংলায় নাগদেবী হিসেবে মনসাপুজোর চল থাকলেও, দেশের অন্যান্য প্রান্তে নাগরাজের পুজোর প্রচলন রয়েছে। এমনই এক নাগরাজের মন্দির রয়েছে উজ্জ্বয়িনির মহাকাল মন্দিরে। কী বিশেষত্ব সেই মন্দিরের? আসুন শুনে নিই।
শ্রী বিষ্ণু শয়নরত অবস্থায় রয়েছেন নাগাসনে। কিংবা বালক কৃষ্ণ কালিয় নাগের মাথায় নৃত্য করছেন। নারায়ণের এমন ছবি বা মূর্তি যথেষ্ট প্রচলিত। কিন্তু মহেশ্বর নাগাসনে বিরাজমান এমন ছবি বা মূর্তি দেখছেন? সকলের কাছে মহেশ্বরের সঙ্গে নাগের যোগ বলতে, দেবাদিদেবের গলায় থাকা সর্পমালা। কিন্তু দেশে এমনও এক মন্দির রয়েছে যেখানে বিষ্ণু নন, নাগাসনে বিরাজ করছেন স্বয়ং মহেশ্বর।
আরও শুনুন: ‘কালো মেয়ে’র গায়ের রং সবুজ! কী গল্প লুকিয়ে এই বিগ্রহের নেপথ্যে?
কথা বলছি উজ্জ্বয়িনির মহাকাল মন্দির চত্বরে থাকা নাগচন্দ্রেশ্বর সম্পর্কে। বছরে মাত্র একদিন এই মন্দিরের দ্বার সকলের জন্য খোলা হয়। আর তখনই সামনে আসে মহেশ্বরের এক বিরল মূর্তি। একাধিক ফণা যুক্ত এক নাগ, যাঁর মধ্যে বিরাজ করছেন মহেশ্বর। সঙ্গে রয়েছেন দেবী পার্বতীও। মূর্তিতে আরও কিছু নাগের দেখা মেলে। বলাই বাহুল্য, এই মূর্তি মহেশ্বরের সাধারণ বা প্রচলিত মূর্তিগুলির তুলনায় একেবারেই আলাদা। লাল পাথরের তৈরি মূর্তিটির স্থাপত্য শৈলিও অসাধারণ। মনে করা হয়, কয়েক হাজার বছর আগে এই মূর্তি তৈরি হয়েছিল। পরবর্তীকালে মহাকালের মন্দিরে এই মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়। কেবলমাত্র নাগপঞ্চমীর দিনেই এই মন্দিরের দ্বার সাধারণের জন্য খোলা হয়। সেসময় ভক্তদের ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। মন্দিরটি খোলা হয় ঠিক রাত ১২ টায়। তারপর সারারাত মন্দিরে পুজো দেওয়ার সুযোগ থাকে। মূলত দুধ দিয়েই মূর্তিটিকে স্নান করানোর নিয়ম রয়েছে। স্থানীয় বিশ্বাস, এইদিন নাগচন্দ্রেশ্বরের দর্শন করলেই কেটে যায় কালসর্প দোষ। থাকে না সাপের প্রতি ভয়ও। এমনকি এমনটাও মনে করা হয়, ভক্তিভরে এই মন্দিরে পুজো দিলে সাপের কামড়ে মৃত্যু হওয়ার কোনও সম্ভাবনা থাকে না। সেইসঙ্গে মহাদেবের আশীর্বাদে যাবতীয় বাধা বিপত্তি কেটে যায়।
আরও শুনুন: নাড়ির স্পন্দন পেলে তবেই চলে, বিগ্রহের হাতেও দিব্যি সক্রিয় ‘অলৌকিক’ ঘড়ি
তবে মন্দিরের দরজা বছরে একদিন খোলার নেপথ্যে আরও এক জনশ্রুতি রয়েছে। মনে করা হয়, এই মন্দিরে বছরের অন্যান্য দিন স্বয়ং নাগরাজ বিরাজ করেন। তাই সেইসময় এই মন্দিরে পা রাখার উপায় নেই। তবে নাগপঞ্চমীর যে কেউ এই মন্দিরে যেতে পারেন। বহু বছর ধরে এই রীতি পালিত হয়ে আসছে। এমনিতেই দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম মহাকাল মন্দিরে সারাবছর ভক্তের ভিড় লেগেই থাকে। তবে বছরের এই বিশেষ সময় সেই ভিড় হয়ে যায় দ্বিগুণ। চলতি বছরেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রশাসনের তরফেও ভিড় সামলাতে নেওয়া হয়েছিল বিশেষ ব্যবস্থা। এইসময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই মন্দিরে আসেন সাধু সন্তরাও। সব মিলিয়ে মহা সমারোহে নাগচন্দ্রেশ্বর মন্দিরে পালিত হয়ে আসছে নাগ পঞ্চমীর বিশেষ উৎসব।