একবার ডুব দিলেই ধুয়ে যাবে পাপ। শুধুমাত্র গঙ্গা নয়, যমুনা ব্রহ্মপুত্র সহ দেশের একাধিক নদীকে এমনই পুণ্যতোয়া মনে করা হয়। কিন্তু দেশে এমনও এক নদী রয়েছে যেখানে স্নান করলে বাড়বে পাপের বোঝা। ভুল করেও এই নদীতে পা ডোবান না কেউই। কোথায় রয়েছে এমন নদী? আসুন শুনে নিই।
যে কোনও শুভ কাজ আরম্ভে একটু গঙ্গাজল ছিটিয়ে নেওয়াই হিন্দু ধর্মের রীতি। তাতে সমস্ত কিছু শুদ্ধ হয়ে পূজার্চনার উপযোগী হয়ে ওঠে। গঙ্গাজলে শুদ্ধতার প্রতি এই বিশ্বাসের কারণেই ভক্তেরা গঙ্গাস্নান করেন। মনে করা হয়, বহু পুজোপাঠ, মন্ত্রোচ্চারণে যে ফল লাভ করা যায়, সেই একই ফল লাভ করা যায় গঙ্গাস্নানেই। শুধু তাই নয়, যেখানে গঙ্গা নেই সেখানকার স্থানীয় নদীকেও একইভাবে পুণ্যতোয়া মনে করেন অনেকেই। এ প্রসঙ্গে যমুনা, কাবেরী কিংবা নর্মদা নদীর কথা বলা যেতে পারে। কিন্তু নদীতে স্নান করলে পাপের বোঝাও বাড়তে পারে এমনটা কখনও শুনেছেন?
আরও শুনুন: গঙ্গাস্নানে পুণ্য হয়, কেন এই বিশ্বাস অটুট ভক্তদের?
অবাক লাগলেও সত্যি। বিহারের এক নদীকে ঘিরে রয়েছে এমনই জনশ্রুতি। বিহারের কাইমুর অঞ্চলে জন্ম নেওয়া এই নদী বিহার এবং উত্তরপ্রেদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। স্থানীয় ভাষায় যা ‘কর্মনাশা’ নদী হিসেবে পরিচিত। এই নদীর জল কোনও শুভকাজে ব্যবহার করা হয় না। এমনকি এই নদীতে স্নান করাও নিষিদ্ধ বলা চলে। মনে করা হয়, এখানে স্রেফ পা ডোবালেই পাপের বোঝা বাড়তে থাকে। সেইসঙ্গে জীবনে নানা সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। কোনও শুভ কাজে যদি এই নদীর জল ব্যবহার করা হয়, তবে তা পণ্ড হতে বাধ্য। এমনটা মনে করেন স্থানীয়রা। তাই কর্মনাশা নদীর আশেপাশে কেউই বসতি গড়েন না। তবু নিরুপায় হয়ে কাউকে যদি এমনটা করতেও হয়, তাহলে নদীর জল যেন গায়ে না লাগে সে বিষয়ে রীতিমতো সচেতন থাকেন তাঁরা। কিন্তু এই জনশ্রুতির কারণ ঠিক কী?
আরও শুনুন: পুজোর সময় কেন আরতি করা হয়? কী এর তাৎপর্য?
সে কথা জানতে হলে, উল্টাতে হবে পুরাণের পাতা। মহারাজা হরিশচন্দ্রের কথা তো অনেকেই শুনেছেন। তাঁর বাবা মহারাজ সত্যব্রতের কারণেই এই কর্মনাশা নদীর জন্ম। কথিত আছে, সত্যব্রত একবার জীবীত অবস্থায় স্বর্গে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কালের নিয়মে এমনটা সম্ভব নয়। তাই মহারাজা নিজের ইচ্ছার কথা প্রথমে মহর্ষি বশিষ্ঠকে বলেন। গুরু হিসেবে তিনি মহারাজকে সেই কাজ করতে তখনই নিষেধ করেন। কিন্তু রাজা তাতে কর্নপাত না করেই অন্য পথ খুঁজতে শুরু করেন। হাজির হন মহর্ষি বিশ্বামিত্রের কাছে। এই দুই ঋষির মধ্যেই তেমন বনিবনা ছিল না। তাই যে কাজে বশিষ্ঠ নিষেধ করেছেন, একপ্রকার জেদ দেখিয়েই সেই কাজ সম্পন্ন করেন বিশ্বামিত্র। তপস্যার জোরে তিনি রাজা সত্যব্রতকে জীবিত অবস্থতাতেই স্বর্গে পাঠান। রাজা তো সেখানে পৌঁছে ভীষন খুশি। কিন্তু দেবরাজ ইন্দ্র এতে বেজায় চটে যান। তক্ষনি সত্যব্রতের মুণ্ডচ্ছেদ করেন তিনি। এদিকে ঘটনার কথা জানতে পেরে রেগে যান বিশ্বামিত্রও। এইসব মহর্ষিদের দেবতারাও সমঝে চলতেন। তপস্যার জোরে তাঁরা দেবতাদের সঙ্গেও যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার ক্ষমতা রাখতেন। এক্ষেত্রেও হয়েছিল তেমনটাই। বিশ্বামিত্র দেবতাদের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করেন। মাঝে আটকে যান সত্যব্রতের দেহ। যদিও তাঁর মুণ্ড ততক্ষণে মর্তে পড়ে গিয়েছে। স্রেফ ধর টুকু স্বর্গ আর মর্তের মাঝে আটকে। কথিত আছে, এইসময় সত্যব্রতের মুখ থেকে লালা ঝরতে শুরু করে। এবং সেই লালা থেকেই জন্ম হয় কর্মনাশা নদীর। যেহেতু এমন একটা ঘটনার মাধ্যমে নদীটি জন্ম নিয়েছিল, তাই অনেকেই মনে করেন এই নদী অভিশপ্ত। তাই সকলেই এই নদীকে একপ্রকার এড়িয়ে চলেন। যদিও এই নদীকে ঘিরে আরও অনেক জনশ্রুতি প্রচলিত রয়েছে। তবে বেশিরভাগই সত্যব্রতের এই কাহিনিকে মান্যতা দেন।