শাহরুখ খান, আলিয়া ভট, সাক্ষী মালিক – কে ছিলেন না বিগত বছরগুলির তালিকাতে! অথচ এই বছর সমগ্র মহাদেশের একজনকেও সে তালিকার যোগ্য বলে মনে করলেন না আমেরিকান সংবাদভিত্তিক পত্রিকা ‘টাইম’!
বিশ্বের সবথেকে প্রভাবশালী একশোজন ব্যক্তির নামের তালিকা প্রকাশিত হল, অথচ তাতে স্থান পেলেন না একজনও ভারতীয়! এমনটা কি রীতিমত আশ্চর্যের বিষয় নয়? খেলাধুলা, রাজনীতি, বিনোদন জগত- সবক্ষেত্রেই শ্রেষ্ঠত্বে চিহ্ন রেখে যান ভারতীয়রা। মেধা-বুদ্ধি-দক্ষতায় ভারতীয়রা বরাবরই বিশ্ববাসীর মন জয় করেছে। বিশ্বের কলামন্দির সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁদের মননে। গৌরবময় সেই ইতিহাস। এ বছর তা কি এমন ব্যতিক্রম হল যে, বিশ্বের অন্যতম সেরা পত্রিকায় সেরার সেরা একশোজনের মধ্যে এক জন ভারতীয় থাকলেন না! বিষয়টি অবাক করেছে অনেককেই।
‘টাইম’ পত্রিকার এই তালিকার দিকে নজর থাকে গোটা দুনিয়ারই। একটি বছরে বিশ্বের মানচিত্রে কোন দেশ, কোন দেশের ব্যক্তিত্ব স্বীকৃতি পেলেন, তা রীতিমতো আলোচনার বিষয়। কেননা এই তালিকায় জায়গা পাওয়াই অন্যতম এক স্বীকৃতি। বিজ্ঞান, খেলাধূলা, বিনোদন, রাজনীতি ও বাণিজ্য- এরকম নানা ক্ষেত্রে যাঁরা কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন তাঁরাই এই তালিকায় জায়গা করে নেন। ফলত সামগ্রিক বিশ্বের মননচর্চার ছবিটিই এখানে উঠে আসে। সেখানে ভারতের না-থাকা, একেবারেই কারোর জায়গা না-হওয়া বিস্ময়করই বটে।
এর আগে অবশ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতোই ভারতের পাকাপাকি জায়গা ছিল এই তালিকায়। প্রতি বছর একাধিক ভারতীয় প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম উজ্জ্বল হয়ে ধরা দিয়েছে এই তালিকায়। যেমন, ২০২৪ সালে তালিকা আলো করে ছিলেন বলিউড অভিনেত্রী আলিয়া ভাট ও অলিম্পিক ফেরত কুস্তিগীর সাক্ষী মালিক। ২০২৩ সালে খোদ কিং খান-কে ‘আইকন’ তকমায় ভূষিত করেছিল পত্রিকাটি। তাহলে এই বছরে কেন কোনও ভারতীয়কেই অন্তর্ভুক্তির যোগ্য মনে করল না ‘টাইম’, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য, এবং সে-প্রশ্ন উঠছেও।
নির্বাচিত ১০০জনের মধ্যে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, টেসলা সংস্থার মালিক ইলন মাস্ক। এ ছাড়াও গায়ক এড শিরান, অভিনেত্রী ডেমি মুরে, স্কারলেট জোহানসন, ক্রিস্টেন উইগ, র্যাপ সঙ্গীতশিল্পী স্নুপ ডগ, টেনিস তারকা সেরেনা উইলিয়ামস্ প্রমুখ আছেন তালিকায়। প্রকাশের পর অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন তালিকাভুক্ত তারকা ব্লেক লাইভলিকে নিয়ে, যিনি মাত্র কয়েক মাস আগেই বিবাদে জড়িয়েছিলেন তাঁর এক সহ-অভিনেতার সঙ্গে। অনেকেরই বক্তব্য, লাইভলির ভাঁড়ারে এমন কোনও উল্লেখযোগ্য সিনেমা নেই যে তিনি এখানে জায়গা পেতে পারেন। ফলত প্রশ্ন উঠছে যে, ব্যক্তিত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে ঠিক কোন বিষয়গুলোকে বিচার্য বলে গণ্য করছে পত্রিকা।
তবে তালিকাটিতে অল্প চোখ বোলালেই দেখতে পাওয়া যায় যে ‘লিডারস্’ বিভাগটিতে রয়েছে ভারতীয় বংশোদ্ভূত রেশমা কেয়াররামানির নাম। মাত্র ১১ বছর বয়সে রেশমা তাঁর পরিবারের সঙ্গে ভারত ছেড়ে পাড়ি দিয়েছিলেন সুদূর মার্কিন মুলুকে। আমেরিকার একটি বড় বায়োটেকনোলজি কোম্পানির প্রথম মহিলা সিইও তিনি। তাঁর এই কৃতিত্ব জায়গা পেয়েছে টাইম ম্যাগাজিনে। তবে, শৈশবেই ভারত ত্যাগ করেছিলেন বা তাঁর কর্মক্ষেত্রটি সাধারণ মানুষের কাছে সেভাবে পরিচিত নয়, বলে বোধহয় সেভাবে তাঁর কথা আলোচিত হচ্ছে না।
তবে, এই একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ছাড়া আর কারও নাম নেই এবারের তালিকায়। আর তা অস্বস্তিকর বইকি! তাহলে কি বুঝতে হবে, টাইম-এর বিচারে ভারতবাসীরা এবার তেমন বলার মতো কিছুই করেননি। নাকি নেপথ্যে থেকে গেল অন্য কোনও রাজনীতি! অর্থনীতি থেকে অন্য দিকে যখন ভারত ক্রমশ উন্নতি করছে এবং বিশ্বের মানচিত্রে নিজের পোক্ত জায়গা করে নিচ্ছে, তখন এই ভারতীয়দের অনুল্লেখ আসল কারণ কী, তাই-ই আসলে ঘুরপাক খাচ্ছে অনেকের মনে। স্বীকৃতি-অস্বীকৃতির নিজস্ব রাজনীতি আছে। তা যে কোনও পরিসরের জন্যই সত্য। সেই রাজনীতিই কি এবার ব্রাত্য করে রাখল ভারতীয়দের! প্রশ্ন অমূলক নয়। তবে দেশবাসীর আশা, নিজেদের সাফল্যেই এই খেলা একদিন ঘুরিয়ে দিতে পারবে ভারতবাসীই।