কাবুলিওয়ালার দেশ তালিবানের দখলে। প্রায় দু-দশক পরে ফের আফগানভূমের দখল নিয়েছে তালিবান। আর তারপরই শুরু হয়েছে হাজারও কুকীর্তি। এক নজরে শুনে নেওয়া যাক, চারদিনের তালিবানি শাসনের কী কী নমুনা দেখল বিশ্ব।
তালিবান নাকি নিজেদের বদলে ফেলেছে অনেকটাই। অন্তত এমনটাই দাবি করছে তালিবানি শীর্ষ নেতারা। গতবারের থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার সরকারকে স্থিতিশীল করতে উদ্যোগী তারা। আর তাই মহিলাদের ক্ষেত্রে নিয়মের ফাঁস আলগা করা থেকে সন্ত্রস্ত আফগানদের কাজে ফেরানো –বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে তারা।
তবে, এসবের কতটা যে মুখের কথা, তা সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার দিকে চোখ রাখলেই বোঝা যাবে। মাত্র দিন চারেক হয়েছে, ক্ষমতা দখল করেছে তালিবান। ইতিমধ্যেই তারা জানিয়েছে, মেয়েদের অধিকার বজায় থাকবে, তবে তা ইসলামিক আইন মেনেই। কিন্তু যতটা নমনীয় কথাটা শুনতে মনে হয়, বাস্তব কিন্তু তেমনটা নয়। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমসূত্রে যা খবর বিশ্বের সামনে আসছে, তা কোনোভাবেই স্বস্তির নয়। জানা যাচ্ছে, ঠিকঠাক পর্দানশীন না হওয়ার কারণে ইতিমধ্যেই এক মহিলাকে গুলি করেছে তালিবান। গৃহবন্দি হয়ে আছেন সেখানকার মহিলা গভর্নর। ক্ষমতায় ফেরার একেবারে গোড়ার দিকেই মহিলা ব্যাংক কর্মীদের কাজ ছাড়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছিল তালিবান। সেই ভয়ে সন্ত্রস্ত কর্মরত মহিলারা। আপাতত কাজে ফিরছেন না তাঁরা। এমনকী পুরুষরাও ভয়ে আছে। মেয়েদের স্কুলে যাওয়া খুব স্বভাবিক ভাবেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে এই পরিস্থিতিতে। গতবারের তালিবানি শাসন দেখেছিল কীভাবে মেয়েদের যৌনদাসী করে রাখা হত। এবারের শাসনকালে মুখে তারা যাই-ই বলুক, দখলীকৃত এলেকা থেকে মহিলাদের অপহরণ করা হচ্ছে বলেও জানা যাচ্ছে। কোপ পড়ছে নাবালিকাদের উপরও।
আরও শুনুন: তালিবান মেরে ফেললেও মন্দির ছেড়ে পালাতে নারাজ হিন্দু পুরোহিত
তালিবানি অত্যাচারের মাত্রা ক্রমে স্পষ্ট হচ্ছে তাঁদের গুলি চালনার বহরে। জালালাবাদের একদল প্রতিবাদী চেয়েছিল তালিবানি পতাকার বদলে আফগান জাতীয় পতাকা অফিসের মাথায় তুলতে। এই নিয়ে ক্ষেপে যায় তালিবানরা। গুলি চালায় প্রতিবাদীদের দিকে। এক চিত্রসাংবাদিককে বেদম প্রহার করা হয়। আতঙ্কে ঘরছাড়া মানুষ যখন প্রাণপণে কাবুল বিমানবন্দরের দিকে দৌড়াচ্ছে তখন একজনকে গুলি করে মারে তালিবান। একটি পার্কে জয়রাইড নিতে দেখা গিয়েছিল তালিবানি যোদ্ধাদের। পরক্ষণেই সেই পার্ক জ্বালিয়ে দেয় তারা। যথেচ্ছ তছনচের ফলে খাদ্যশৃঙ্খল ভেঙে পড়েছে আফগানিস্তানে। কেননা খাদ্য মজুত করে রাখা হয় যে গুদামে, হয় সেগুলোকে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে নয় ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রায় ১কোটি ৪০ লক্ষ মানুষ তীব্র অনাহারের মুখে পড়েছেন।
আরও শুনুন: মোছা হচ্ছে বিজ্ঞাপনে মেয়েদের ছবি, তালিবানি ফতোয়ার রূপ দেখছে বিশ্ব
সব মিলিয়ে চারদিনের শাসনেই অজস্র কুকীর্তির নমুনা রেখেছে তালিবান। এই শাসন দীর্ঘমেয়াদী হলে এর ফল যে কী হবে, তা আন্দাজ করেই শিউরে উঠছে বিশ্ব।