১৮৮৪ সালে ফাঁসি হয় ত্রৈলোক্যতারিণীর। বলা হয়, সেই-ই হল কলকাতার প্রথম মহিলা সিরিয়াল কিলার। তার অপরাধের রোমহর্ষক গল্পের আড়ালেই থেকে যায় বাংলার এক ভাগ্যহীনা মেয়ের লুকনো কান্নাও। জীবন যাকে টেনে এনেছিল অন্ধকারে। সেখান থেকে আলোয় ফেরার পথ পায়নি বলেই অন্ধকারকেই যে জড়িয়ে নিয়েছিল জীবনের সঙ্গে।
নিজের চেয়ারে গুম হয়ে বসে ছিলেন দারোগাবাবুর। দুঁদে দারোগা প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়। আশেপাশে যাঁরা ছিলেন, তাঁরাও একটু দূরে দূরেই আছেন। এই মুহূর্তে দারোগা প্রিয়নাথ মুখুজ্জেকে কে ঘাঁটাবে! কারণটা অবশ্য প্রায় সকলেরই জানা। হাতের মুঠোয় পেয়েও ফসকে গিয়েছে একজন অপরাধী। তাতে অবশ্য দারোগাবাবুর দোষ নেই। তিনি তদন্তে কসুর করেননি। কিন্তু প্রমাণ! অপরাধী সাব্যস্ত করতে গেলে পর্যাপ্ত প্রমাণ দরকার তো! তা আর ছিল কই! সেই ফাঁক দিয়েই জলের মাছ জাল কেটে মিশে গেল জলে।
আরও শুনুন – শিবরাম চক্রবর্তীর গল্প অবলম্বনে নাটক ‘এক ভূতুড়ে কাণ্ড’
দারোগাবাবুর চোখের সামনে এখনও ভাসছে পুরো ঘটনাটা। একদিক থেকে দেখতে গেলে ছাপোষা কেস। রানির গয়না চুরি। কিন্তু এটুকু বললে কেসের আর কিছুই থাকে না। আসলে এ কেসের শিকড় যে বহু গভীরে তা গোড়াতেই বুঝতে পেরেছিলেন দারোগাবাবু। একটা ভাত টিপেই হাঁড়ির খবর যেমন বুঝে যায় রাঁধুনিরা, তেমনই এই কেসের তথ্যই দারোগাবাবুকে ক্রমশ চমকে দিচ্ছিল। এক একটা তথ্য তিনি যখনই জানতে পারছেন, বুঝতে পারছেন রহস্যের জাল অনেকদূর অবধি ছড়িয়ে আছে।
আরও শুনুন – সুকুমার রায়ের গল্প ‘জগ্যিদাসের মামা’
প্রথমত, গয়না রানির বাড়ি থেকে চুরি যায়নি। বড়বাজারের একটা দোকানে সেই গয়না অর্ডার দেওয়া হয়েছিল। কথা ছিল, গয়না রানির কাছে পৌঁছে দেবেন দোকানের কোনও কর্মচারী। তখনই মিটিয়ে দেওয়া হবে দাম। কথামতো গয়না তৈরি করে দোকানের মালিক তাঁর এক বিশ্বস্ত কর্মচারীর হাতে সেগুলো পাঠিয়ে দিলেন। কর্মচারীটি সেই যে গেলেন, আর ফিরলেন না। রহস্যজনক ভাবে উধাও হলেন তিনি। লোকটাই কি গয়না চুরি করে পালাল! নাকি তাকে খুন করল কেউ? ভাবতে শুরু করলেন দারোগাবাবু।
আরও শুনুন – SPECIAL PODCAST: উড়ো চিঠির হাতছানি আর স্মৃতির কোলাজে ডুব, বাঙালির বাণীবন্দনা
তদন্ত যত এগোচ্ছে তত যেন বিস্মিত হচ্ছেন তিনি। অনেকগুলো জট একসঙ্গে পাকিয়ে উঠেছে। এক, তো না উদ্ধার হয়েছে গয়না, না মিলেছে টাকা। তার থেকেও বড় বিষয় হল, এই যে রানির কথা জানা যাচ্ছিল, সেই রানিকে কেউ চোখেই দেখেনি। রানি নাকি গাড়িতে করে এসেছিল, অর্ডারও দিয়েছিল। ঐ পর্যন্তই। তাহলে কি রানির অর্ডার দেওয়ার গল্পটাই ভুয়ো! তদন্ত আর একটু এগোতেই এল আর এক চমক। উদ্ধার হল সেই কর্মচারীর গলাপচা মৃতদেহ। অর্থাৎ সে গয়না চুরি করেনি, তাকে খুনই করা হয়েছে।
শুনে নিন গল্পের বাকিটা।