চন্দ্রযান ৩ চাঁদের মাটি ছোঁয়ার আগে আগেই জানা গিয়েছিল, চাঁদের মাটিতে পড়ে রয়েছে মানুষের ব্যবহার করা বর্জ্য, মল-সহ ৯৬টি ব্যাগ। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক, যেসব মানুষ চাঁদে যাবেন, তাঁদের মলত্যাগের উপায় কী? আর সেই বাস্তব সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামিয়েছিল খোদ নাসা-ও। এমনকি এর সমাধান খুঁজতে এক প্রতিযোগিতারও আয়োজন করেছিল তারা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
তরল থেকে শুরু করে কঠিন, চাঁদে সব কিছুই প্রায় ভাসমান। এই অবস্থায় মল মূত্র ত্যাগ করলে যে কী অবস্থা হতে পারে, তা তো বোঝাই যাচ্ছে। আর যাই হোক, চারদিকে মানুষের বর্জ্য পদার্থ ভেসে বেড়াচ্ছে, এমন দৃশ্যকে তো খুব একটা সুন্দর বলা চলে না। এদিকে সেই নীল আর্মস্ট্রং-এর সময় থেকেই তো চাঁদে মানুষের পা পড়ার সূচনা। চন্দ্রযান ৩-এর সাফল্যের আবহে আবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আশা প্রকাশ করেছেন যে, একদিন চাঁদে বেড়াতেই যাবে মানুষ। এমনকি ইসরো-র প্রধানও বলছেন, চাঁদে মানুষের বাড়ি বানানোর জন্য জমি খুঁজছে চন্দ্রযান ৩। কিন্তু কথা হল, মহাকাশচারীই হোন কি এমন শৌখিন সফরকারী, জৈবিক প্রয়োজন তো তাঁদের থাকবেই। তা সে পৃথিবীই হোক কি চাঁদ, মলমূত্র ত্যাগ করার প্রয়োজন তো পড়বেই। সেক্ষেত্রে কী করণীয়?
যদিও এখন আমরা জানি, বেশির ভাগ সময়েই মহাকাশচারীদের ডায়াপার পরে কাটাতে হয়। ইদানীং মহাকাশ যানে একটি বর্জ্য সংগ্রাহক প্রক্রিয়া রাখা হয়। এই প্রক্রিয়ায় সংগৃহীত বর্জ্য মহাকাশে ছুড়ে ফেলা হয় বিশেষভাবে। কিন্তু এ ছাড়া অন্য কোনও উপায় মেলে কি না, সেদিকটি নিয়েও ভেবেছিল মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। চাঁদে যদি শেষ পর্যন্ত মানুষ পৌঁছেই যায় এবং থাকতে শুরু করে, তবে তাদের শরীরের বর্জ্য যাতে দূষণ না তৈরি করে, সেই ব্যবস্থা করার জন্য আগেভাগেই ভাবনাচিন্তা শুরু করেছিল নাসা। আর সেই লক্ষ্যেই একটি বিশেষ প্রতিযোগিতারও আয়োজন করেছিল তারা। যার নাম ‘লুনার লু কন্টেস্ট’।
জানা যায়, এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারতেন যে কেউ। বয়স বা যোগ্যতা, কোনওরকম কোনও মাপকাঠি বেঁধে দেওয়া হয়নি। কেবল সমাধানটি ঠিক কেমন হবে, সে বিষয়ে বিশেষ কয়েকটি শর্ত বেঁধে দিয়েছিল নাসা। বলা হয়েছিল, শৌচাগার বা বর্জ্য পাত্র যাই হোক না কেন, সেটিকে মল ও মূত্র ত্যাগ, এবং ঋতুরক্ত সংগ্রহের কাজে ব্যবহার করার উপযোগী হতে হবে। অন্তত ১১৪ গ্রামের সমান ওজনের ঋতুকালীন রক্তপাতের হিসাবও রাখতে হবে প্রতি দিনের বর্জ্যের হিসাবে। প্রতি বারের ব্যবহারে এক লিটারের সমান তরল বর্জ্য ও ৫০০ গ্রামের সমান কঠিন বর্জ্য ধারণ করতে পারবে, এমনই আয়তন হতে হবে তার। তবে তার আয়তন কোনও ভাবেই ০.১২ ঘনমিটারের বেশি জায়গা নিতে পারবে না। যা আদতে পৃথিবীতে শৌচালয়ে ব্যবহার করা একটি ছোট পাখার আয়তনের সমান। আর সংগৃহীত বর্জ্য পাঁচ মিনিটের মধ্যে সরিয়ে ফেলতে হবে বর্জ্যপাত্র থেকে, যাতে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই পরের জন স্পেস টয়লেটটি ব্যবহার করতে পারেন।
আরও শুনুন: চর্চায় সিনেমার হিরো, বাস্তবের মহাকাশচারী রাকেশ শর্মা এখন কোথায়?
এই প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার হিসেবে ২০ হাজার ডলার, অর্থাৎ প্রায় সাড়ে ১৬ লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন একজন। দ্বিতীয় পুরস্কার ছিল ১০ হাজার ডলার ও তৃতীয় পুরস্কার ছিল ৫ হাজার ডলার। তিনটি সমাধানকে পছন্দসই বলে বেছে নিয়েছিল নাসা। সুতরাং চাঁদে জৈবিক বর্জ্য ত্যাগের ক্ষেত্রে এরপরে কোনও নয়া ব্যবস্থাপনা আনতে পারে তারা, এমনটা ভাবাই যায়।