গ্রাম বাংলায় ঝুলন পালনের এক নিজস্ব রীতি রয়েছে। তবে শুধু বাংলা নয়, ঝুলন উৎসবে মেতে ওঠে সারা দেশের কৃষ্ণ ভক্তরা। বিশেষত বৃন্দাবন-মথুরায় এই সময় ভক্তদের ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। বাড়িতেই ঠিক কীভাবে পালন করবেন এই বিশেষ উৎসব? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
রাধা কৃষ্ণের প্রেম উদযাপনের উৎসব। ঝুলন পূর্ণিমায় গোটা দেশের কৃষ্ণ ভক্তরা মেতে ওঠেন বিশেষ উৎসবে। এইসময় রাধা-কৃষ্ণের যুগল বিগ্রহকে বিশেষভাবে সাজানোর নিয়ম রয়েছে। সেইসঙ্গে সাজানো হয় কৃষ্ণ মন্দিরও। তবে গ্রাম বাংলায় ঝুলন পালনের এক নিজস্ব রীতি রয়েছে। ঘরোয়া ভাবেই বিভিন্ন পুতুল, খেলনা দিয়ে সাজানো হয় ‘ঝুলন’।
আরও শুনুন: বছরে একদিনই খোলা থাকে মন্দির, নাগচন্দ্রেশ্বরের দর্শনে কাটে কালসর্পদোষ
আসলে এই উৎসব প্রেমের উৎসব। স্রেফ রাধা কৃষ্ণ নন, ঝুলন উৎসবের অঙ্গ হিসেবে থাকেন গোপিনীরাও। কৃষ্ণপ্রেমে মত্ত হয়ে তাঁরা সকলেই মদনমোহনকে ঘিরে নৃত্য করেন। স্বয়ং কৃষ্ণও সেই তালে পা মেলান। দেশের বিভিন্ন কৃষ্ণ মন্দিরে এই ধরনের মূর্তি দেখা যায় ঝুলনের সময়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিত্য পূজিত রাধা কৃষ্ণের যুগল মূর্তিকে দোলনায় বসিয়ে রাখা হয়। ভক্তরা ধীরে ধীরে সেই দলনার রশিতে টান দিতে থাকেন। আর মন্দির কৃষ্ণ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। বৈষ্ণব মতে, এই ঝুলন আসলে শ্রী কৃষ্ণের অন্যতম লীলা মাত্র। তাই শাস্ত্রে ঝুলন উৎসব পালনের বিশেষ কিছু গুণের কথা উল্লিখিত রয়েছে। তবে ঝুলন স্রেফ একদিন পালিত হয় না। এই উৎসব পালিত হয় ৫দিন ধরে। পঞ্জিকা মতে এই উৎসবে একাদশী তিথিতে শুরু হয়, পরবর্তী পূর্ণিমা তিথিতে শেষ হয়। গোটা সময়টা জুড়েই রাধা কৃষ্ণের যুগল মূর্তিকে ঘিরে চলে ভক্তদের উন্মাদনা। কৃষ্ণ মন্দিরের মতো , বাড়িতেও এই ঝুলন উৎসব পালন করা যেতেই পারে। এতে ভাগ্য বদলেরও সম্ভাবনা রয়েছে। গৃহস্ত পরিবারে শ্রী কৃষ্ণের এই বিশেষ উৎসব পালন অতি শুভ বলেই মনে করা হয়।
আরও শুনুন: ‘কালো মেয়ে’র গায়ের রং সবুজ! কী গল্প লুকিয়ে এই বিগ্রহের নেপথ্যে?
তবে গ্রাম বাংলায় ঝুলন উপলক্ষে যে বিশেষভাবে সাজানোর চল রয়েছে, শাস্ত্র ঠিক সেই নিয়মের কথা বলে না। এখানে মূলত কৃষ্ণ আরাধনার কিছু নিয়মের উল্লেখ পেওয়া যায়। বৈষ্ণব মতে এই পাঁচদিন বাড়ির রাধা কৃষ্ণ মূর্তিকেও ফুল মালা দিয়ে সাজানো যেতে পারে। সম্ভব হলে একটা দোলনার ব্যবস্থা করে সেখানে বিগ্রহটি রাখুন। বিগ্রহ না থাকলে রাধা কৃষ্ণের ছবিও ব্যবহার করা যেতে পারে। যে কোনও ফুল দিয়েই কৃষ্ণের পুজো করা যেতে পারে। তবে লাল ফুল ব্যবহার না করাই ভাল। কৃষ্ণ পছন্দ করেন হলুদ ও সাদা বর্ণের ফুল। তাই বিগ্রহের পোশাকের ক্ষেত্রেও এই দুটি রঙ ব্যবহার করাই শুভ। ঝুলন চলাকালীন সাত্ত্বিক আহারের নিয়ম রয়েছে। এই সময় বাড়িতে আমিষ ভক্ষণ করা একেবারেই অনুচিত। ভক্তিভরে সকাল সকাল স্নান সেরে কৃষ্ণ মূর্তি সাজিয়ে নিতে হয়। তারপর নিজের মতো করে সেই বিগ্রহের আরাধনা করা যেতে পারে। কৃষ্ণের পছন্দের ভোগ পায়েস, ক্ষীর ও মালপোয়া। পুজোর নৈবেদ্য হিসেবে এগুলি দেওয়া যেতে পারে। একইসঙ্গে এই সময় তুলসী মঞ্চও সাজানো উচিত। প্রতিদিন নিয়ম করে তুলসী মঞ্চে প্রদীপ জ্বালানো যেতে পারে। তবে এইসময় কিছু বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। যেমন বাড়িতে ঝুলন সাজালে সন্ধ্যেবেলা কখনই ঝাঁট দেওয়া উচিত না। এছাড়া এ সময় বাড়িতে কেউ সাহায্য চাইতে এলে, তাঁকে কখনই ফেরাতে নেই। এইসব নিয়ম মাথায় রেখে বাড়িতেই ‘ঝুলন’ আয়োজন করা যেতেই পারে। এতে জীবনের নানা বাধা কেটে যায়। কৃষ্ণের আশীর্বাদে ভবিষ্যৎ জীবন আরও সুন্দর হয়ে উঠতে পারে।