হাল আমলের ফ্যাশন স্টেটমেন্টের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী জড়িয়ে সানগ্লাস। বাহারি পোশাকের সঙ্গে একটা মানানসই সানগ্লাস না হলে কি চলে! বিশেষত সিনেদুনিয়ার তারকারা যেভাবে সানগ্লাসের ব্যবহার জনপ্রিয় করেছেন, তাতে আম-আদমি সহজেই এটিকে দৈনন্দিন ফ্যাশনের অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছেন। কিন্তু জানেন কি, এককালে এটির মূল ব্যবহারকারী ছিলেন বিচারকরা! অবাক হচ্ছেন? তাহলে শুনেই নিন সানগ্লাসের গোড়ার গল্প।
উজ্জ্বল আলোয় চোখ মেলা দায়! খর রোদে চোখ ঝলসে যাচ্ছে! কুছ পরোয়া নেহি। একটা সানগ্লাস পরে নিলেই চোখের উপর অনায়াসে নেমে আসে ছায়া। চিকিৎসকরাও চোখ ভালো রাখতে সানগ্লাস ব্যবহারের পরামর্শই দেন। এ-হেন উপকারী জিনিসটি এখন আমাদের কাছে ফ্যাশনের সামগ্রীও বটে। সৌজন্যে অবশ্যই সিনেতারকারা। চুলবুল পান্ডে ওরফে সলমন খানের সেই জামার পিছনে সানগ্লাস ঝুলিয়ে রাখার স্টাইল তো এক প্রজন্মকে মাতিয়ে দিয়েছে। অতটা নাটকীয় না হলেও, প্রায় সব অভিনেতা-অভিনেত্রীই সানগ্লাস ব্যবহার করেন। আর যেভাবে সিনেমার পর্দার পোশাকের রকমসকম নিয়ন্ত্রণ করে আমআদমির ওয়ার্ডরোব, ঠিক সেভাবে ওই ছায়াদুনিয়ার সৌজন্যেই সানগ্লাস প্রায় সকলের ফ্যাশনের অভিধানে ঢুকে পড়েছে। কিন্তু বস্তুটির আবির্ভাব হয়েছিল একেবারেই প্রয়োজনের খাতিরে। তার ব্যবহার ছিল আদালত চত্বরে, আর মূল ব্যবহারকারীরা ছিলেন বিচারক।
আরও শুনুন: মুক্তিযুদ্ধের দরুন পাওয়া গেল ORS, বিশ শতকের সেরা আবিষ্কারের কৃতিত্ব তিন বাঙালির
একটু খেয়াল করলে দেখা যায়, কোনও শোকের মুহূর্তে অনেকেই সানগ্লাস পরে নেন। চোখ দেখেই মনের কথা বোঝা যায়, সে তো আমাদের সকলেরই জানা। ফলত বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে চোখদুটো সানগ্লাসে ঢেকে নেন অনেকেই। যাতে মনের অভিব্যক্তি চোখের দরজা দিয়ে হাটখোলা না হয়ে পড়ে। অনেকটা এই কারণেই শুরু হয়েছিল সানগ্লাসের ব্যবহার। ব্যবহারের শুরুটা হয় সেই দ্বাদশ শতকে, চিনে। অবশ্য এখন আমরা যেভাবে সানগ্লাস দেখতে অভ্যস্ত, গোড়ার দিকে জিনিসটি এরকম স্টাইলিশ ছিল না। মূলত ধোঁয়াটে দুটি কাচ একটা ফ্রেমে আটকে দেওয়া হত। চোখ পরীক্ষার সময় চিকিৎসকরা যেরকমের চশমার ফ্রেম ব্যবহার করেন, গোড়ার দিকে সানগ্লাস ছিল অনেকটা সেরকমই। মূলত সমাজের ধনী বর্গের মানুষদের জন্যই তা তৈরি করা হয়েছিল। তাঁরা যখন অন্যদের সঙ্গে কথা বলছেন, তখন যাতে চোখের অভিব্যক্তি গোপন করতে পারেন। তবে এর ব্যবহার সবথেকে বেশি হত আদালতেই। আর ব্যবহার করতেন বিচারকরা। অপরাধীদের যখন তাঁরা প্রশ্ন করতেন, তখন একই ভাবে নিজেদের মনের ভাব গোপন করতে পরে নিতেন সানগ্লাস। বিচারের ক্ষেত্রে বিচারপতিরা নির্লিপ্ত, আবেগবর্জিত হয়ে থাকেন। সেটিই তাঁদের ধর্ম। তবু কোনও সময় মনের ভাব যে প্রকাশ হয়ে পড়ে না, তা তো নয়। সেখানে নিজেকে আড়াল করতে খানিকটা গোপনীয়তা প্রয়োজন। ভরা চত্বরে সেই গোপনীয়তা আর কোথায়! অগত্যা চোখে চাপাও সানগ্লাস। তাতেই বন্ধ মনের দরজা। এইভাবেই সানগ্লাস ব্যবহারের চল ছিল সেকালে।
আরও শুনুন: মাইক্রোওভেন থেকে এক্সরে, দুর্ঘটনার জেরে আবিষ্কার হয়েছিল যে সব জিনিস
পরবর্তীতে যত দিন গিয়েছে সানগ্লাসের রকম-সকম বদলেছে। শুধু রোদ থেকে বাঁচতে, বা অনুভূতি গোপন করার বাইরে তার ব্যবহার শুরু হল অন্যান্য ক্ষেত্রেও। একসময় বায়ুসেনাও তাদের প্রয়োজনে সানগ্লাস ব্যবহার শুরু করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও বিশেষ সানগ্লাসের ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পাশাপাশি সেই তিনের দশক থেকেই ফ্যাশন হিসাবেও এর ব্যবহার শুরু হয়, পরবর্তীতে সাতের দশকে এসে হলিউড স্টারদের দৌলতে ফ্যাশনের দুনিয়ায় তার পাকাপাকি স্থান হয়ে যায়। আর আজকের পৃথিবীতে তো সানগ্লাস চোখের জন্য যতটা জরুরি, ঠিক ততটাই প্রয়োজনীয় ফ্যাশনের জন্যও।