সাইবার দুনিয়ায় হ্যাকারদের ঘোরাঘুরি। নানারকমের বিপদ ওঁত পেতে আছে। এদিকে অনলাইন লেনদেন থেকে নানা কাজকর্ম না করলেই নয়! তাহলে আপনার অ্যাকাউণ্ট সুরক্ষিত রাখবেন কী করে? কতটা ঘনঘন পাসওয়ার্ড বদলাবেন? কী বলছেন গুগল সিইও সুন্দর পিচাই?
আজকাল সবাই সারাদিনের বেশিরভাগ সময় কাটান ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা প্ল্যাটফর্মে। অনালাইনের বায়বীয় দুনিয়ায় আমরা সকলেই কমবেশি ভেসে থাকি। মাঝে মধ্যেই আমাদের প্রোফাইল হ্যাক হয়। কখনও বা পাসওয়ার্ড ভুলে গিয়ে হয় বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা। সেই অবস্থায় পাসওয়ার্ড রিকভার করতে আমাদের অবস্থা হয় ঘেমে-নেয়ে একশা। পাসওয়ার্ড থেকেই আপনার প্রোফাইল হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। হ্যাকারদের কবল থেকে নিজের সাধের অনলাইন আইডেন্টিটি বাঁচানোর জন্য, গুগুলের সিইও সুন্দর পিচাই কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। নিজেদেরকে সুরক্ষিত রাখতে সেই পরামর্শগুলো আমাদের মেনে চলা উচিত।
সেই পরামর্শে কী রয়েছে?
সুন্দর পিচাই বলছেন, তিনি নিজে ঘঙ্ঘন পাসওয়ার্ড বদলানোর পক্ষপাতী নন। বরং তাঁর পরামর্শ, টু-স্টেপ অথেনটিকেশন বা দ্বিস্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবহার করা। এই প্রক্রিয়ায় ব্যবহারকারীকে তাঁর অ্যাকাউন্টে নিয়মিত পাসওয়ার্ড ব্যবহারের পাশাপাশি লগ ইন করার সময় স্মার্টফোন ও কম্পিউটারে আরও একটি কোড ব্যবহার করতে হয়। এতে অতিরিক্ত একটি স্তরের নিরাপত্তা পাওয়া যায়। অ্যাপল, জিমেল, ড্রপবক্সের মতো অনেক সার্ভিসের ক্ষেত্রে এই ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া রয়েছে। নতুন কোনো যন্ত্রে যখনই লগ ইন করতে যাবেন, তখন পাসওয়ার্ড দেওয়ার পর, চাওয়া হয়, একটি গোপন কোড। এটিই আপনার রেজিস্টার্ড মোবাইল নাম্বারে পৌঁছায় একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই। সেটি আপনাকে দিতে হয়, লগ ইন কনফার্ম করার জন্য। যদি হ্যাকার আপনার সোশ্যাল মিডিয়া বা অন্য কোনও প্ল্যাটফর্মের পাসওয়ার্ড জেনেও থাকেন, যতক্ষণ না আপনার মোবাইল ক্লোন হচ্ছে বা এই টু-স্টেপ ভেরিফিকেশনের কোড জানতে পারছেন ততক্ষণ অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে পারবে না।
আরও শুনুন : Petrol Price : জ্বালানি-জ্বালায় জর্জরিত জনতা, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কেন উদাসীন কেন্দ্র?
গুগুলের সিইও সুন্দর পিচাইয়ের মতে, ঘনঘন পাসওয়ার্ড বদলের থেকে এই পদ্ধতিতেই সুরক্ষা বেশি।
পাশাপাশি এর সঙ্গেই পাসওয়ার্ড নিয়ে কয়েকটা সাধারণ কথা আমরা অবশ্য মনে রাখতে পারি। যেমন, পাসওয়ার্ড মনে রাখার জন্য অনেকেই দিয়ে দেন সোজা পাসওয়ার্ড। যেমন ধরুন, তার মোবাইল নাম্বার, জন্মদিন, তাঁদের বা তাঁদের খুব কাছের কারোর নাম। এইসব ক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড হ্যাক হওয়ার ভয় বা সম্ভাবনা সবথেকে বেশি। যে কোনও পাসওয়ার্ড হ্যাক করার সময় হ্যাকাররা সবথেকে প্রথমেই এই সূত্রগুলো ধরেই এগোয়। তাঁদের সফলতার হার প্রায় একশো শতাংশ। তাঁর অনুরোধ, দয়া করে নিজের ব্যাক্তিগত তথ্য, কিছুতেই পাসওয়ার্ড হিসেবে দেবেন না।
তাহলে একটা ঠিকঠাক পাসওয়ার্ড দেওয়ার প্রাথমিক শর্ত কী? পাসওয়ার্ডে থাকে অন্তত আটটি ক্যারেক্টার। এইসব ক্ষেত্রে ছোট ও বড় লেটার ব্যবহার করুন, অন্তত একটা সিম্বল এবং নাম্বার যোগ করুন। অক্ষর, চিহ্ন, সংখ্যা প্রভৃতি মিলিয়ে পাসওয়ার্ডটিকে বানিয়ে তুলুন বেশ জটিল করে।
পাসওয়ার্ড ভুলে যাওয়া এড়াতে অন্য কোথাও লিখে রাখুন। নিজের হোয়াটস অ্যাপ বা ইমেলে নিজের পাসওয়ার্ড সেভ করে রাখবেন না। আপনার মোবাইল হারালে বা চুরি গেলে বা হ্যাকাররা যদি আপনার হোয়াটস অ্যাপ বা ইমেল ক্লোন করে সেখান থেকে অনায়াসে পাসওয়ার্ড পেয়ে যাবে।
অনেক সময়েই নানা জায়গায় কাজের প্রয়োজনে হোয়াটস অ্যাপ বা ইমেল লগ ইন করতে হয়। অনেকেই লগ আউট করতে ভুলে যান। এইসব জায়গা থেকে আপনার পাসওয়ার্ড অন্যের হাতে চলে যাওয়া খুব সহজ।
তাছাড়া মাস দুই তিন অথবা অন্তত ছ মাসে একবার বদল করুন পাসওয়ার্ড। ফোনে কাউকে পাসওয়ার্ড বলবেন না।
আরও শুনুন : পান্তাভাতের কামাল! MasterChef মাতালেন ভিনদেশি বঙ্গতনয়া Kishwar Chowdhury
সাধারণভাবে আমরা নানা সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে একই ধরনের বা একই পাসওয়ার্ড দিই। ধরুন ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে আপনার পাসওয়ার্ড একই। বা একই ইমেল আইডি দিয়ে একাধিক সোশ্যাল মিডিয়ায় একাউন্ট খুলেছেন। সে ক্ষেত্রে অসুবিধে এবং নিরাপত্তাহীনতা বাড়ে। সাধারণত আলাদা আলাদা সোশ্যাল মিডিয়ায় একাউন্ট খোলার জন্য, আলাদা আলাদা ইমেল আইডি ব্যবহার করুন। এইসব ক্ষেত্রে আপনার লিঙ্কড একাউন্টগুলি একইসঙ্গে হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। কিছুতেই সব জায়গায় কমন পাসওয়ার্ড দেবেন না।
অতএব অনলাইনে নিজেকে সুরক্ষিত থাকার গোড়ার কথা হল সতর্ক থাকতে হবে নিজেকেই।