নারীর কণ্ঠস্বর শুনলেই যদি পুরুষেরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন? অতএব নারীর কথা বলার পথেই দেওয়াল তোলা হোক! হ্যাঁ, আপাতত সেই পথেই হাঁটছে তালিবান। নতুন করে কী ফতোয়া জারি করল তারা? শুনে নেওয়া যাক।
প্রকাশ্যে কথা বলবেন না মহিলারা। এমনকি বাড়ির ভিতরে কথা বললেও সেই আওয়াজ যেন বাড়ির বাইরে শোনা না যায়। আফগানভূমের মহিলাদের জন্য নয়া ফতোয়া জারি তালিবানের। কিন্তু কেন? কারণটাও খুব সহজ। মহিলাদের গলার আওয়াজ শুনলেই নাকি পুরুষেরা উত্তেজিত হয়ে পড়তে পারেন। আর পুরুষকে তো সংযমের বাঁধ দিতে বলা যাবে না, সে দায়ও নিতে হবে মহিলাদেরই। অতএব মহিলাদের কথা বলা বন্ধ করার পথেই হাঁটছে তালিবান। মহিলাদের রেডিও-টিভিতে অংশ নেওয়া, সঞ্চালনা করায় নিষেধ জারি হয়েছিল আগেই। এবার মহিলাদের প্রকাশ্যে গান গাওয়া বা কোরান পাঠেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। সব মিলিয়ে গোটা আফগানিস্তানের খোলা দুনিয়া যেন কোনোভাবেই মেয়েদের স্বর শুনতে না পায়, সেই ব্যবস্থাই পাকা করতে চাইছে সে দেশের তালিবান শাসক।
:আরও শুনুন:
রাতের পথে কেবল ধর্ষকের অধিকার নাকি! বহু আগেই শুরু ‘টেক ব্যাক দ্য নাইট’ আন্দোলনের
আফগানিস্তানে নতুন করে তালিবান শাসন শুরুর পরেই সকলের ভয় ছিল, তালিবান আমলে মেয়েদের ফের খাঁচায় পোরার চেষ্টা চলবে না তো? সেই ভয়ই তারপর থেকে একটু একটু করে বাস্তব হতে দেখছেন আফগান মেয়েরা। মেয়েদের হাই স্কুল এবং কলেজে যাওয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছে। তালিবানি ফতোয়ার জেরে গত তিন বছরে আফগানিস্তানের অন্তত ১৪ লক্ষ শিশুকন্যা স্কুলশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে, জানাচ্ছে ইউনেস্কোর রিপোর্ট। চাকরির দুনিয়াতেও নারীদের পা রাখার সুযোগ মেলা ভার। সবকিছুর পিছনেই তালিবানদের যুক্তি, পাছে মেয়েদের মুখ কিংবা শরীর পুরুষেরা দেখতে পায়! সম্প্রতি ১১৪ পৃষ্ঠার নয়া আদেশনামা জারি করে সেই যুক্তিই আরও আঁটসাঁট করেছে তারা। নতুন নিয়ম বলছে, ‘যদি মহিলাদের বাড়ি থেকে বাইরে বেরোতেই হয়, তাহলে তাঁদের অবশ্যই পুরুষদের থেকে নিজেদের মুখ এবং কণ্ঠস্বর লুকিয়ে রাখতে হবে। তাঁদের পোশাক যেন ছোট বা আঁটসাঁট না হয়। স্বামী বা আত্মীয় নন এমন পুরুষদের দিকে চোখ তুলেও তাকাতে পারবেন না তাঁরা। তাহলেই নাকি মহিলারা উত্তেজিত হয়ে পড়বেন কিংবা সেই পুরুষদের উত্তেজিত করে দেবেন, দাবি তালিবানদের।
আরও শুনুন:
নির্যাতনের দামে কেনা, তাই খোলা আকাশের অধিকার মেয়েদেরও
তালিবানদের নয়া নিয়ম নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠছে স্বাভাবিকভাবেই। তা ওঠারও কথা। তবে, এত বড় মাত্রায় না হলেও, সামাজিকভাবে এই প্রবণতা কি আমাদের একেবারেই অচেনা? যেখানে পুরুষের যে কোনও যৌন অসংযমকে লঘু করে দেখা হয়, আর একইসঙ্গে মনে করা হয়, তার নেপথ্যে মেয়েটিই কোনও না কোনওভাবে দায়ী। নারীর ধর্ষণের জন্য যখন তার পোশাককে দোষ দেওয়া হয়, তেমন মানসিকতা থেকেই তো এ কথা উঠতে পারে যে, নারীর কণ্ঠস্বর শুনলেও কামনা জাগবে পুরুষের। একটি গোটা রাষ্ট্র যে এ কথা মনে করছে, মনে করে ফতোয়াও জারি করছে, তা নারীদের জন্য বিপজ্জনক তো বটেই। তবে এই আবহেই সামাজিক প্রবণতাটির দিকেও ফিরে দেখা জরুরি।