একটা হেরে যাওয়া ম্যাচে কীভাবে লড়াইয়ের রোশনাই সৃষ্টি করতে হয় চিন্নাস্বামীতে তা দেখিয়েছেন ডিকে। এই প্রথমবার নয়, আগেও বহুবার এই ভূমিকায় তিনি অবতীর্ণ হয়েছেন। কখনও জয়ের হাসি নিয়ে ফিরেছেন, কখনও ফিরেছেন হারের বিষণ্ণতায়। আসলে ফিনিক্স পাখির মতো হয়ে ফিরে আসাটা অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন দীনেশ। লিখছেন সুমন্ত চট্টোপাধ্যায়।
ক্রিকেটে বয়স একটা ফ্যাক্টর। যে যতই আমরা বলি, ‘বয়স তো কেবলই সংখ্যামাত্র!’ কিন্তু মুখে বলা এক, কাজে করে দেখানো আর এক। তাই বয়সকে পোষ মানিয়ে ক্রিকেটে নিজের সেরাটা তুলে ধরা চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু দীনেশ কার্তিক যেন সেই কথার উল্টো পিঠ। যত সময় যাচ্ছে তত ধারালো দেখাচ্ছে কার্তিকের হাতের ‘উইলো কুঠার’।
এই আইপিএল যেন তার জ্বলন্ত প্রমাণ। একটা হেরে যাওয়া ম্যাচে কীভাবে লড়াইয়ের রোশনাই সৃষ্টি করতে হয় চিন্নাস্বামীতে তা দেখিয়েছেন ডিকে। এই প্রথমবার নয়, আগেও বহুবার এই ভূমিকায় তিনি অবতীর্ণ হয়েছেন। কখনও জয়ের হাসি নিয়ে ফিরেছেন, কখনও ফিরেছেন হারের বিষণ্ণতায়। আসলে ফিনিক্স পাখির মতো হয়ে ফিরে আসাটা অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন দীনেশ। এই চল্লিশ ছুঁইছুঁই বয়সেও। যে সময়টাকে অনেকেই চিহ্নিত করে থাকেন ক্রিকেটারের বার্ধক্যের সূচনাকাল হিসেবে। তাঁর সমসাময়িক অনেকেই সেই পথেই পা বাড়িয়েছেন, সুরেশ রায়না, ইরফান পাঠানের মতো অনুজ-ক্রিকেটার ঢুকে পড়েছেন কমেন্ট্রিবক্সে। আজ নয়, অনেক আগেই। যতবারই তাঁর সম্পর্কে বলে দেওয়া হয়েছে, ‘শেষ! ডিকের এবার অবসর নেওয়া উচিত।’ বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কার্তিক ফিরে এসেছেন সেই চেনা মেজাজে। আর অপার বিস্ময়ে ক্রিকেট-জনতা বলেছে, ‘এভাবেও ফিরে আসা যায়?’
আরও শুনুন: সব ‘ভুলের মাশুল’ দিতে হয় না, পাঞ্জাবের রাজা হয়ে বোঝালেন শশাঙ্ক
আইপিএলের মায়ালোক ছেড়ে শুকনো পরিসংখ্যানে চোখ রাখলে দেখা যায়, দীনেশ কার্তিক সেই একমাত্র ক্রিকেটার, যিনি ভারতের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং আজও খেলে চলেছেন। সময়ের সঙ্গে নিজেকে প্রতিনিয়ত ভেঙেছেন। লোয়ার অর্ডারের ভরসা থেকে তুলে ধরেছেন দলের অপরিহার্য ‘ফিনিশার’ হিসেবে। কিন্তু কখনও সেই মর্যাদা পাননি, যা তাঁর পাওনা ছিল। তবু আক্ষেপ করেননি, মিডিয়ায় মুখ খুলে উগড়ে দেননি ক্ষোভ। বরং আঁকড়ে ধরেছেন ক্রিকেট অনুরাগকে। যা থেকে এখনও ঠিকরে বের হচ্ছে, সূর্যের মধ্যগগনের তেজ। যা দেখে চিন্নাস্বামীর দর্শক উঠে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানিয়েছেন, কেভিন পিটারসেনের মতো প্রাক্তন তারকা বলতে বাধ্য হয়েছেন– ‘কোনও ধারাভাষ্যকারকে দেখিনি এত ভালো ব্যাট করতে!’
৫৪৯ রানের একটা হাইভোল্টেজ ম্যাচ! যে ম্যাচে রানের ফুলঝুরি ছুটিয়েছেন ট্রাভিস হেড, হেনরিক ক্লাসেনের মতো বর্তমান প্রজন্মের তারকা। তবু দিনের শেষে চর্চা হয় দীনেশ কার্তিককে নিয়ে, তাঁর ৩৫ বলে ৮৩ রানের ইনিংস নিয়ে। বোঝাচ্ছেন বয়সের বিচারে নয়, পারফরম্যান্সের নিরিখে তিনি ‘লাইমলাইট’-এ থাকার যোগ্য।
আরও শুনুন: হে গম্ভীর! হে গম্ভীর! মাঠের বাইরে বসেই ম্যাজিক দেখানোর বাজিগর
অতঃপর এখন একটা প্রশ্নই ঘুরছে। কার্তিক কি ঢুকে পড়বেন ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে? পেছনে ফেলে দেবেন ঋষভ পন্থ, সঞ্জু স্যামসনদের? মজার বিষয়, মুম্বই-বেঙ্গালুরু ম্যাচে কার্তিকের ব্যাটিংয়ের সময় তাঁকে স্লিপ থেকে মজার ছলে ‘স্লেজ’ করছিলেন রোহিত শর্মা। বলছিলেন, ‘সাবাশ ডিকে, ওয়ার্ল্ড কাপ খেলনা হ্যায়।’ এক ম্যাচ পর পারফরম্যান্সে যেন উত্তর দিয়েছেন কার্তিক। আর মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘অ্যাই এম রেডি…’। রোহিত শুনছেন তো?
যদি সত্যি ডিকের স্বপ্নপূরণ হয়? বিশ্বকাপের বিমানে চড়ে বসেন দীনেশ কার্তিক? তখন কিন্তু আবার বলতে হবে– ‘বয়স তো কেবলই সংখ্যামাত্র!’