স্কুলজীবনে পরীক্ষায় বরাবর প্রথম হতেন। কলেজ ইউনিভার্সিটিতেও বজায় রেখেছিলেন সেই ধারা। স্বপ্ন ছিল প্রশাসনিক পদে যোগ দিয়ে দেশমাতৃকার সেবা করবেন। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সেই সাফল্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল ঝরঝরে ইংরাজি বলতে না পারা। তাই মেধাবী হয়েও তাঁকে সইতে হয়েছে নানান ধরনের বিদ্রূপ। তবু দমে না গিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রমের জোরে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় সারা দেশে ৫০ র্যাঙ্ক করেছিলেন তিনি। আসুন শুনে নিই IAS সুরভির জীবন যুদ্ধের কাহিনি।
ছোটবেলা কেটেছে মধ্যপ্রদেশের এক ছোট্ট গ্রামে। বরাবরের স্বপ্ন ছিল গ্রামের জন্য কিছু করার। অদম্য মনের ইচ্ছা আর অক্লান্ত পরিশ্রমের জোরে নিজেকে সেই জায়গাতেই প্রতিষ্ঠিত করেছেন সুরভি। তবে তাঁর এই সাফল্যের পথ মোটেও মসৃণ ছিল না। যথেষ্ট মেধাবী হয়েও ইংরাজি বলতে না পারার জন্য তাঁকে সইতে হয়েছে নানা বিদ্রুপ। তবু একবারের জন্যেও পিছিয়ে আসেননি লড়াই থেকে।
আরও শুনুন: ‘আত্মরক্ষার জন্য ঘরে অস্ত্র রাখুক হিন্দুরা’, ফের বিতর্কিত নিদান সাধ্বী প্রজ্ঞার
সুরভি গৌতমের জন্ম মধ্যপ্রদেশের এক প্রত্যন্ত গ্রাম আমদারায়। একান্নবর্তী পরিবারে বেড়ে ওঠা সুরভির বাবা ছিলেন একজন পেশাদার উকিল এবং মা ছিলেন শিক্ষিকা। স্বাভাবিক ভাবেই বাড়িতে বরাবরই পড়াশোনার পরিবেশ বজায় ছিল। তবে গ্রামে থাকার দরুন তাঁর স্কুল জীবন শুরু হয়েছিল গ্রামেরই ছোট একটা হিন্দি মিডিয়াম স্কুলে। বরাবরই স্কুলের বাকি ছাত্রছাত্রীদের তুলনায় পড়াশোনার দিক দিয়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে থাকতেন তিনি। প্রত্যাশামতো রেজাল্টও করেন বোর্ডের পরীক্ষায়। তারপর উচ্চশিক্ষার জন্য চলে আসেন দিল্লিতে। সেখানে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু মনে মনে সুরভি ঠিক করে নিয়েছিলেন ভবিষ্যতে কোনও প্রশাসনিক পদে যোগ দিয়ে দেশমাতৃকার সেবা করবেন। কিন্তু কলেজে পড়াকালীন তাঁর সেই স্বপ্নের পথা বাধা হয়ে দাঁড়ায় ঝরঝরে ইংরাজি না বলতে পারার অক্ষমতা। যে মেয়েকে তাঁর গ্রামের মানুষ মাথায় করে রাখত পড়াশোনার জন্য, তাঁকেই কিনা ইংরাজি বলতে না পারার জন্য কলেজে গিয়ে অপমানিত হতে হয়েছিল। কিন্তু সেই অপমানের জেরে আরও মনের জোর বেড়ে যায় সুরভির। খুব অল্পদিনে ঝরঝরে ইংরাজি বলতে শেখার জন্য প্রত্যেকদিন ১০টি করে নতুন শব্দ শিখতে শুরু করেন তিনি। এভাবেই কয়েক মাস কাটানোর পর ইংরাজি ভাষাটি বেশ দখলে চলে আসে তাঁর। তারপর থেকে আর পিছন ফিরে দেখতে হয়নি তাঁকে।
আরও শুনুন: ডিজে আর নাচ-গান ইসলামী সংস্কৃতি নয়, বিয়ে না দেওয়ার বার্তা মৌলবিদের
ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষায় গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম হয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দেন সুরভি। ঠিক করেছিলেন সেই বছরই সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসবেন। কিন্তু বয়স না হওয়ায় সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে হয় তাঁকে। তার বদলে অন্যান্য সরকারি প্রবেশিকা পরীক্ষা গুলিতে বসেন সুরভি। সেখানেও প্রথম চেষ্টাতেই উত্তীর্ণ হয়ে যান গেট, ইসরো, স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়া লিমিটেড, মধ্যপ্রদেশ স্টেট পাবলিক কমিশনের মতো পরীক্ষাগুলিতে। সেই বছর একটি সরকারি চাকরিতেও যোগ দেন সুরভি। কিন্তু তাঁর প্রধান লক্ষ্য ছিল সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসা। সেই মতো চাকরি করতে করতেই পরীক্ষায় প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তিনি। অবশেষে নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসেন তিনি। এবং এখানেও সকলকে অবাক করে সারা দেশের মধ্যে ৫০ র্যাঙ্ক করেন সুরভি। বর্তমানে আহমেদাবাদে এক জেলায় ক্যালেক্টর হিসেবে যোগ দিয়েছেন সুরভী। তবে তাঁর ইচ্ছা আরও উঁচু পদ নিয়ে নিজের জেলায় ফিরে আসা এবং নিজের গ্রামের জন্য কিছু করা। ইংরেজি বলতে না-পারা যে স্বপ্নের পথ রুদ্ধ করতে পারে না, গোটা দেশের অসংখ্য তরুণকে সেই কথাই জানিয়ে দিয়েছেন কৃতী এই IAS অফিসার।