বর্ষাকাল মানেই ইলিশের মরশুম। যে মাছের নাম শুনলেই বাঙালির রসনায় জল আসে। মহারাজা থেকে আম আদমি, কে না জড়িয়েছেন ইলিশের জালে! শোনা যাক, মাছের রাজার গল্প!
১৯০২ সালের ৪ঠা জুলাই। শেষবারের মতো মধ্যাহ্নভোজন করতে বসেছেন স্বামী বিবেকানন্দ। সে দিনই মঠে কেনা হয়েছিল সে বছরের প্রথম ইলিশ। তার দাম নিয়ে খুনসুটি করেছেন স্বামীজি। দুপুরে পাতে পড়েছে ইলিশের ভাজা, ঝোল, অম্বল। তৃপ্তিভরে খেয়ে উঠে আবার মজা করে বললেন, ‘একাদশী করে খিদেটা খুব বেড়েছে, ঘটিবাটিগুলো ছেড়েছি কষ্টে।’
আরও শুনুন – বাঙালির নাকি মাছ খাওয়া বারণ! কী বলছে পুরাণ?
ইলিশ মাছের সঙ্গে বাঙালির কেবল পেটের নয়, প্রাণের টান। সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ পর্যন্ত তাকে ত্যাগ করেননি। ইলিশ খেতে ভালবাসতেন রবীন্দ্রনাথও। এককালে ইস্টবেঙ্গল লিগ জিতলে সমর্থকেরা বাড়ি ফিরতেন হাতে জোড়া ইলিশ ঝুলিয়ে। এখন অবশ্য রুপোলি রঙের মাছের দামও পাল্লা দিচ্ছে রুপোর দরের সঙ্গে, তাই সাধ থাকলেও সবার সাধ্য হয় না ইলিশে হাত ছোঁয়ানোর। তা সত্ত্বেও ভোজবাড়ির রান্নায় বা বাঙালি রেস্তোরাঁর এথনিক মেনুতে ‘ইলিশ প্ল্যাটার’-এর কদর কমেনি। আর এই কদর কিন্তু আজকের নয়।
আরও শুনুন – Rabindranath Tagore: ‘১০০০ বছরের পুরনো ডিম’ রবীন্দ্রনাথের পাতে, তারপর…
অনেক বাড়িতে নিয়ম ছিল, সরস্বতী পুজোর দিন ধান দূর্বা সিঁদুর দিয়ে বরণ করে ঘরে তোলা হবে জোড়া ইলিশ। সেই দিন থেকে ইলিশ মাছ খাওয়ার শুরু, আর তা শেষ হবে দশমীর দিন আবার জোড়া ইলিশ খেয়ে। আসলে মাঝের সময়টা ইলিশ মাছের গর্ভধারণের সময়, সেই কথা ভেবেই হয়তো এহেন নিয়ম জারি করা হয়েছিল। ভাবছেন, এতগুলো দিন ইলিশের স্বাদ ভুলে থাকতে হত? মোটেই না। ‘নোনা ইলিশ’ আছে তো! চার-পাঁচ মাস ধরে নুন হলুদ দিয়ে জারিয়ে, পাতায় মুড়ে, রান্নার উনুনের পাশে রেখে, হাজারও তরিবত করে রেখে দেওয়া হত ইলিশ মাছ! আর যখন তাজা ইলিশ পাওয়া যায় তখন তো রান্নার ধুম। কতরকমের নাম সেসব পদের! ইলিশ ভাপা, আনারস ইলিশ, ইলিশের অম্বল, ল্যাঞ্জাভর্তা, ইলিশ মাছের উল্লাস থেকে ‘ধূমপক্ব ইলিশ’, অর্থাৎ কিনা ‘স্মোকড হিলসা’। সাহেবরা কাঁটাও বাছবেন না আবার ইলিশও ছাড়বেন না, সেইজন্য এই পদের উদ্ভব।
বাকিটা শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।