‘আশিতে আসিও না’ ছবির সেই আশ্চর্য পুকুরের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। যেখানে এক ডুব দিলেই বয়স কমে যেত এক নিমেষে। আর সেই টানেই দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসতেন বৃদ্ধবৃদ্ধারা যৌবন ফেরানোর আকাঙ্ক্ষা বুকে নিয়ে। না, এ জলাশয় বয়স কমাতে পারে না বটে, তবে ত্বক ও চুলের সমস্যা মেটাতে জুড়ি নেই তার। তবে এই জলাশয় কিন্তু আদ্যোপান্ত প্রাকৃতিক। কোথায় রয়েছে এই প্রাকৃতিক স্পা? শুনে নিন।
স্যালোঁ বা পার্লারে গিয়ে প্রায়শই স্পা-এর আমেজে মজেন অনেকে। তাতে গ্যাঁটের কড়িও খসে বিস্তর। তবে এই স্পা-এর গুণও কম নয়। চটজলদি তরতাজা ত্বক বা চুল পেতে এই স্পা-এর বিকল্প নেই। তার উপর সারাদিনের ক্লান্তি এক নিমেষে হাওয়া। কিন্তু এই সব কিছুই যদি পাওয়া যেত প্রকৃতির কাছেই। কেমন হত ব্যাপারখানা?
কোনও স্যালোঁ বা পার্লারে নয়। আইসল্যান্ডেই রয়েছে এমন একখানা প্রাকৃতিক স্পা। যৌবন ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা না থাকলেও সেই সুবিশাল জলাশয়ের রয়েছে বেশ কিছু অবিশ্বাস্য ক্ষমতা। সেই জলে একবার গা ভেজাতে পারলেই নাকি আপনার চুল বা ত্বকের সমস্যা গায়েব হয়ে যেতে পারে এক মুহূর্তে। এমনই আশ্চর্য সেই জলাশয়।
আরও শুনুন: পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম বসতি! গোটা দ্বীপে থাকে একটিই মাত্র পরিবার
আইল্যান্ডের গ্রিন্ডাভিক শহরের একটি স্বার্টসেঙ্গি জিওথার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে উপচে যাওয়া জলেই তৈরি হয়েছে ওই জলাশয়ের। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। ১৯৭৬ সালে ওই পাওয়ার প্ল্যান্টটি তৈরি হয় ওই এলাকায়। মখমলে নীল জল দেখে স্থানীয়রা ওই জলাশয়ের নাম দেন ব্লু লগুন পুল। এই নামে একটি শরবতের বেশ নামডাক রয়েছে। তো এই জলে প্রায়শই স্নান করতে নেমে পড়তেন আশপাশের মানুষজন। তাঁরা দেখেন, ওই জলাশয়ের জলে যেন আশ্চর্য ক্ষমতা রয়েছে। ত্বক বা চুলের সমস্যা, এমনকি সেরোসিসের মতো রোগও বিলকুল ঠিক করে দিতে পারে ওই জলাশয়ের জল। ব্যাপারটা জানাজানি হতে দেরি হয় না। অচিরেই ভিড় বাড়তে থাকে ব্লু লগুন পুলে। স্থানীয়রা তো বটেই, দূরদূরান্ত থেকে পর্যটকেরাও আসতে শুরু করলেন এই আশ্চর্য জলাশয়ের মহিমা দেখতে।
আরও শুনুন: পাঁচ হাজার শীত-বসন্ত দেখেছে এ গাছ! খোঁজ মিলল পৃথিবীর প্রাচীনতম বৃক্ষের
দেখতে দেখতেই আইসল্যান্ডের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠল এই ব্লু লগুন পুল। সৌন্দর্যের দিক দিয়েও কোনও অংশে কম যায় না এই জলাশয়। চারদিক পাহাড়ে ঘেরা সুনীল জল। ছোট্ট কাঠের সেতু পার থেকে সোজা চলে এসেছে জলাশয়ের মধ্যিখানে। তৈরি করেছে গোলাকার এক প্ল্যাটফর্মের। সব মিলিয়ে ক্লান্তি দূর করার আদর্শ জায়গা যাকে বলা যায় আর কি।
বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, যে অংশে ওই জলাশয়টি তৈরি হয়েছে, সেখানে এককালে ছিল লাভাক্ষেত্র। ব্লু লগুন পুলের উষ্ণ জলে নাকি প্রচুর পরিমাণে সালফার ও সিলিকা মেলে। ওই জলাশয়ের জলের তাপমাত্রা ঘোরে ৩৭ ডিগ্রি থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে। এমনকী শীতকালেও এই তাপমাত্রার কোনও হেরফের হয়না। ফলে চাইলেই পর্যটকেরা স্পা-এর আরাম উপভোগ করতে পারেন শীতকালেও।
প্রকৃতির মধ্যে বসে এক্কেবারে প্রাকৃতিক স্পা-এর স্বাদ নিতে চাইলে জীবনে অন্তত একবার ঘুরে আসতেই হবে আইল্যান্ডের এই ব্লু লগুন পুল থেকে।