৫১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন সঞ্জীব খান্না। প্রথমে ন্যায়সংহিতা, তারপর লেডি জাস্টিসের রূপবদলের মধ্যে দিয়ে দেশের বিচারব্যবস্থা যে নতুন পথে এগোবে বলে ইঙ্গিত মিলেছে, সেখানে দাঁড়িয়ে নতুন প্রধান বিচারপতির কাছে কেমন প্রত্যাশা থাকবে দেশের?
চন্দ্রচূড়ের আমলেই চোখের বাঁধন খুলেছে লেডি জাস্টিসের। আইন অন্ধ নয়, সমস্ত ন্যায় অন্যায়কে সে নিরপেক্ষ চোখে দেখে, সব মানুষের প্রতিই তার সমদৃষ্টি- এ কথা বোঝাতেই বদল এসেছে ন্যায়ের দেবীর মূর্তিতে। আর সেই বদলের পরে পরেই বড় বদল খোদ শীর্ষ আদালতেই। লেডি জাস্টিসের রূপবদলের হোতা ছিলেন যিনি, সেই ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় অবসর নিয়েছেন। সেখানে ৫১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন সঞ্জীব খান্না। প্রথমে ন্যায়সংহিতা, তারপর লেডি জাস্টিসের রূপবদলের মধ্যে দিয়ে দেশের বিচারব্যবস্থা যে নতুন পথে এগোবে বলে ইঙ্গিত মিলেছে, সেখানে দাঁড়িয়ে নতুন প্রধান বিচারপতির কাছে কেমন প্রত্যাশা থাকবে দেশের?
যে সংবিধান রক্ষার কথা নিয়ে রাজনীতির ময়দান ইদানীং কালে নাগাড়ে চাপানউতোর দেখছে, সেই সংবিধানকে রক্ষা করার সর্বোচ্চ দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির উপরেই। গোটা দেশের আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে কার্যত শেষ কথা বলতে পারেন তিনিই। আর সেই চূড়ান্ত ক্ষমতার আসনেই এবার বসলেন সঞ্জীব খান্না। এই পদে তাঁর মেয়াদ ছ’মাসের মতো। এই ছ’মাসে তাঁর হাতে বিচারের মানদণ্ড কোন পথ নির্দেশ করে, সেদিকেই নজর গোটা দেশের। কেন-না, রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর বিভিন্ন মামলা এবার প্রধান বিচারপতি হিসেবে সঞ্জীব খান্নার বেঞ্চে আসতে চলেছে। বিভিন্ন সাংবিধানিক অধিকার প্রসঙ্গে ঝুলে রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের রায়। সেখানে প্রধান বিচারপতির ভূমিকা এবার কী দাঁড়াবে, তা নিয়ে জল্পনা চলছেই।
প্রধান বিচারপতি হওয়ার আগে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলায় রায় দিয়েছেন বিচারপতি খান্না। একদিকে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের সিদ্ধান্তে শিলমোহর দেয় যে বেঞ্চ, সেখানে ছিলেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চই নির্বাচনে ১০০ শতাংশ ভিভিপ্যাট যাচাইয়ের আর্জি খারিজ করে। আরেকদিকে, আবগারি দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হয়ে প্রায় ৫০ দিন কারাবাসের পর তাঁর বেঞ্চেই অন্তর্বর্তী জামিন পান দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল। তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় প্রধান বিচারপতির দপ্তর আসবে কি না, এই মামলার মতো একাধিক রায়ে তিনি দেখিয়েছিলেন, স্বচ্ছতাকেই তিনি সর্বাগ্রে রাখছেন। যা কিন্তু লেডি জাস্টিসের দেখানো পথের কথাই বলে। বৈবাহিক ধর্ষণকে ‘অপরাধ’ বলে ঘোষণা করে আইনের সমদৃষ্টিকেই চিনিয়েছিলেন তিনি। এমনকি একজন কাকে বিয়ে করবেন, সেই নির্বাচন করার অধিকার যে তাঁর সাংবিধানিক অধিকার- সেই যুগান্তকারী রায়ে চন্দ্রচূড়ের সঙ্গে তিনিও শরিক ছিলেন। সমকামিতাকে অপরাধ বলার কুখ্যাত ৩৭৭ ধারা নাকচ করার বেঞ্চেও ছিলেন বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। বস্তুত, সদ্যপ্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় সাম্প্রতিক অতীতে যে যে মামলায় পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ তৈরি করেছিলেন, তার প্রায় প্রত্যেকটিতেই ছিলেন বিচারপতি খান্না। অভিজ্ঞতার নিরিখে তিনিই যে চন্দ্রচূড়ের উত্তরসূরি, তা বলাই যায়।
আর উত্তরসূরি হিসেবে সঞ্জীব খান্নার অবস্থানটিই আসলে এখন গোটা দেশের নজরে। তিনি তো কর্মসূত্রে কেবল চন্দ্রচূড়ের উত্তরসূরিই নন, পারিবারিক সূত্রে হংসরাজ খান্নার উত্তরপুরুষও বটে। ইন্দিরা গান্ধীর আমলের সেই বিচারপতি হংসরাজ খান্না, যিনি বিচারবিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্নে পদত্যাগ করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের করিডরে তাই এ প্রশ্নই ঘুরছে, দেশের বিচারব্যবস্থাকে যে নতুন পথে এগোনোর কথা বলেছে শীর্ষ আদালত এবং কেন্দ্র সরকার, বাস্তবে কি বিচারব্যবস্থাকে তেমন নতুন দিশা দেখাবেন নতুন প্রধান বিচারপতি?