ক্রমশ পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে ইউক্রেনে। দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন অসংখ্য বাসিন্দা। প্রতিবেশী দেশের সীমান্তগুলিতে ভিড় করছে শরণার্থী স্রোত। যুদ্ধ, বোমা, গোলাগুলি, বারুদগন্ধ- সমস্ত আতঙ্ক মাথায় করেই হাজার হাজার ইউক্রেনবাসীকে সীমান্ত পার করাচ্ছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক শিখ দম্পতি। হাসপাতালে পৌঁছে দিচ্ছেন খাবার-ওষুধ, সাহায্য। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের সেই ব্যক্তিগত যুদ্ধের কথা শেয়ার করে নিয়েছেন দম্পতি। কুড়িয়েছেন কুর্নিশ। শুনে নিন তাঁদের গল্প।
একটানা যুদ্ধে নাজেহাল ইউক্রেন। দেখতে দেখতে উনিশ দিনে পড়ল রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ। তবে সংঘাত থামার চিহ্ন নেই। তৃতীয়বারের বৈঠকেও কোনও রফাসূত্র বের করতে পারেনি দুই দেশ। যুদ্ধের পারদ বরং চড়িয়েই চলেছে রুশ বাহিনী। এরই মধ্যে হামলা চলেছে কিন্ডারগার্ডেন স্কুলের পাশে। এমনকি মানবতার সব সীমা অতিক্রম করে ইউক্রেনের একটি মেটারনিটি হাসপাতালে বোমা ফেলেছে রাশিয়া। সেখানে মৃত্যু হয়েছে অসংখ্য সদ্যোজাতর। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ জটিল।
আর এই অবস্থায় দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন বহু বাসিন্দা। সীমান্ত পেরিয়ে আশ্রয় নিতে চাইছেন প্রতিবেশী দেশগুলিতে। শরণার্থীদের ভিড়ে গিজগিজ করছে সংলগ্ন দেশগুলির সীমান্ত। দেশের বেশির ভাগ পরিষেবা বন্ধ। ফলে পালানোও যে খুব সহজ হচ্ছে তা নয়। মাইলের পর মাইল পথ পায়ে হেঁটেই পাড়ি দিচ্ছেন বিপদগ্রস্তরা। সবাই সবার মতো করে প্রাণ বাঁচাতে ব্যাস্ত।
আরও শুনুন: নাগরিকদের পাশে দাঁড়াতে সীমান্ত থেকে ফের ইউক্রেনে ফিরলেন মা, উদ্বিগ্ন মুম্বাইয়ের ফিল্মমেকার
তবু তার মধ্যেই ব্যতিক্রম এই ভারতীয় বংশোদ্ভুত শিখ দম্পতি। সবাই যেখানে নিজের মতো করে প্রাণ বাঁচাতে ব্যাস্ত, সেখানে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে চলেছেন এই দম্পতি। লোকজনকে সীমান্ত পার করার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন এঁরা। পোল্যান্ড-ইউক্রেন সীমান্ত দিয়ে তাঁদের পৌঁছে দিতে চাইছেন নিরাপদ স্থানে। তাদের বড় অংশ জুড়েই রয়েছেন মহিলা আর শিশু। তাঁদের বিমানবন্দর বা রেলস্টেশনে পৌঁছে দিতে এগিয়ে এসেছেন কানওয়ার সিং ও তাঁর স্ত্রী জ্যাস। শুধু তাই নয়, সীমান্ত থেকে মেডিক্যাল সাহায্য ও খাবারদাবার পৌঁছে দিচ্ছেন কিয়েভের হাসপাতালগুলিতে।
পোলিশ হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাকশন অর্গানাইজেশনের তরফে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে সহায়তা পাঠানোর জন্য একটি বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। যেখানে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যোগ দিয়েছেন এই দম্পতি। আর সেই দায়িত্ব পালন করতেই যুদ্ধ মাথায় করে ছুটে বেড়াচ্ছেন এরা।
আরও শুনুন: যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ! প্রাণভয়ে সন্তানকে নিয়ে ঘরছাড়া প্রাক্তন ইউক্রেন-সুন্দরী
২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধাক্রান্ত দেশগুলিতে সাহায্য পৌঁছে দিয়ে আসছে এই পোলিশ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি। পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশ থেকেই মূলত কাজ করে সংস্থাটি। বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪০টি দেশে ইতিমধ্যেই সাহায্য পৌঁছে দিয়েছে তারা। যুদ্ধবিধ্বস্ত বা প্রাকৃতিক বিপর্জয়ে জেরবার মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছে এই স্বেচ্ছাসেবী দল। আর যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে তাদের হয়ে উদয়াস্ত খেটে চলেছেন কানওয়ার ও জ্যাস।
সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে নিজেদের রোজনামচা শেয়ার করে নিয়েছিলেন এই দম্পতি। জানিয়েছেন, প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন কোণা থেকে ইউক্রেন ছাড়তে চাওয়া মানুষদের নিয়ে আসেন পোল্যান্ড সীমান্তে। তার পর ওয়ারশ থেকে আসা ওষুধ, খাবারদাবার, স্যানিটারি প্যাড থেকে শুরু করে নানারকম সাহায্য পৌঁছে দেন কিয়েভের বিভিন্ন হাসপাতালে। তার পর ফের বাসিন্দাদের সীমান্ত পেরোতে সাহায্য করেন। যুদ্ধের আতঙ্ক, মৃত্যুর ভয় সব কিছু মাথায় নিয়েই প্রতিদিন এই দায়িত্ব পালন করে আসছেন কানওয়ার ও জ্যাস।
ইতিমধ্যেই ২০ লক্ষ বাসিন্দা ইউক্রেন ছেড়েছেন। সম্প্রতি এই তথ্য জানিয়েছে ইউক্রেনের শরণার্থী সংস্থা ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি। আর তাদের মধ্য কতজনের যে সহায় হয়েছিলেন কানওয়ার দম্পতি তার বোধহয় ইয়ত্তা নেই। তাঁদের এই ব্যক্তিগত যুদ্ধকে কুর্নিশ জানিয়েছে গোটা দুনিয়া।