দেশের যেসব জায়গাকে হিসেবেই ধরছেন না বিশেষজ্ঞরা, সেখানেও ভোট কুড়িয়ে নেবে বিজেপি। এক্সিট পোলের বহু আগেই দাবি করেছিলেন খোদ নরেন্দ্র মোদি। কী বলেছিলেন তিনি? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
সাত দফার ভোটপর্বের শেষে সব বুথফেরত সমীক্ষারই ইঙ্গিত, এনডিএ শরিকদের নিয়ে তৃতীয়বার কেন্দ্রে সরকার গড়ছে বিজেপি। ভোটদানের গতিপ্রকৃতি দেখে ভোটবিশেষজ্ঞরা অনেকেই হিসেবনিকেশ করেছিলেন, বিজেপির ভাগে এবার ভোট কমতে পারে। বিশেষ করে, দুবারের মোদি-ঝড়ের মাঝেও বাংলা বা দক্ষিণ ভারতে সেভাবে পদ্ম ফোটেনি। ইন্ডিয়া জোটের সম্মিলিত লড়াইয়ের সামনে ব্র্যান্ড মোদি খানিক ধাক্কা খেতে পারে, এমনটাও অনুমান করছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, সব জল্পনা কল্পনা উড়িয়ে দিয়ে গেরুয়া পতাকায় ভরতে চলেছে গোটা দেশই। যেসব রাজ্যে জোটের কোনও না কোনও দলের প্রাধান্য ছিল, সেখানেও ভালোমতোই নিজের ছাপ রাখবে বিজেপি, এমনটাই দাবি সমস্ত এক্সিট পোলের। তবে এক্সিট পোলের হিসেব দেখে বিরোধীরা যতই চমকে যান না কেন, খোদ মোদি কিন্তু অনেক আগেই এই দাবি করে রেখেছিলেন। ভোটের ফলাফল নিয়ে জল্পনার আবহে সে কথাই মনে পড়িয়ে দিচ্ছে তাঁর পুরনো সাক্ষাৎকার।
আরও শুনুন:
ফলের খোঁজে এক্সিট পোলে চোখ, তবে ‘খাঁটি’ সমীক্ষা বুঝবেন কীভাবে?
আব কি বার চারশো পার, এই স্লোগানেই চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের সুর বেঁধেছিলেন মোদি। যদিও প্রথম দু’দফা ভোটের পরেই সেই হুংকার খানিক স্তিমিত হয়েছিল। তবে এমন কোনও সংখ্যা হাওয়ায় ভাসিয়ে দিয়েই কিন্তু থেমে যাননি মোদি। কোন কোন রাজ্য এই সংখ্যা পূরণের সহায়ক হতে পারে, সে হিসেবও দিয়েছিলেন তিনি। আর তাও দিয়েছিলেন চতুর্থ দফা ভোটের আগে। যে সময়ে ভোটবিশেষজ্ঞরা অনেকেই বিজেপির ভোট কমার সম্ভাবনা দেখছিলেন, সেই সময়েই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মোদি সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, গোটা দেশ থেকেই লাভ কুড়িয়ে নেবে বিজেপি। এমনকি যেসব জায়গায় বিজেপির লাভের কথা ভোটপণ্ডিতেরা ভাবতেও পারছেন না, সেইসব এলাকাতেও ছাপ পড়বে গেরুয়ার। কোন কোন রাজ্যে বিজেপির ভোট চোখে পড়ার মতো বাড়বে, রাজ্যের নাম ধরে ধরে তার হিসেব দাখিল করেছিলেন মোদি। তিনি নিশ্চিত ছিলেন, উত্তরপ্রদেশ, বাংলা, ওড়িশা, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু এবং কেরল, এই সব রাজ্যেই বড় ভোট বাড়বে বিজেপির। আর তা যে ভোটপণ্ডিতদের চমকে দেবে, আগেভাগেই সে ভবিষ্যদ্বাণী করে রেখেছিলেন নরেন্দ্র মোদি।
মোদির বলা এই রাজ্যগুলির মধ্যে তৃণমূল শাসিত বাংলা আর বাম সরকারের কেরল তো ছিলই। একইসঙ্গে দক্ষিণের আরও একাধিক রাজ্যের নাম ছিল, বিভিন্ন ইস্যুতে যেখানকার তাবড় নেতানেত্রীরা বিজেপির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। যোগ দিয়েছেন ইন্ডিয়া জোটেও। এ কথাও বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বিজেপির জয়রথ থামাতে এই রাজ্যগুলির উপরে অনেকখানিই আস্থা ছিল রাহুলদের। কিন্তু লোকসভার প্রচারে এবার বাংলা আর দক্ষিণ চষে ফেলেছেন খোদ মোদিই। আর ভোট মিটতে না মিটতেই এক্সিট পোল বলছে, তার সুফলও পেতে চলেছে বিজেপি। অধিকাংশ বুথফেরত সমীক্ষাতেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, উত্তর ও পশ্চিম ভারতে জমি ধরে রাখার পাশাপাশি দক্ষিণ ভারতেও অগ্রগতি হতে পারে বিজেপির। এমনকি, এক বছর আগে জেতা কর্নাটক এবং ছ’মাস আগে জেতা তেলঙ্গানাতেও জনসমর্থন ধরে রাখতে ব্যর্থ হতে পারে কংগ্রেস। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই প্রথম কেরলে একা লড়ে বিজেপি আসন জিততে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে অধিকাংশ সমীক্ষায়। পড়শি রাজ্য তামিলনাড়ুতে দুই বৃহৎ দ্রাবিড় দল ডিএমকে এবং এডিএমকের সাহায্য ছাড়াই তারা একাধিক আসনে জিততে পারে।
আরও শুনুন:
স্বামীর জয় নিশ্চিত ভেবে মন্দিরে স্ত্রী, অথচ সেই ১ ভোটেই হেরে যান নেতা
এক্সিট পোল পুরোপুরি ঠিক কথা বলছে কি না, সে কথা জানা যাবে ৪ জুন। কিন্তু মোটামুটি সব এক্সিট পোলই যখন একই মতের পথিক, সেখানে মোদির এই আত্মবিশ্বাসকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়ারও জো নেই। বরং দলের পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদি যে এ দেশের জনমানসকেও হাতের তালুর মতোই চিনে নিয়েছেন, সে কথাই বুঝিয়ে দিল চব্বিশের লোকসভা ভোট।