যার ঘর পুড়ে গেছে অকাল অনলে, সেও তবু মাটি পেলে প্রতিমা বানায়। কী প্রতিমা বানাবে গাজা? যে আশা এখন তাঁদের চালিত করছে, সেই আশাই যেন তাঁদের শক্তি। তাঁরা বলছেন, কিছুই প্রায় নেই। তবু তাঁরা তো আছেন। কিছু তো আছে। সেই থাকাটুকুর জন্য তাঁরা ধন্যবাদ জানাচ্ছেন ঈশ্বরকে।
‘তার ঘর পুড়ে গেছে অকাল অনলে…’। ঘর নেই। রয়ে আছে ধ্বংসাবশেষ। তবুও তো কিছু আছে! সেই চেনা সিঁড়ি, যার অনেকটাই ভেঙে গেছে বোমার আঘাতে। সেই ছাদ, সেই বারান্দা, কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। ধ্বংসের ভিতর দিয়ে তবু যেন উঁকি দিচ্ছে স্মৃতি। স্মৃতিতে যা অক্ষত, তারই ক্ষতবিক্ষত রূপের সামনে এখন দাঁড়িয়ে আছেন গাজার মানুষ। তাতে কি চোখে জল আসে! বোধহয় অশ্রুও গিয়েছে শুকিয়ে। আর তাই ধ্বংসের ভিতর দাঁড়িয়েই যেন ঘরে-ফেরার-আনন্দ খুঁজছেন সেখানকার বাসিন্দারা।
:আরও শুনুন:
আপাতত শান্তিকল্যাণ! গাজায় মাথার উপর চক্কর নেই বিমানের, শুধু যারা চলে গেছে তারা জানল না
গাজা জুড়ে এখন ঘরে ফেরার পালা। সেই ২০২৩-এর অক্টোবরে যুদ্ধের আগুন যখন ছড়িয়ে পড়ল, তখন থেকেই তাঁরা ঘর হাড়া। মাথার উপর চক্কর কেটেছে বোমারু বিমান। চারিদিকে যে ধ্বংসলীলা, তাতে নিজেরা আদৌ বেঁচে থাকবেন কি-না সেই নিয়ে ছিল সংশয়। বেঁচে থাকেননি অনেকেই। চোখের সামনে পরিবারের প্রিয় পরিজনদের মৃত্যু দেখেছে গাজা। দুর্যোগের মেঘ কোনোদিন যে কাটবে, এই প্রায় বৃথা আশাটুকুই ছিল তাঁদের একমাত্র সম্বল। যুদ্ধবিরতিতে এখন তাঁরা ফিরছেন তাঁদের প্রিয় ভূমিতে। ঘরে। সেই ঘর, যা আর ঘর নেই। গাজা কি আর আগের মতো আছে? থাকার কথা নয়। যাঁরা ফিরে সেই ধ্বংসস্তূপ দেখছেন, তাঁরা জানেন, গাজা প্রায় নেই হয়ে গিয়েছে। যাঁরা মৃত তাঁদের এই যন্ত্রণা আর পোহাতে হল না। অথচ এই তীব্র নেই, এই দারুণ শূন্যতার মধ্যেও অপূর্ব এক তৃপ্তি যেন গাজায়। সেটুকু ঘর খুঁজে পাওয়ার আনন্দ। হোক না ধ্বংসস্তূপ, তবুও তো ঘর। তবুও তো স্মৃতি। স্মৃতি দিয়ে ভাঙা ঘর জোড়া যায় না। তবু ধ্বংসের মধ্যে নিজের প্রিয় ঘরে ফেরার যে তৃপ্তি সেখানকার বাসিন্দাদের তা যেন নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে সেই ছবি। নিজেদের ভাঙাচোরা ধুলো হয়ে যাওয়া ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন বাসিন্দারা। তবু প্রিয় মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা তাঁদের অটুট।
:আরও শুনুন:
যুদ্ধের শীত, আর শীতের যুদ্ধ: গাজায় শিশুমৃত্যু দেখে তবু লজ্জা পাবে না সভ্যতা?
যার ঘর পুড়ে গেছে অকাল অনলে, সেও তবু মাটি পেলে প্রতিমা বানায়। কী প্রতিমা বানাবে গাজা? যে আশা এখন তাঁদের চালিত করছে, সেই আশাই যেন তাঁদের শক্তি। তাঁরা বলছেন, কিছুই প্রায় নেই। তবু তাঁরা তো আছেন। কিছু তো আছে। সেই থাকাটুকুর জন্য তাঁরা ধন্যবাদ জানাচ্ছেন ঈশ্বরকে। জীবন তাঁদের যেটুকু প্রতিরোধ বরাদ্দ করেছে, তা দিয়েই এখন নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখছেন গাজার মানুষ।