সিএএ-র দরুন দেশের মুসলিমরা বিপন্ন হতে পারেন, এই আশঙ্কার কথা শোনা গিয়েছে বারেবারেই। কিন্তু কেন্দ্রের ঘোষণার পর খোদ মুসলিম নেতাই বলছেন, সিএএ নিয়ে দেশের মুসলিমদেরও আপত্তি থাকা উচিত নয়। সিএএ লাগু হওয়ার ফলে কোন কোন বড় সমস্যার সুরাহা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে? শুনে নেওয়া যাক।
নাগরিকত্ব সংশোধন আইন নিয়ে প্রথম থেকেই প্রতিবাদে সরব হয়েছেন দেশের মুসলিমরা। শুধু তাঁরাই নন, আরও অনেকেরই অভিযোগ, এই আইন মুসলিমদেরই সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাঁরা মনে করেন, হিন্দুত্ববাদের চর্চার দিকেই বিজেপি শিবিরের ঝোঁক, আর সেখান থেকেই এই আইনের উৎপত্তি। ফলে নাগরিকত্ব সংশোধন বিল আসার পরেই দেখা গিয়েছিল, ব্যাপক প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশ। কিন্তু চার বছর পেরিয়ে দেশে যখন সেই সিএএ লাগু হচ্ছে, তখন এক মুসলিম নেতার গলাতেই শোনা গেল ভিন্ন সুর। অল ইন্ডিয়া মুসলিম জামাতের প্রেসিডেন্ট মৌলানা সাহাবুদ্দিন রিজভি বরেইলভি নিজে তো কেন্দ্রের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানাচ্ছেনই, একইসঙ্গে তিনি বলছেন, CAA নিয়ে আপত্তি থাকা উচিত নয় দেশের মুসলিমদেরও। তাঁর মতে, এই আইন নিয়ে মুসলিমদের আশঙ্কার কোনও কারণ নেই। এতে কারও নাগরিকত্ব হারানোর প্রশ্নও উঠছে না।
আরও শুনুন:
রাষ্ট্রকে প্রশ্ন নয়! গণতন্ত্র চলছে?
যদিও ইতিমধ্যেই সিএএ-কে ‘অসাংবিধানিক এবং বিভাজনের আইন’ বলে আপত্তি তুলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে একটি মুসলিম সংগঠন। কিন্তু রিজভি জোর গলায় বলছেন, দেশের কোটি কোটি মুসলিমের গায়ে এর ফলে আদৌ কোনও আঁচ আসবে না। উলটে এর দরুন মুসলিমদের লাভই দেখছেন তিনি। সিএএ লাগু হওয়ার ফলে কোন কোন বড় সমস্যার সুরাহা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে?
এই আইন জানাচ্ছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো মুসলিম ধর্মাবলম্বী দেশ থেকে যদি সে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে এ দেশে আশ্রয় চান, তা হলে তা দেবে ভারত। কিন্তু প্রতিবাদীদের বক্তব্য, সিএএ-তে হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি এবং খ্রিস্টান শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হলেও সেখানে মুসলিমদের কথা উল্লেখ করা হয়নি। আর এইখানেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন তাঁরা। কিন্তু রিজভির মতে, এর আগে ওই শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার মতো কোনও আইন ছিল না। এখন সেই আইনটিই লাগু হল মাত্র। দেশের মুসলিমদের সঙ্গে আলাদা করে এর কোনও সম্পর্ক নেই বলেই তাঁর মত। একইভাবে সিএএ কার্যকর করার সময়েই কেন্দ্র সরকারও ঘোষণা করেছে, এর ফলে কোন কোন ইস্যুগুলির সমাধান হতে পারে। সরকারের বক্তব্যও কার্যত একই, যে, শরণার্থীদের পুনর্বাসন ও নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে আর কোনও আইনি বাধা থাকছে না। তা ছাড়া যে উদ্বাস্তু মানুষেরা দীর্ঘদিন ধরে যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে দিন কাটিয়েছেন, এই আইনের সূত্রেই তাঁরা সম্মানজনক জীবন পেতে চলেছেন বলে দাবি মোদি সরকারের। আরও বলা হচ্ছে, এই আইন তাঁদের দেশে স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরার অধিকার দিচ্ছে, আর্থিক এবং বাণিজ্যিক অধিকার, সম্পত্তি কেনাবেচার অধিকারও দিচ্ছে। একইসঙ্গে, অন্য দেশ থেকে আসা শরণার্থীদের সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং ভাষাগত স্বাতন্ত্র্যও রক্ষা করার আশ্বাস দিচ্ছে এই আইন- এমনটাই বলছে বিজেপি সরকার। আর সেই সুরাহাগুলির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেই মুসলিমদের আপত্তিগুলিকে খণ্ডন করতে চাইলেন জামাত নেতাও।