খেয়াল করেছেন কি, ইদানীং বজ্রপাতের হার কেমন বেড়েছে! পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যু। কেন এত ঘন ঘন বজ্রপাত হয় এখন? আর, এরকম সময়, নিজেকে সুরক্ষিতই বা রাখবেন কী করে!
আকাশে থরে থরে জমা কালো মেঘ, সঙ্গে ব্যাপক বজ্রপাত– ইদানীং এ যেন প্রায় রোজকার ঘটনা। সম্প্রতি বজ্রপাতে আমাদের রাজ্যে ঝরে গেছে ছাব্বিশটি তাজা প্রাণ। প্রকৃতির এই রোষ থেকে বাঁচতে আমাদের অতি অবশ্য সতর্ক হওয়া উচিত।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সধারণত যে মেঘ থেকে বজ্রপাত এবং বৃষ্টি হয়, তার পোশাকি নাম কিউমুলোনিম্বাস। বাংলায় যাকে বলে বজ্রগর্ভ মেঘ। এই মেঘ জমলে প্রথমে আসে আচমকা বৃষ্টি, দমকা হাওয়ার সঙ্গে হয় বজ্রপাত।
এমন বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরির বেশ কিছু কারণ রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হল তাপমাত্রার আচমকা বদল। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ফলে বিশ্বজুড়ে সে বদল তো হয়েছে ব্যাপক হারেই। দোসর হয়েছে মাত্রাতিরিক্ত দূষণ। শহরাঞ্চলে চলতে থাকা প্রচুর নির্মাণকাজের ফলেই বাতাসে বাড়ছে ধূলিকণার পরিমাণ। তৈরি হচ্ছে যথেচ্ছ বজ্রগর্ভ মেঘ। মেঘ জমছেও বেশ নিচে। আর তার ফলেই বাজ নেমে আসছে সরাসরি, মেঘ থেকে মাটির দিকে। বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে ‘ক্লাউড টু গ্রাউন্ড’।
আরও শুনুন : সঙ্গে নেই ছাতা, তবু ভরা বর্ষায় মাথা বাঁচানোর উপায় কী?
আকাশে এরকম মেঘের আনাগোনা দেখলে গোড়াতেই সতর্ক হয়ে যান। পারতপক্ষে এসময় বাইরে বেরোবেন না। বাড়িতে থাকলে ছাদে বা উঁচু জায়গায় থাকা নৈব নৈব চ। মেঝেতে শোবেন না। দেওয়ালে হেলান দেবেন না। বৃষ্টির সময়ে জানলার ধারে বসে বৃষ্টি উপভোগ করার ইচ্ছে বা অভ্যেস থাকলে, অবিলম্বে তা বন্ধ করুন। জানলা অবশ্যই বন্ধ রাখবেন। বজ্রপাতের সময় বাড়ির মধ্যে জলের কল খুলে কাজ না করাই শ্রেয়। ওই সময়ে স্নান করবেন না। খুব কাছাকাছি বাজ পড়লে জলে তার প্রভাব পড়ে, ফলে আহত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। বজ্রপাতের সময় ধাতব কল, সিঁড়ির ধাতব রেলিং, জলের পাইপ বা ল্যান্ডফোন ছোঁবেন না।
বাজ পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিলেই টিভি, এসি, ফ্রিজ এবং কম্পিউটার, ওয়াইফাই-এর রাউটারের সুইচ অফ করে দিন ঝটপট। বাড়ির সমস্ত বৈদ্যুতিক যন্ত্রের প্লাগ খুলে রাখুন। বাজ পড়ার সময় ফোনে কথা বলা বা ভিডিও কল কোনোটাই করবেন না।
যখন প্রচণ্ড আলোর ঝলকানি এবং শব্দ হবে, কানে আঙুল দিয়ে নিচু হয়ে বসবেন। ঘরের মধ্যেও খালি পায়ে না থেকে বা চামড়ার জুতো পরার বদলে রবারের জুতো পরুন।
এ তো গেল বাড়ির কথা, যদি একান্তই বাইরে বেরোতে হয় তাহলে কী করবেন সেই বিষয়ে শুনে নেওয়া যাক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ।
বাইরে বেরোলে বৃষ্টি এবং বজ্রপাত শুরু হলে তুরন্ত, কোনও বাড়ি, দালান বা দোকানের মধ্যে আশ্রয় নিন। টিনের চাল বা খোলা ছাউনি, বা বাসস্টপ জাতীয় জায়গা এড়িয়ে চলবেন। হয়তো একসঙ্গে অনেকেই আছেন। কিন্তু কোনও একটি জায়গায় জটলা করে থাকবেন না। যদি গাড়িতে থাকেন, তাহলে ভালো করে জানলার কাচ তুলে দেবেন। স্টিয়ারিং গিয়ার ক্লাচ এসব ছোঁবেন না। গাড়ির কাচ ছোঁবেন না। কোনও মোবাইল টাওয়ার, বিদ্যুতের খুঁটি, বা বড় গাছের তলায় আশ্রয় নেবেন না। এইগুলো অন্য জিনিসের থেকে অনেক বেশি বিদ্যুৎকে আকর্ষণ করে।
আপনার বাড়িকে বাজের হাত থেকে বাঁচাতে আর্থিং ব্যবস্থা ঠিক আছে কি-না অবশ্যই তা অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারকে দিয়ে পরখ করিয়ে রাখুন।
যদি কেউ বজ্রপাতে অসুস্থ বা আহত হন, ইলেকট্রিক শক খেলে যেভাবে চিকিৎসা করা হয়, সেভাবেই প্রাথমিক চিকিৎসা করে তাঁকে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবেন।
আরও শুনুন : বর্ষায় ভিজে পায়ে সারাদিন থাকতে হয়! পায়ের যত্ন নেবেন কীভাবে?
বজ্রপাত আচমকা জীবনে ডেকে আনতে পারে বিপর্যয়। একটু সতর্কতাই আমাদের এই বিপদের হাত থেকে বাঁচাতে পারে। তাই এরকম মুহূর্তে নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন, সুরক্ষিত থাকার পরামর্শ দিন অন্যকেও।