রুডওয়ার্ড কিপলিংয়ের লেখা ‘দ্য জঙ্গল বুক’ গল্পের সেই কিং লুই-কে মনে আছে নিশ্চয়ই। হ্যাঁ, সেই বানররাজা। যাঁর সেই মস্ত মন্দিরে মোংলিকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল বানরসেনা। সেখানে শুধুই বাঁদর আর বাঁদর। বাঁদর মন্ত্রী, বাঁদর সৈন্য, বাঁদর কোতোয়াল-সব পদেই বহাল বাঁদরেরাই। তা সেই মন্দির সত্যিই আছে কিনা জানা নেই, আছে তেমনই এক দ্বীপ। যেখানে চলে বাঁদররাজ। কোথায় রয়েছে এই আশ্চর্য দ্বীপ? আসুন, শুনে নিই।
ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত ছোট্ট একফালি দ্বীপ। পুয়ের্তো রিকোর এই কায়ো সান্টিয়াগো দ্বীপ নারকেল গাছে ঢাকা। আর পাশে অথৈ সমুদ্র আর তার সবুজাভ নীল জল। আর তার সঙ্গে দেখা মিলবে সেই দ্বীপের বাসিন্দাদেরও। তারা কারা? পুয়ের্তো রিকোর এই দ্বীপে বাস করে কয়েক হাজার বাঁদর। যে সে বাঁদর নয়, এই দ্বীপে বসবাসকারী সমস্ত বানরই রিসাস প্রজাতির। এই দ্বীপের সর্বময় কর্তা তারাই।
না, এই দ্বীপে তারা নিজেরাই এসে সাম্রাজ্য স্থাপন করেছে, এমনটা কিন্তু নয়। বরং একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে এই কায়ো সান্টিয়াগো দ্বীপে আনা হয়েছিল তাদের।
আরও শুনুন: বারবার জায়গা বদল করে জেলের দরজা, গোলকধাঁধা থেকে পালানোর উপায় ছিল না কোনও বন্দির
এই রেসাস বাঁদরের উপর গবেষণা করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। তার আগে এই সব বাঁদরদের উপর গবেষণার জন্য এশিয়া ও আফ্রিকায় বিস্তর দৌড়ঝাঁপ করতে হত তাঁদের। ১৯৩০ সালে এই দ্বীপটি আবিষ্কারের পর এটিকে সেই বাঁদর গবেষণার কাজে ব্যবহার করলেন বিজ্ঞানীরা। ইউনিভার্সিটি অব পুয়োর্তো রিকোর ক্যারাবিয়ান প্রাইমেট রিসার্চ সেন্টার এবং হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের যৌথ উদ্যোগে চলছিল গবেষণা। ওই সব রেসাস বানরদের জীবন, ব্যবহার, জেনেটিকস ও মানসিক পরিবর্তনই ছিল বিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয়। এই দ্বীপটির সমস্ত খরচ বহন করে ক্যারাবিয়ান প্রাইমেট রিসার্চ সেন্টারই।
আরও শুনুন: উদ্ধার করতে হবে পরীক্ষার প্রশ্ন, বিপদে পড়ে দমকল বাহিনী ডাকল স্কুল
২০১৭ সালে পুয়ের্তো রিকোয় ঝাঁপিয়ে পড়ে হ্যারিকেন মারিয়া। সেই ঝড়ের দাপটে ছাড়খার হয়ে গিয়েছিল পুয়ের্তো রিকো। বাদ যায়নি কায়ো সান্টিয়াগোও। এমনকি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল গবেষণা ভবনটিও। ঝড়ে ভয়ঙ্কর ক্ষতি হয় দ্বীপের। গাছপালা থেকে শুরু করে সব তছনছ হয়ে যায়। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার বাঁদরদের বড় অংশই কিন্তু বেঁচে গিয়েছিল সেই ঝড়ের কবল থেকে। তবে বিজ্ঞানীদের গবেষণার বড়সড় ক্ষতি করে দিয়েছিল সেই ঝড়। যা এখনও সামলে উঠতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।
তবে সব দিক থেকেই এ দ্বীপ কেবল বাঁদরদেরই। কোনও মানুষেরই এই দ্বীপে রাত কাটানোর অনুমতি নেই। বিজ্ঞানী ছাড়া অন্য কারওর এ দ্বীপে পা রাখাও মানা। পর্যটকেরা সমুদ্রপথে এই দ্বীপের ধারে কাছে আসতে পারেন বটে। তবে দূর থেকেই চাক্ষুষ করতে হবে এই বাঁদরদের আশ্চর্য দ্বীপটিকে।