জন্মহার কমানোর জন্য গণহারে মেয়েদের যৌনাঙ্গ দিয়ে প্রবেশ করানো হয়েছিল গর্ভনিরোধক যন্ত্র। অথচ রুটিন শারীরিক পরীক্ষার কথা বলে স্কুল থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ওই কিশোরীদের। পাঁচ দশক পেরিয়ে সেই ঘটনার প্রতিবাদে সোচ্চার হলেন মেয়েরা। কোথায় ঘটেছিল এমন ভয়ংকর কাণ্ড? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
নিজেদের ইচ্ছায় নয়, স্রেফ সরকারের নির্দেশের কারণেই মা হওয়ার পথ বরাবরের মতো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তাঁদের। তার চেয়েও বড় কথা, এই নির্দেশের কথা জানতেনই না ওই মেয়েরা। যখন তাঁরা অনেকেই নাবালিকা, সেই সময়ে তাঁদের অজান্তেই এ কাজ করা হয়েছিল। যোনি দিয়ে অপটু হাতে গর্ভনিরোধক যন্ত্র প্রবেশ করিয়ে দেওয়ার দরুন রীতিমতো যন্ত্রণাও ভোগ করেছেন তাঁরা। পাঁচ দশক পেরিয়ে সেই ঘটনার প্রতিবাদে সোচ্চার হলেন গ্রিনল্যান্ডের মেয়েরা।
আরও শুনুন: ৩৬ বছর ধরে বন্ধ ঘরে শিকলবন্দি মেয়ে, মানসিক অসুখ ভেবে ‘শাস্তি’ দেন বাবা
গর্ভধারণ না করতে চাইলে যেসব স্থায়ী উপায় অবলম্বন করা যায়, তার অন্যতম ‘ইনট্রাইউটেরাইন ডিভাইস’ বা ‘আইইউডি’। জরায়ুতে এই যন্ত্র বসিয়ে দিলে তা সন্তানসম্ভাবনা নষ্ট করে দেয়। কিন্তু স্বেচ্ছায় এহেন পথে হাঁটেননি ওই মেয়েরা। কারণ তখন তাঁরা সবেমাত্র স্কুলের পড়ুয়া। গ্রিনল্যান্ডের মেয়েদের অভিযোগ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁদের অনুমতি না নিয়ে ওই যন্ত্র জরায়ুতে বসানো হয়েছিল। স্কুল থেকে রুটিন শারীরিক পরীক্ষার কথা বলে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাঁদের। আর সেখানে কার্যত জোর করেই তাঁদের জরায়ুতে ওই গর্ভনিরোধক যন্ত্র বসানো হয়। আসলে জন্মহার কমানোর জন্য ১৯৬০ থেকে ৭০ সালের মধ্যে গ্রিনল্যান্ডের সরকার এই পরিকল্পনা নিয়েছিল। এমনকি এই পরিকল্পনায় ডেনমার্কের চিকিৎসকেরাও শামিল ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ১৯৬০-র দশকে গ্রিনল্যান্ডের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার নাবালিকার জরায়ুতে ওই যন্ত্র বসানো হয়েছিল। যা ওই সময়ের মা হওয়া সম্ভব এমন মহিলাদের সংখ্যার প্রায় অর্ধেক। আর সরকারি তথ্য অনুযায়ী এই প্রকল্প চলেছিল ১৯৭০-র মাঝামাঝি পর্যন্ত। যে সব মেয়েদের জরায়ুতে ওই যন্ত্র বসানো হয়েছিল, তাঁরা আর কোনও দিনই মা হতে পারেননি।
আরও শুনুন: যৌনাঙ্গে ক্ষতির আশঙ্কায় মেয়েদের প্রবেশ নিষেধ থিম পার্কে, আর কোথায় কোথায় রয়েছে এহেন নিষেধাজ্ঞা?
ওই অন্যায়ের প্রতিবাদে সম্প্রতি সরব হয়েছেন ঘটনার ভুক্তভোগী নাজা লিবের্থ। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তাঁর জরায়ুতে আইইউডি বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা? নাজা জানিয়েছেন, “ছুরির মতো ধাতব ওই জিনিসটি যোনি দিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমরা অধিকাংশই ভয়ে চিৎকার করে উঠেছিলাম। কিন্তু নার্সরা আমাদের শক্ত করে ধরে রেখেছিল।” নাজার আহবানে ইতিমধ্যেই এই আন্দোলনে শামিল হয়েছেন প্রায় শ-খানেক মহিলা। তাঁদের দাবিতেই প্রায় পাঁচ দশক পরে এ ঘটনা নিয়ে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে গ্রিনল্যান্ড এবং ডেনমার্কের সরকার।