কে বলে ‘মর্দ কো দর্দ নেহি হোতা’? নাহ্, এ নেহাত সিনেমার সংলাপ নয়। এই ইস্যুতে রীতিমতো তৈরি হয়ে গিয়েছে একখানা রাজনৈতিক দল। আর সেই দল নাকি লড়তে চলেছে চলতি লোকসভা নির্বাচনেও। অবাক হচ্ছেন? গল্প নাকি সত্যি! আসুন তাহলে শুনেই নেওয়া যাক।
মর্দ কো দর্দ নেহি হোতা- সেই কবে বিগ বি বলেছিলেন সিনেমায়। তারপর থেকে সেই বচ্চন-বাণী এমন ছড়িয়ে পড়ল যে, পুরুষের দুঃখের গল্প যেন দুষ্টু লোকের মতো ভ্যানিসই হয়ে গেল। তবে দোষ কি একা অমিতাভ বচ্চনের? মোটেও না। আসলে আমাদের সমাজের কাঠামোই এমন একটা ধারণা তৈরি করে রেখেছে। যেখানে পুরুষদের যে দুখ-যন্ত্রণা হতেই পারে, তার কোনও স্বীকৃতিই নেই। কেননা পুরুষ মানেই তো বীরপুরুষ। সেই বীরপুরুষের ঠেলায় যুগে যুগে মহিলাদের অবস্থা কাহিল হয়েছে। তার বিরুদ্ধে লড়াইও করছেন মহিলারা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, মহিলাদের পাশাপাশি ধারণার এই জাঁতাকল পিষে দিয়েছে পুরুষদেরও। ক্রমাগত পুরুষ ধারণার উনুনে কয়লা জোগাতে মানসিক অবসাদের স্বীকারও হয়ে পড়ছেন তাঁরা। তা নিয়ে চর্চাও হচ্ছে বিশ্বে।
আরও শুনুন: বায়না ছিল ‘কুড়কুড়ে’ চাই, আনতে বেমালুম ভুলে গেলেন স্বামী! রেগে ডিভোর্স চাইলেন স্ত্রী
তবে, এ তো একেবারে আলাদা প্রসঙ্গ। পুরুষদের এই দুঃখ-যন্ত্রণাকে সম্বল করে কি একটা রাজনৈতিক দল তৈরি হতে পারে? উত্তর হল, হতে পারে না, এমন রাজনৈতিক দল আছে। তাঁরা অতীতে নির্বাচনেও লড়েছে। চলতি লোকসভা ভোটেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলটির নাম হল, ‘মেরা অধিকার রাষ্ট্রীয় দল’ বা সংক্ষেপে ‘মর্দ’। দেশে পুরুষদের অধিকার রক্ষাই এই দলের প্রধান কর্মসূচি। পুরুষদের অধিকার বিষয়টি কী? পণ বা গৃহহিংসা সংক্রান্ত নানা মামলায় জড়িয়ে পড়তে হয় পুরুষদের। আইনি জটিলতায় ঘুরপাক খাওয়া এরকমই কয়েকজন পুরুষ, যাঁরা তাঁদের ন্যায্য অধিকারের কথা বলতে চাইছিলেন, তাঁরাই তৈরি করেন ‘মর্দ’। সেটা ২০০৯ সাল। দলের জনৈক প্রতিষ্ঠাতা সদস্য যেমন বলছেন, বিচ্ছেদের সময় তাঁর দুই সন্তানের অধিকার পান তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী। পরে তাঁর বিরুদ্ধে পণ ও গৃহহিংসার অভিযোগ আনা হয়। তাঁর দাবি, এই অভিযোগ মিথ্যা। তবে, যেহেতু আইনি লড়াই, তাই আদালতে তাঁকে যেতেই হয়েছে। তখনই তিনি এরকম অনেক পুরুষের সন্ধান পান। তাঁরাও একই রকম আইনি জটিলতায় আটকে। সকলে মিলে তখন একটি রাজনৈতিক দল তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। তাঁদের ট্যাগলাইন হল, মর্দ কো দর্দ হোতা হ্যায়।
আরও শুনুন: পাকিস্তানেরও যদি একজন মোদি থাকতেন! আক্ষেপ পড়শি দেশের ব্যবসায়ীর
শুধু দল গড়েই অবশ্য তাঁরা ক্ষান্ত হননি। ভোটে না লড়লে কি রাজনৈতিক দলের সম্ভ্রম থাকে! সেই ২০০৯ থেকে মোট সাত খানা নির্বাচনে লড়েছেন তাঁরা। ২০১৯-এর লোকসভায় বারাণসী এবং লখনউ থেকে প্রার্থী দিয়েছিল দল। ২০২০ তে একটি উপনির্বাচনেও প্রার্থী দিয়েছিল। তবে, কোনও ভোটেই এখনও জয়ের মুখ দেখেনি দলটি। তাতেও অবশ্য দমে যাওয়ার পাত্র নয় ‘মর্দ’। চলতি লোকসভা ভোটেও লখনউ, গোরক্ষপুর এবং রাঁচি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
Çhai Pe Charcha at Lucknow.@BiassBreaker @apSuryavanshi @BakraofDv @cskkanu @DeepikaBhardwaj @godseye321 @godseye321 @GSBorikar @emailkaroji pic.twitter.com/QsjwD59nOU
— MARD.Party (@MardParty) April 30, 2024
রাজনৈতিক দল যেহেতু অতএব তাদের ইস্তাহারও আছে। পুরুষদের অধিকার রক্ষাতেই জোর দেওয়া আছে সেই ইস্তাহারে। এবারে দলের দাবি মূ,লত দুটি- এক, নারীকল্যাণ মন্ত্রকের মতো একটি পুরুষকল্যাণ্মন্ত্রক তৈরি করা এবং, মহিলা কমিশনের আদলে জাতীয় পুরুষ কমিশন গঠন করা। পুরুষদের জন্য নিরাপত্তা বিল আনারও দাবি জানিয়েছে দলটি। সব মিলিয়ে পুরুষের অধিকার রক্ষায় যে দল দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, সে কথা ইস্তাহারের ছত্র ছত্রে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে, রাজনৈতিক দল যেহেতু, তাহলে তো সেখানে মহিলা সদস্যও থাকতে পারে। কিন্তু থাকবে কি? মর্দ-এর বক্তব্য, দলের লড়াই হল পুরুষদের অধিকার রক্ষা করা। নারীদের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই নয়। মহিলা নিরাপত্তা, মহিলা অধিকার, মহিলা ভোট নিয়ে যখন সব রাজনৈতিক দলগুলি সচেতন, তখন শুধু পুরুষদের হয়ে পুরুষদের নিয়েই লড়াই লড়তে চলেছে ‘মর্দ’। তবে, পুরুষদের পুরোপুরি সমর্থন কি তাঁরা পাবে? এযাবৎ ভোটের যা ফলাফল, তা অবশ্য উলটো কথাই বলছে। পরিস্থিতি বদলায় কিনা, সেটাই এখন দেখার।
Our Party’s Manifesto…@timesofindia @apSuryavanshi @amitdeshmra @cskkanu @NavbharatTimes @the_hindu @indiatvnews pic.twitter.com/UZokJiWUUC
— MARD.Party (@MardParty) May 12, 2024