অপ্রাপ্তবয়স্ক বা নাবালিকাদের ক্ষেত্রে যে কোনও ধরনের সহবাসই ধর্ষণ বলেই ধার্য হবে। সেক্ষেত্রে বিয়ে কোনও রকম অজুহাত হতে পারে না। সম্প্রতি একটি মামলায় তেমনটাই জানিয়ে দিল দিল্লি হাইকোর্ট। আর কী জানিয়েছে উচ্চ আদালত? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ধর্ষণ মাত্রেই ঘৃণ্য। আর তা যদি হয় নাবালিকা নিগ্রহের মতো ঘটনা, তা তো বলার অপেক্ষাই রাখে না। বাল্যবিবাহ বেআইনি হওয়া সত্ত্বেও আজও এ দেশের বহু জায়গাতেই চলে আসছে এই প্রথা। আইন, নজরদারি, প্রচার সত্ত্বেও তা বাগে আনা যায়নি। আর সেই বিয়ের ফাঁকফোকর দিয়েই বহুসময় চলে নাবালিকা নিগ্রহ বা ধর্ষণের মতো ঘটনা। এবার সে ব্যাপারটি নিয়েই সরব হল দিল্লি হাইকোর্ট।
বিবাহের অজুহাতে কোনও নাবালিকার সঙ্গে যৌন সম্বন্ধ বা সহবাস গণ্য করা হবে ধর্ষণ হিসেবেই। এমনটাই জানাল দিল্লি হাইকোর্ট। সম্প্রতি একটি ১৪ বছরের কিশোরীকে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে এক যুবকের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে। তার জামিন সংক্রান্ত শুনানিতেই সম্প্রতি এমন পর্যবেক্ষন জানিয়েছে কোর্ট। আদালতে অভিযুক্ত জানায়, মেয়েটিকে স্থানীয় মন্দিরে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছিল সে। সে সময় অভিযুক্তের বয়স ছিল ২৭ বছর।
আরও শুনুন: পুরুষের নগ্নতায় বহু বিতর্ক, তবু পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টি কি আদৌ বদলায়?
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় ওই নাবালিকা। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে অভিযুক্তের বাড়ি থেকে সন্তানসম্ভবা অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তাঁকে। ততদিনে আরও একটি আট মাসের সন্তানের জন্ম দিয়েছে সে। সেই মামলার জল গড়ায় আদালত পর্যন্ত। অভিযুক্ত জানায়, ওই নাবালিকার সঙ্গে মন্দিরে গিয়ে রীতিমতো নিয়ম মেনে বিয়ে করেছে সে। এই মর্মে জামিনের আবেদন করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল অভিযুক্ত।
তবে সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি অনুপ কুমার। তাঁর সাফ বক্তব্য, এ ধরনের মামলাকে মোটেই বৈবাহিক ধর্ষণের ধারায় ফেলা যাবে না। পাশাপাশি তিনি এ-ও জানান, নাবালিকা যদি অভিযুক্তের সঙ্গে কোনও রকম ইনফ্যাচুয়েশন বা তাৎক্ষনিক প্রেমের সম্পর্কেও জড়িয়ে থাকে, সেক্ষেত্রেও শারীরিক সম্পর্ক ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হবে। এবং সেক্ষেত্রে বিয়ে বিষয়টি দিয়ে কোনও ভাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারবে না অভিযুক্ত।
আরও শুনুন: হারিয়েছেন স্বামীকে, অকালমৃত্যু দুই সন্তানের… শোকের ঝড় পেরিয়ে রাইসিনা হিলসে দ্রৌপদী মুর্মু
বহু সময়েই ধর্ষণের অভিযোগ থেকে বাঁচতে বিয়ের পথে বেছে নেয় অপরাধীরা। এর ফলে বহু ক্ষেত্রে কম বয়সেই সন্তানের জন্ম দিতে বাধ্য হয় নাবালিকারা। যা তাঁদের শরীরের পক্ষে যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। যেমনটা ঘটেছে এই কিশোরীর সঙ্গে। পনেরো বছরেরও কম বয়সে দু-দুবার অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে সে। সহ্য করতে হয়েছে অপহরণ ও ধর্ষণের মতো নির্যাতনও। নাবালিকার সম্মতিক্রমেও যদি এই সব ঘটনা ঘটে থাকে, তাকেও মান্যতা দেয় না আদালত। অর্থাৎ স্ত্রী নাবালিকা হলে, তার সঙ্গে সহবাস বা যৌনসম্পর্ক বেআইনি বলেই সাফ জানিয়ে দিয়েছে আদালত। তাছাড়া ওই ঘটনা বাল্যবিবাহ আইনেরও লঙ্ঘন বলেই জানিয়েছেন বিচারপতি। ফলে অভিযুক্তের জামিনের প্রশ্ন নেই বলেই রায় হাইকোর্টের।