ত্রিলোকের সর্বত্রই তাঁর অবাধ বিচরণ। আবার স্বর্গলোকের যে কোনও অনুষ্ঠানেই থাকে তাঁর আবশ্যিক নিমন্ত্রণ। স্বয়ং ব্রহ্মার মানসপুত্র হলেও সরাসরি দেবর্ষি নারদকে দেবতা বলেন স্বীকার করেন না অনেকেই। তাহলে স্বর্গলোকে তাঁর আসল অবস্থান ঠিক কেমন? আসুন শুনে নেওয়া যাক দেবর্ষি নারদের জানা অজানা কাহিনি।
সৃষ্টির আদিলগ্নে ব্রহ্মার মন থেকে জন্ম হয় নারদের। তাই তাঁকে ব্রহ্মার মানসপুত্র হিসেবেই সকলে চেনে। আবার তাঁর স্বভাবের দরুন তাঁকে দেবর্ষি নামেই সম্বোধন করা হয়। আবার পুরাণমতে তিনি ব্রহ্মার অংশ হলেও স্বয়ং ব্রহ্মদেবই তাঁর দেবত্ব ছিনিয়ে নিয়েছিলেন।
আরও শুনুন: থিমের দৌড়ে হেরে ভূত সাবেকিয়ানা, অবলুপ্তিই ভবিষ্যৎ বাংলার চালচিত্রর?
কেন জানেন?
তাঁর জন্মের পরই ব্রহ্মা তাঁকে আদেশ দেন সংসার ধর্ম পালন করে সৃষ্টিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু নারদের সংসার ধর্ম পালনে কোনও আগ্রহ ছিল না। তিনি ঈশ্বরের নামগান করেই জীবন নির্বাহ করতে চেয়েছিলেন। এদিকে স্বয়ং ব্রহ্মার আদেশ অমান্য করায় তিনি নারদকে অভিশাপ দেন, গান্ধর্বকুলে জন্ম নেওয়ার জন্য। স্বয়ং ব্রহ্মদেবই তাঁকে বলেন, যে সংসারধর্ম পালনে তিনি অনীহা প্রকাশ করলেন সেই সংসারের সকল ঝঞ্ঝাটের মূলে থাকবেন নারদ। যার দরুন এখনও বিভিন্ন লোককথায় নারদকে কলহের দেবতা বলে পরিচয় দেওয়া হয়। এরপর উপবর্ণ নাম নিয়ে নারদ জন্ম নিলেন গান্ধর্বকুলে। গন্ধর্ব হওয়ার পর নারদ সঙ্গীতচর্চাকেই জীবনের একমাত্র অবলম্বন করে তোলেন। স্বর্গসভায় গীত পরিবেশন করে দেবতাদের মনোরঞ্জনই ছিল তাঁর প্রধান কাজ। কিন্তু ইন্দ্রসভায় অপ্সরা রম্ভার নৃত্য দেখে নারদ অসংযমী হয়ে পড়েন। এহেন আচরণের জন্য তাঁকে তখনই স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করা হয়। একইসঙ্গে দেবকুলের পক্ষ থেকে তাঁকে মানবজন্মের অভিশাপ দেওয়া হয়।
আরও শুনুন: কৌশিকী অমাবস্যায় আবির্ভূত হন দেবী তারা, কী মাহাত্ম্য এই তিথির?
এবার নারদের জন্ম হয় রাজা দ্রুমিলের বন্ধ্যা পত্নী কলাবতীর গর্ভে। কিন্তু জন্মের পরেই তাঁর পিতা তাঁদের পরিত্যাগ করে চলে যান। বাধ্য হয়ে সদ্যোজাত পুত্রকে নিয়ে কলাবতী বিভিন্ন ঋষিদের আশ্রমে ঘুরতে থাকেন। বিভিন্ন ঋষির আশ্রমে ঘুরতে ঘুরতেই নারদ হয়ে ওঠেন প্রবল বিষ্ণুভক্ত। একদিন হঠাৎ নারদের মা-ও ইহলোক ত্যাগ করেন। অসহায় নারদ উপস্থিত হন ঋষিদের দরবারে। তাঁকে ভালো করে দেখেই ঋষিরা বুঝতে পারেন তাঁর পূর্বজন্মের পরিচয়। একইসঙ্গে নারদের প্রবল বিষ্ণুভক্তির দরুন তিনি সহজেই ঋষিদের প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন। ধীরে ধীরে সেই আশ্রমের ঋষিদের কাছ থেকেই পূর্বজন্মের কথা জানতে পারেন নারদ। তারপর দীর্ঘ তপস্যার করে দিব্যজ্ঞান লাভ করেন। অবশেষে স্বর্গলোকে নিজের পুরনো জায়গাও ফিরিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। অগাধ পাণ্ডিত্যের দরুন তাঁর পরিচয় হয় দেবর্ষি রূপে।