দুর্গাপুজো আর বাসন্তীপুজো। দেবী দুর্গার আরাধনা বলতে বাঙালিরা মূলত এই দুটো উৎসবই বোঝেন। তবে উত্তর ভারতে বিশেষভাবে জনপ্রিয় নবরাত্রি। দেবী মহামায়ারই আরাধনা। তবে বাংলার দুর্গাপুজোর মতো চারদিন নয়, দেবীর আরাধনা করা হয় নদিন ধরে। আর এই নবরাত্রি ব্রতও পালিত হয় বছরে দু-বার। প্রথমবার শরৎকালে আর দ্বিতীয়বার বসন্তকালে। শাস্ত্রের কী ব্যাখ্যা রয়েছে এর নেপথ্যে? আসুন শুনে নিই।
উত্তর ভারতে অন্যতম জনপ্রিয় উৎসব নবরাত্রি। নিয়ম অনুযায়ী, এই বিশেষ উৎসবে টানা ন দিন ন রাত দেবী দুর্গার আরাধনা করতে হয়। বাংলায় যেমন দুর্গাপুজো আর বাসন্তীপুজো। নবরাত্রির ক্ষেত্রেও সেই একই নিয়ম। বছরে দুবার নয়দিন ধরে চলে দেবী মহামায়ার আরাধনবা। নেপথ্যে পৌরাণিক ব্যাখ্যা যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে বিজ্ঞানের যুক্তিও।
শুনে নিন: আছে ‘পাপমোচন কুণ্ড’, বছরে একদিনই দর্শন মেলে কামাখ্যার বিশেষ শিবলিঙ্গের
তিনি দশপ্রহরণধারিণী। তিনি মহিষাসুরমর্দিনী। আবার তিনিই জগতের মাতা, জগদম্বা। বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নামে পূজিতা হন দেবী। তাঁর রূপের প্রকাশ সর্বত্রই। যার মধ্যে বিশেষ নয়টি রূপ নবদুর্গা নামে পরিচিত। সেখানে তিনি কখনও ভয়ঙ্করী কালরাত্রি। আবার কখনও স্নেহময়ী স্কন্দমাতা। নয়দিন ধরে দুর্গার এই নটি রূপের আরাধনাই হল নবরাত্রি ব্রত। তা এই বিশেষ ব্রত পালন করার নিয়মও নেহাত কম নয়। শাস্ত্র বলে, এই নয়দিন ব্রতচারীকে সম্পূর্ণ সাত্ত্বিক ভাবে থাকতে হয়। সারাদিন উপোস থেকে দেবীর পুজো। তারপর সামান্য ফলজল। এই সামান্য আহারেই ওই কয়েকটি দিন কাটাতে হয়। ব্রতের অন্যতম নিয়ম কুমারী পূজা। নজন বালিকাকে দেবীজ্ঞানে পুজো করতে হয়। নিয়মের দিক দিয়ে দেখলে বাংলার দুর্গাপুজো বা বাসন্তীপুজোর সঙ্গে বিশেষ অমিল নেই এই ব্রতের। শুধু দিনের পার্থক্যটাই যা রয়েছে। বলা বাহুল্য, এই ব্রতের পৌরাণিক ব্যাখ্যার সঙ্গেও বেশ মিল পাওয়া যায় বাংলায় প্রচলিত দেবী দুর্গার পুজোগুলির। শুধু শরৎকালে রামচন্দ্রের অকালবোধনের সঙ্গে সেখানে যোগ হয় রাবণ বধের কাহিনি। অন্যদিকে বসন্তকালে বাসন্তীপুজোর নেপথ্যে থাকা কাহিনির সঙ্গেও বেশ মিল রয়েছে চৈত্র মাসের নবরাত্রি ব্রতের।
আরও শুনুন: নারায়ণ পুজোয় দিতেই হয় তুলসী পাতা, নেপথ্যে পুরাণের কোন গল্প?
তবে বিজ্ঞানের দিক দিয়ে দেখলে নবরাত্রি পালনের নেপথ্যে যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। আসলে শরৎকাল আর বসন্তকাল, বছরের এই দুটি সময়ই ঋতু পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। যার জেরে নানান শারীরিক সমস্যায় ভুগতে হয় সকলকে। এবার এই সময় যদি অতিরিক্ত তামসিক আহার করা হয়, তাহলে সেই সমস্যা আরও বেড়ে যায় বই কমে না। সেই সমস্যা থেকে বাঁচতেই এই ব্রতের জন্ম। মুনি ঋষিরা সব দিক বিচার করেই ব্রতের নিয়ম তৈরি করেছিলেন। ঋতু পরিবর্তনের এই সময়কালে কেউ যদি দৈবের অছিলায় সাত্ত্বিক আহার করে, তাহলে তা অবশ্যই মঙ্গলজনক। ধীরে ধীরে এই ব্রতের প্রতি মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য নানান রকমের দৈব কাহিনির প্রলেপ চেপেছে। অন্যদিকে ব্রত পালনকারীরা যখন উপলব্ধি করেছেন ব্রতের ফলে শরীর আসলে সুস্থ থাকছে, তখনই তা দেবীর মাহাত্ম্য হিসেবে আরও প্রচার পেয়েছে। আর এইভাবেই দিনে দিনে অসংখ্য ভক্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে এই পূজার চল।