মেলা মানে শুধুই নাগরদোলা, রংবেরঙের বেলুন কিংবা হরেকরকম খাবারদাবার? উঁহু, এ মেলা ঠিক তেমন মেলা নয়। এখানে আর যাই আকর্ষণ থাকুক, সেসবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মেলায় জমে হাতাহাতি, চুলোচুলি, এমনকি লাঠালাঠির আসরও। কোথায় হয় এমন আশ্চর্য মেলা? আসুন শুনে নিই।
মেলার মধ্যে বসেছে হাজার পশরা। খাবারদাবার, খেলনা, রকমারি জিনিসপত্র, কী নেই তাতে! বসেছে গান-বাজনার আসরও। এরই মধ্যে হঠাৎ দেখলেন একদল লোক তেড়ে গেল অন্য আরেক দলের দিকে। আর নাগাল পাওয়া মাত্রই সটান বসিয়ে দিল কিল-চড়-ঘুসি। দমছে না অন্য পক্ষ। তারাও তৈরি প্রতিপক্ষকে আঘাত করতে। কী ভাবছেন? মেলার মতো জায়গায় এ আবার কোন বিড়ম্বনা? কিন্তু এমন বিড়ম্বনাই হল মেলার আকর্ষণ, যা দেখতে দলে দলে ভিড় জমান দর্শকরা।
আরও শুনুন: কুম্ভমেলায় অ-হিন্দুরা ব্যবসা করবে কেন? প্রশ্ন হিন্দু সংগঠনের, সায় সাধুদের
এই বিশেষ মেলায় দর্শকরা শুধুই মেলার রকমারি জিনিস কিংবা খাবার-দাবারের খোঁজে আসেন না। তাঁরা আসেন মেলার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয়টির লোভে। আর সেই বিষয়টি হল তুমুল মারামারি। প্রতি বছর বড়দিনের সময় এই মেলাটি হয়। প্রতিযোগীরা সেজেগুজে, বাহারি পোশাক পরে এই খেলায় অংশ নেন। মেলাটি বড়দিনের সকালে কুচকাওয়াজের শব্দে শুরু হয়। কিন্তু এই মেলার মূল আকর্ষণ, অর্থাৎ লড়াই, বিকেলের পর থেকে শুরু হয় এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতে থাকে। তবে মারামারিতে যাতে কেউ জখম না হন, তাতে থাকে কঠোর নজরদারি। নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য প্রতিটি ম্যাচে থাকেন একজন রেফারি। যোদ্ধারা একজোড়া রিংয়ে প্রবেশ করে এবং নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে লড়াই করে।
ভাবছেন, এ আবার কোন আজগুবি গল্প? উঁহু, বাস্তবেই এমন মেলা বসে পেরুর কুস্কোর কাছে চুম্বিভিলকাস প্রদেশে। পেরুর চুম্বিভিলকাসে শহরে কেন্দ্রে আন্দিয়ান সম্প্রদায়ের মধ্যে এই উৎসবটি হয়। এই মেলার নাম ‘তাকানাকুয়ই’। বিদঘুটে শুনতে লাগলেও এই শব্দটির একটি বিশেষ অর্থ আছে। অর্থটি হল ‘একে অপরকে আঘাত করা’। এতদূর শুনে আপনার মনে হয়তো ‘ডবলু ডবলু ই’-এর স্মৃতি ঘুরছে। ঠিক ধরেছেন। এও সেই প্রদেশের ‘ডবলু ডবলু ই’। তবে এমনি এমনিই কিন্তু এমন খেলার প্রচলন সেখানে হয়নি। প্রাচীনকালে পেরুর কুস্কো, আপুরিম্যাক এবং লিমার মতো অঞ্চলগুলির সঙ্গে মূল শহরের বাসিন্দাদের এক করে তুলতেই এমন খেলার আমদানি ঘটে। আর ঐতিহ্য রক্ষার তাগিদে আজও হয়ে চলেছে এই উৎসব। আর পেরুর লড়াই খ্যাপারা এখনও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন এই মেলার জন্য।