যৌন হেনস্তার অভিযোগে একের পর এক আঙুল উঠেছে। রাজধানীর বুকে আন্দোলনে ঝাঁপিয়েছেন পদকজয়ী কুস্তিগিরেরা। তারপরেও, ব্রিজভূষণ শরণ সিং স্বমহিমায়। ভোটের প্রচারেও একইরকম দাপটে বিদায়ী সাংসদ। শুনে নেওয়া যাক।
যৌন হেনস্তার অভিযোগে মামলা শুনছে দেশের শীর্ষ আদালত। অ্যাথলিটদের মাটি কামড়ে পড়ে থাকা আন্দোলনের জেরে শেষমেশ পদ খোয়াতে হয়েছে। তারপরেও বিশেষ বিচলন নেই ব্রিজভূষণ শরণ সিং-এর। কুস্তিগিরদের আন্দোলন নিয়ে প্রাথমিকভাবে তাঁর দল, তথা শাসক দল বিজেপি বিশেষ মাথা না ঘামালেও, আপাতত তারা খানিক সতর্কতা বজায় রেখেছে। ফলে চলতি লোকসভায় টিকিট মেলেনি ছবারের নির্বাচিত সাংসদ ব্রিজভূষণের। বদলে টিকিট দেওয়া হয়েছে তাঁর ছেলে করণ ভূষণ-কে। আর নিজের এতদিনের কেন্দ্র কাইজারগঞ্জের সেই প্রার্থীর হয়ে স্বমহিমায় প্রচারে নেমেছেন কুস্তি ফেডারেশনের প্রাক্তন শীর্ষ কর্তা।
আরও শুনুন:
ব্রিজভূষণের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারি! অনেক লড়াই শেষে বলছেন ভিনেশ
এমনিতে এ দেশের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সঙ্গে অপরাধ-যোগের কোনও বিরোধ নেই। অন্তত সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান সে কথাই বলে। লোকসভার মোট প্রার্থীসংখ্যার মধ্যে যতজনের নামের সঙ্গে ফৌজদারি মামলা জুড়ে আছে, সে তালিকা রীতিমতো দীর্ঘ। তবে তাতে কারোরই বোধহয় কিছু এসে যায় না। আর সে অপরাধ যদি যৌন হেনস্তার হয়, তাহলে তো আরই গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। সাম্প্রতিক অতীতে কুস্তিগিরদের দেশ কাঁপানো আন্দোলনের সময়ে যেভাবে গোটা দেশ প্রায় মুখ কুলুপ এঁটে ছিল, তাতে এমনটাই মনে হওয়ার কথা। আর এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে ব্রিজভূষণকে ভোটের প্রচারে দেখলেও সে কথাতেই সিলমোহর পড়বে। যৌন হেনস্তার অভিযোগে লাগাতার আঙুল উঠেছে তাঁর দিকে। সেই অভিযোগের প্রতিকার চেয়েই দেশের পদকজয়ী কুস্তিগিরেরা আদালতে ছোটাছুটি করেছেন, প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন, এমনকি শেষ পর্যন্ত রাস্তায় বসে ধরনা দিয়েছেন। সেখান থেকে তাদের টেনেহিঁচড়ে সরিয়ে দিয়েছে মোদি সরকারের পুলিশ। কিন্তু ব্রিজভূষণের কাছ থেকে না কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতির পদ সেসময় কেড়ে নেওয়া হয়েছে, না বিজেপি সাংসদের আচরণের জন্য স্পিকার বা দলের নেতৃত্বের তরফে কোনও জবাবদিহি চাওয়া হয়েছে। হ্যাঁ, পরে আইনি নির্দেশে পদ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বটে ব্রিজভূষণ, এবং ফেডারেশনও নতুন করে নির্বাচন করতে বাধ্য হয়েছে, কিন্তু সে নির্বাচনেও জিতে ক্ষমতায় এসেছেন ব্রিজভূষণ-ঘনিষ্ঠ সঞ্জয় সিং। ফলে ভিনেশ-সাক্ষী-সঙ্গীতাদের লড়াইটা সেই বিশ বাঁও জলেই আটকে থেকেছে। আর ব্রিজভূষণদেরও ভয় পাওয়ার, থমকে যাওয়ার কোনও কারণ ঘটেনি। বরং সমস্ত উপরমহল যেন নীরবে এ কথাই বুঝিয়ে দিয়েছে আরও একবার, যৌন হেনস্তা নিয়ে আদতে এ দেশে কারও, বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই। মাথাব্যথা যেটুকু রয়েছে তা নির্যাতিতাকে প্রশ্ন করা নিয়ে, তার সম্মান নিয়ে কথা বলার মধ্যে। কিন্তু হেনস্তাকারী যে বহাল তবিয়তেই থাকতে পারেন সে আশ্বাস পেয়ে গিয়েছেন বইকি ব্রিজভূষণরা। তাই নির্যাতিতাদেরই দিনের পর দিন ভয় গিলে নিয়ে থাকতে হবে, আর ব্রিজভূষণরা সগর্বে প্রচারে নামবেন। নিজে টিকিট পাননি তাতে কী, ছেলে তো লোকসভার টিকিট পেয়েছে। সেই প্রাপ্তি যে বকলমে তাঁরই, সে কথা বুঝিয়ে দিতে কসুরও করছেন না ছ-বারের নির্বাচিত সাংসদ। বুক ঠুকে বলছেন, আসলে তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ার খতম করার জন্যই চক্রান্ত করেছেন অভিযোগকারিণীরা, তাই ছেলে জিতে ফিরলে তাঁদের সপাটে চড় কষানো যাবে।
ব্রিজভূষণ জানেন, এ কথা বলা যায়। তাঁর দল, তাঁর সরকার, তাঁর দেশ তাঁকে সে এজেন্সি দিয়েছে বইকি। তাই চার্জ গঠনের পরেও কোনও অস্বস্তি নেই তাঁর আচরণে, তাঁর হাবভাবে বা বক্তব্যে। বরং তাঁর একচেটিয়া রাজত্বের বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করেছে, সে প্রতিবাদের টুঁটি টিপে ধরতেই জয় পেতে মরিয়া ব্রিজভূষণ।
আরও শুনুন:
এ কোন ‘অমৃতকাল’! সাক্ষী-ভিনেশরা মাটিতে পড়ে, মাটিতে মিশল দেশের সম্মানও
ভিনেশ-সাক্ষীরা তবু লড়বেন বইকি। লড়ছেনও। সে লড়াইয়ের শেষে যাই হোক না কেন, ব্রিজভূষণদের এই সোচ্চার ঔদ্ধত্যের পালটা কোনও স্বর যে এখনও কেউ কেউ জিইয়ে রেখেছেন, এটুকু না থাকলে এ দেশ সান্ত্বনা পাবে কোথায় আর!