মান্ডিতে কী দাম চলছে? কঙ্গনা রানাউত বিজেপি প্রার্থী হতেই তাঁর খোলামেলা ছবি দিয়ে খোঁচা কংগ্রেস নেত্রীর। যা ফের প্রশ্ন তুলে দিল, কোনও নারীর বিরোধিতা করতে হলেই ‘যৌনকর্মী’ কটাক্ষকে হাতিয়ার করতে হবে?
দিন বদলায়। দল বদলায়। অথচ ‘মেয়েদের দাম’ বদলাল কই? কোনও নারীর প্রতি আক্রমণ শানাতে হলেই যেভাবে ‘নারীর মূল্য’ নিয়ে টানাটানি জোড়েন দল-মত নির্বিশেষে সকলেই, তাতে সংশয় জাগে। শাসক থেকে বিরোধী, নেতা থেকে জনতা, সব পথ এসে মিলে যাবে শেষে একই গন্তব্যে? কোনও নারীর কথাবার্তা, চিন্তাভাবনা, আচার আচরণ, যে কোনও কিছুর বিরোধিতা করতে হলেই অবধারিত উঠে আসবে যৌনকর্মী খোঁচা? এত পথ পেরিয়ে এসেও বিরোধিতার ভাব ভাষা ভঙ্গি আর কোনও বিবর্তন খুঁজেই পাবে না, এও কি স্বাভাবিক আদৌ?
আরও শুনুন:
আঁচল সরলেই ‘মন্দ মেয়ে’র উপাখ্যান! যেন প্রাচীন মুদ্রাদোষ
সম্প্রতিই ‘রাস্তার মেয়ে’, ‘ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়ানো মেয়ে’, এমন কয়েকটি শব্দবন্ধ ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছিল সোশাল মিডিয়া। শাড়ির আঁচল রাখার ধরন নিয়ে আধুনিকাদের দিকে এহেন কটাক্ষ ছুড়েছিলেন এক বর্ষীয়ান অভিনেত্রী। কোনও নারীর পোশাকের রুচি পছন্দ না হলেই তাঁকে এহেন মন্তব্যে শামিল করা যায় কি না, তা নিয়ে মতামতের ঝড় বয়ে গিয়েছিল। এই আবহেই বৃহত্তর রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও দেখা গেল প্রায় এমনই এক ঘটনা। এক নারী আরেক নারীকে আক্রমণ করতে গিয়ে যে বিতর্কিত মন্তব্যটি করলেন, তাতে যৌনকর্মী খোঁচাই দেখছেন অনেকে। এখানে অপছন্দের কারণ প্রাথমিকভাবে পোশাক নয়, রাজনৈতিক মতের বিরোধিতা থেকেই এহেন আক্রমণ। আসলে হিমাচলপ্রদেশের মান্ডি থেকে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে কঙ্গনা রানাউতের নাম ঘোষণা হতেই তাঁকে নিশানা করেন কংগ্রেস নেত্রী সুপ্রিয়া শ্রীনাত। বলি অভিনেত্রীর একটি খোলামেলা ছবি সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে তিনি লেখেন, ‘‘মান্ডিতে কী দাম চলছে এখন, একটু বলবেন?’’ আর সেই পোস্ট নিয়েই প্রতিবাদে সরব হয়েছে পদ্মশিবির। তাদের প্রার্থীকে ‘যৌনকর্মী’র সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে বলেই দাবি বিজেপির।
আরও শুনুন:
শরীর বিজ্ঞাপিত, সমাজ তবু চায় যৌনতায় মৌন থাকুক নারী
কথা হল, রাজনৈতিক লড়াইয়ে বিরোধিতা হবেই। একে অন্যকে নিশানা করাও চলবে। তবে সেই বিরোধিতা রাজনৈতিকভাবে হওয়ারই কথা। অন্য কোনও প্রসঙ্গ সেখানে টেনে আনা আদৌ প্রাসঙ্গিক নয়। সেই প্রেক্ষিতে কংগ্রেস নেত্রীর ওই মন্তব্যের সমালোচনা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। আর তা হচ্ছেও। কিন্তু সেই সমালোচনা করছে যে দল, তারাও কি এহেন প্রবণতা থেকে মুক্ত? এর আগে দেখা গিয়েছে, বিজেপি বিধায়ক সুরেন্দ্রনারায়ণ সিং খোদ কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে ‘ইতালীয় নর্তকী’ বলতে ছাড়েননি। প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে ‘স্কার্টওয়ালি বাই’ বলাও এঁদের কাছে জলভাত। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে দিল্লির আপ নেত্রী অতীশী মার্লেনা অভিযোগ করেছিলেন, বিজেপি প্রার্থী গৌতম গম্ভীর তাঁর বিরুদ্ধে যৌন কুৎসা-সংবলিত লিফলেট বিলি করছেন। সেই লিফলেটে জ্বলজ্বল করছিল ‘যৌনকর্মী’ শব্দটি। এমনকি খোদ কঙ্গনা নিজেও এহেন কটাক্ষের দায় এড়াতে পারবেন না। এর আগে সাময়িকভাবে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন আরেক বলি অভিনেত্রী ঊর্মিলা মাতন্ডকর, সেসময়ে তাঁকে ‘সফট পর্নস্টার’ বলে আক্রমণ শানিয়েছিলেন কঙ্গনাই।
সব মিলিয়ে একটা কথা স্পষ্ট। কোনও নারী যে দলেই থাকুন না কেন, তাঁর কণ্ঠরোধ করতে চেয়ে বারে বারেই তাঁদের চরিত্রহননের পথটিকেই সহজ বলে মনে করেছেন রাজনৈতিক নেতৃত্ব। পুরুষ কিংবা নারী, লিঙ্গ বা দল নির্বিশেষে এখানে মন্তব্য ছুড়ে দিয়েছে নিয়ন্ত্রণকামিতা। কঙ্গনার নিজের মন্তব্য বা তাঁর দিকে ধেয়ে আসা মন্তব্য, দুই-ই এসেছে সেই একই উৎস থেকেই। যা কোনও রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি, আসলে প্রশ্ন তুলেছে রাজনৈতিক পরিসরে নারীর অবস্থান নিয়েই। প্রশ্ন তুলেছে সেখানে নারীকে পিতৃতন্ত্র কী চোখে দেখে তা নিয়ে। সেই দেখার ধরন না বদলালে এই প্রবণতাতেও বদল আসা সম্ভব হবে না কোনও দিনই।