ব্যাট হাতে মাঠ শাসন করেন ঈশ্বর। আসেন, জয় করেন, ফিরে যান। এমনটাই যেন দীর্ঘদিনের অভ্যাস। এই দৃশ্য দেখে নিজেকে সামলে রাখতে পারে না ভক্ত। কড়া নিরাপত্তার বেড়া টপকে সে ছুটে যায় ঈশ্বরের সামনে। পায়ে লুটিয়ে পড়ে। তাতে অসুবিধা হলেও, বিরক্ত হন না ঈশ্বর। বরং বুকে তুলে নেন।
ভালোবাসার মানুষ কিংবা ঈশ্বর। একটিবার তাঁকে ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছা। এতটাই প্রবল যে, ঝুঁকি আছে জেনেও ঝাঁপিয়ে পড়া। পরিণতি সুখের হবে না, তাও। উলটোদিক থেকে প্রত্যুত্তর নাও মিলতে পারে। প্রত্যাখান, অপমান জুটতেই পারে। তবু ঝাঁপিয়ে পড়া। স্রেফ মনে মনে জেনে রাখা, এত যে তোমায় ভালোবেসেছি!
তারপর ছুটে যাওয়া। স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখা। তৃপ্তির নিঃশ্বাস। কিন্তু পরের লাইনটা গেয়ে ওঠা হয় না আর। নিরুপায় পরিস্থিতি। তবু আক্ষেপ নেই। কারণ যা পাওয়ার তা মিলেছে। বুকে টেনে ধরেছেন ঈশ্বর। এরপর যতই ঝড় আসুক, হাসিমুখে সহ্য করে নেওয়া যাবে। ঠিক যেমনটা করলেন কোহলিভক্ত।
:আরও শুনুন:
ব্যাটিং জানেন না বিরাটরা’! রানের প্রপাতের মতো খরাও মেনে নিতে শিখুন ফ্যানেরা
ক্রিকেট হোক বা ফুটবল, খেলার মাঠে ভক্তের অনুপ্রবেশ নতুন কিছু নয়। তবে সাম্প্রতিক ইতিহাসে বিরাট কোহলিকে কেন্দ্র করে এমনটা বারবার হচ্ছে। আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচও ব্যতিক্রম ছিল না। ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংস। ব্যাট হাতে ক্রিজে রয়েছেন বিরাট। হঠাৎ গ্যালারি থেকে ছুটে এলেন যুবক। আলুথালু চুল, চোখে-মুখে উচ্ছ্বাস, আনন্দ, সটান শুয়ে পড়লেন বিরাটের পায়ে। দু-হাত দিয়ে আকড়ে ধরলেন। খেলার মাঝে এমনটা বিপত্তিই বটে। তবে বিরক্ত হননি কিং কোহলি। বুকে তুলে নেন সেই ফ্যানকে। জড়িয়ে ধরার আগেই অবশ্য মাঠের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা রে রে করে ছুটে আসেন। প্রায় পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে যান ওই যুবককে। ম্যাচের ফলাফল কী হল, বিরাট আর কতক্ষণ ক্রিজে থাকলেন, সেসব জানার সুযোগ হয়নি। অবশ্য তাতে কোনও আক্ষেপ নেই ওই যুবকের। ঈশ্বরের পা ছুঁয়ে দেখেছেন তিনি। আর কি চাই! ঘটনার জন্য জেলে যেতে হয় তাঁকে। তাতেও এতটুকু বিচলিত নন। যেন এই কাণ্ডটা ঘটাতেই তিনি মাঠে এসেছিলেন।
:আরও শুনুন:
‘লগান’ ছবির সিক্যুয়েলে এবার ভুবন হবেন বিরাট কোহলি! ব্যাপারটা কী?
আসলে, ভালোবাসা হয়তো একেই বলে। মন থেকে যাকে ঈশ্বর বলে মেনে নেওয়া, তাঁর প্রতি সমর্পন। ভারতীয় ক্রিকেটে এমনই এক জাবরা ফ্যান সুধীর গৌতম। তিনি অবশ্য শচীনের ভক্ত। খেলা দেখতে যেতেন অদ্ভুত সাজে। মাথা কামিয়ে, শরীরে জাতীয় পতাকা আর শচীনের নাম এঁকে হাজির থাকতেন গ্যালারিতে। বাকি সবাই ঝিমিয়ে পড়লেও, তাঁর উত্তেজনায় কমতি থাকত না এতটুকু। এমনকি শচীনের দেখা পেতে পুলিশের হাতে মার অবধি খেয়েছেন সুধীর। এখন অবশ্য পরিস্থিতি অনেকটা বদলেছে। খোদ লিটল মাষ্টার তাঁর এই জাবরা ফ্যানের খোঁজ খবর নেন। খরচ করে এই ফ্যানকে বিদেশে অবধি খেলা দেখাতে নিয়ে গিয়েছেন। তবে এমনই কত শত সুধীর গৌতম ছড়িয়ে আছেন এ দেশের অলিতে-গলিতে, তার প্রমাণ মেলে এই ধরনের ঘটনায়। বিশেষ করে আইপিএলে। ধোনি-কোহলিদের একবার সামনে থেকে দেখার তাড়নায় যে কোনও ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত থাকেন এই জাবরা ফ্যানেরা।
:আরও শুনুন:
ভিড়ের মাঝেও ‘বিরাট’ একা, লড়াইয়ের সঙ্গে ভালোবাসার মন্ত্রও শেখান কিং কোহলি
একটু খোঁজ করলেই হয়তো দেখা যাবে, সেই কোন ছোটবেলা থেকে এঁরা ক্রিকেট পাগল। বলা ভালো কোহলি বা ধোনি পাগল! বিভিন্ন ম্যাচের ফ্রেমবন্দী মুহূর্ত টাঙানো আছে ঘরের দেওয়ালে। ডায়েরি জুড়ে শুধুই খেলার রিপোর্টাজ। অধিকাংশই প্রিয় খেলোয়াড়কে নিয়ে লেখা খবর। যত্ন করে জমিয়ে রাখা। কিংবা নিজে হাতে আঁকা ছবি। নিখুঁত না হোক, ভালোবাসার কমতি নেই তাতে। এইসব কিছু যার জন্য, তিনি কোনওদিন জানবেন না এসবের কথা। তাতেও আক্ষেপ নেই ভক্তের। স্রেফ একটিবার যদি ছুঁয়ে দেখা যেত! সোজাপথে চেষ্টা করে সুযোগ হয়নি। বড্ড ভিড়, আলাদা করে নিজেকে চেনানোর উপায় নেই। অগত্যা নিয়ম ভাঙা। পরে যা হবে দেখা যাবে, আপাতত ঈশ্বরের পা-দুটো একবার জড়িয়ে ধরার সুযোগ তো মিলবে। তাই সাতপাঁচ না ভেবেই ঝাঁপিয়ে পড়া। হয়তো এমনই কোনও দৃশ্য দেখে নিজেকে সেই জায়গায় রাখার পরিকল্পনা করেছিলেন এই কোহলি ভক্ত। কিংবা তাঁকে দেখে ভবিষ্যতে এমন কাণ্ড ঘটানোর পরিকল্পনা করতে শুরু করলেন অন্য কোনও ফ্যান। খেলার মাঠে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতেই থাকবে। হয়তো নিরাপত্তা কড়াকড়ি বাড়িয়ে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে। কিন্তু ঈশ্বরে ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছা কতটা প্রবল হতে পারে, তার প্রমাণ ভবিষ্যতেও হয়তো দিয়ে যাবেন জাবরা ফ্যানরা।