জাতীয় প্রকল্পের উদ্যোগে সম্প্রতি রাজধানী শহরে বসেছিল এক বিজ্ঞান প্রতিযোগিতার আসর। আর সেখানেই অনেককে পিছনে ফেলে পুরস্কার জিতে নিল মাত্র ১৪ বছরের এক মেয়ে। এমন এক যন্ত্র উদ্ভাবন করেছে সে, যা কেবল বিজ্ঞানের নিরিখে বড় নয়, তা মানবকল্যাণের পথও খুলে দিতে সক্ষম। কোন কৃতিত্বের জন্য পুরস্কার পেল এই মেয়ে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
সারা দেশের সরকারি স্কুলগুলির জন্য গৃহীত জাতীয় প্রকল্প ‘রেসপন্সিবল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ফর ইয়ুথ’-এর উদ্যোগে সম্প্রতি রাজধানী শহর দিল্লিতে আয়োজিত হয়েছিল একটি প্রদর্শনী। বিষয়, বলাই বাহুল্য, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স তথা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। সেখানে স্থান পেয়েছিল সারা দেশ থেকে আসা অজস্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর মৌলিক আবিষ্কার। আর সেই সবকিছুর মধ্যে থেকে বেছে নেওয়া হয় সেরা আবিষ্কারগুলি। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে দেখা যায়, গোটা দেশের প্রথম কুড়িজনের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে একটি মেয়ে, যার বয়স মাত্র ১৪। উত্তরপ্রদেশের তরফে একমাত্র পুরস্কার বিজেতাও এই মেয়েটিই, নন্দিনী কুশওয়াহা।
আরও শুনুন: কলাপাতা দিয়ে তৈরি হচ্ছে কফিন, একইসঙ্গে থাকছে বৃক্ষরোপণের ব্যবস্থাও
লকডাউনের সময় যখন সরকারি প্রকল্পের এই ওয়েবসাইটটি লঞ্চ করে, সেই সময়েই গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র নন্দিনী এই বিষয় নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। অবশ্য এই বিষয়ে তাকে উৎসাহ জুগিয়েছিলেন তার অঙ্কের শিক্ষক প্রকাশভূষণ মিশ্রও। কোন কৃতিত্বের নিরিখে মাত্র ১৪ বছর বয়সে এই পুরস্কার অর্জন করেছে নন্দিনী? সে এমন একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর যন্ত্র আবিষ্কার করে ফেলেছে, যা কম্পিউটারাইজড তথ্যের ভিত্তিতে বলে দিতে পারে কোন মাটিতে কোন শস্যের চাষ সবচেয়ে ভাল হওয়া সম্ভব। মাটিতে উপস্থিত যাবতীয় উপাদানের গুণাগুণ বিশ্লেষণ করেই তার সিদ্ধান্ত জানাবে এই যন্ত্র।
আরও শুনুন: কার্টুন দেখে পুলিশকে ফোন করতে শেখা, মায়ের প্রাণ বাঁচাল ৩ বছরের খুদে
নন্দিনী নিজে কৃষক পরিবারেরই সন্তান। তার বাবা পেশায় চাষি। উত্তরপ্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম ললিতপুর থেকে উঠে আসা মেয়েটি হয়তো সেই কারণেই বিজ্ঞানের সঙ্গে মিলিয়ে দিতে চেয়েছিল বাস্তবের প্রয়োজনকে। উত্তরপ্রদেশের রুক্ষ জমিতে ফসল বোনার সমস্যা তার ভাল করেই জানা। মাটি ভাল না হওয়ার দরুন বছরের পর বছর কম ফসল উৎপাদনের সমস্যায় নিজের বাবা এবং অন্যান্য চাষিদের ব্যস্ত হতেও দেখেছে সে। তাই নন্দিনী তার এই প্রকল্পের নামকরণ করেছিল, ‘মিট্টি কো জানো, ফসল পেহচানো।’ সে জানিয়েছে, এই যন্ত্রের মাধ্যমে মাটির নমুনা থেকে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম ইত্যাদি মৌলের উপস্থিতি, মাটির তাপমাত্রা, জল ধরে রাখার ক্ষমতা, অম্লত্ব ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ করা যাবে। তারপর সেই তথ্যের ভিত্তিতেই স্থির করে ফেলা যাবে, কোন মাটিতে কোন শস্য চাষ করলে তা লাভজনক হবে।
বিজ্ঞান এবং তার আবিষ্কার সম্পর্কে বিশেষ ধারণা না থাকলেও মেয়ের কৃতিত্বে খুশি তার পরিবার। ভাল ফসল ওঠার চেয়ে আনন্দের খবর কৃষক পরিবারে আর কী হতে পারে! নন্দিনী জাতীয় স্তরে পুরস্কার পেয়েছে বটে। তবে উত্তরপ্রদেশের একাধিক কৃষক পরিবার যদি তার আবিষ্কারের সুফল পায়, তাদের মুখের হাসিই হয়তো গণ্য হবে তার সবচেয়ে বড় পুরস্কার বলে।