সংস্কৃতে ‘গূ’ শব্দের অর্থ, অন্ধকার, ‘রু’ শব্দের অর্থ আলো। গুরু শব্দের সমগ্র অর্থ, যিনি অন্ধকার থেকে আমাদের আলোর দিকে নিয়ে যান। কেন গুরুর উদ্দেশে উৎসর্গীকৃত একটি বিশেষ দিন? গুরুপূর্ণিমার তাৎপর্য কী? শোনাচ্ছেন, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়।
ভারত প্রাচীনতার দেশ, মহানতার দেশ। এই দেশ গুরু শিষ্য পরম্পরার ভূমি। অন্তত পনেরো হাজার বছর আগের কথা। কৈলাসে কঠোর যোগে মগ্ন মহাদেব। সাতজন শিষ্য তাঁর থেকে শিক্ষালাভের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। মহাদেব তাঁদের দিকে দৃষ্টিপাত অবধি করেননি। এই সাতজন ছিলেন সপ্তঋষি, অত্রি, অঙ্গিরা, মরীচি, পুলহ, পুলস্ত্য, ক্রতু এবং বশিষ্ঠ। তাঁরা অপেক্ষা করতে লাগলেন। মহাদেব তাঁর যোগধ্যান জারি রাখলেন। এইভাবে কেটে গেল প্রায় আশি বছর।
আরও শুনুন: অমরত্বের সন্ধানে কোন পথে ধাবিত হয় আমাদের চিন্তা?
সেদিন পৃথিবীর দক্ষিণায়ন শুরুর দিন। পৃথিবী উত্তর থেকে দক্ষিণমুখী হবে। সেদিন আদিযোগী শিব, হলেন আদিগুরু। সাতাশি বছরের অপেক্ষার পর সেদিন তিনি চেয়ে দেখলেন, তাঁর শিষ্যদের দিকে। দেখলেন তাঁরা হয়ে উঠেছেন দীপ্তিমান, জ্ঞান ধারণের আধার। অপেক্ষায় তাঁরা ম্লান হয়ে যাননি। তাঁদের জ্ঞানতৃষ্ণা তখনও বর্ষার নবতরুদলের মতো সজীব। তিনি নিজেকে আটকে রাখলেন না। পূর্ণিমার বিশেষ এই দিনে উদ্দেশ্যে ব্রতী হলেন শিষ্যদের শিক্ষা প্রদানে। তিনিই প্রথম জগৎ গুরু। সেইদিন থেকেই এই বিশেষ দিন পূর্ণিমা, গুরুর উদ্দেশে উৎসর্গীকৃত।
আরও শুনুন: Spiritual: শাস্ত্রমতে কখন সত্যের থেকে মিথ্যে হয়ে ওঠে শ্রেয়?
গুরু শব্দটিকে ভেঙে দেখলে তাৎপর্য মেলে। সংস্কৃতে ‘গূ’ শব্দের অর্থ, অন্ধকার, ‘রু’ শব্দের অর্থ আলো। গুরু শব্দের সমগ্র অর্থ, যিনি অন্ধকার থেকে আমাদের আলোর দিকে নিয়ে যান। এক্ষেত্রে অন্ধকার কী? অন্ধকার আমাদের মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অজ্ঞনতা, ভয়, সংশয়, জিজ্ঞাসা, সন্দেহ। এইসব যিনি অনায়াসে দূর করেন, তিনিই গুরু। তিনি জ্যোতির্ময়।
অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া।
চক্ষুরুন্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ।।
অর্থাৎ, যিনি অজ্ঞান নামক অন্ধকার থেকে জ্ঞান নামক শলাকার মাধ্যমে আমাদের জ্ঞানচক্ষু উন্মীলিত করেন, সেই গুরুকে প্রণাম জানাই।
গুরুপূর্ণিমার ব্যাখ্যা শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।