হিজাব বিতর্কের পরে কর্ণাটকের একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে দানা বাঁধল নয়া বিতর্ক। স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে সেখানে আয়োজন করা হল ভারত মাতা পুজো। এ বছর পঁচাত্তরে পা দিতে চলেছে দেশের স্বাধীনতা। সেই উপলক্ষে দেশ জুড়ে পালিত হচ্ছে ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’। ইতিমধ্যেই সারা দেশ সেজে উঠতে শুরু করেছে তেরঙায়। খোদ প্রধানমন্ত্রীর তরফে প্রতিটি ঘরে পতাকা উত্তোলনের আবেদন জানানো হয়েছে দেশবাসীর কাছে। সেখানে ভারত মাতা পুজোর পোস্টারে খোদ মূর্তির হাতেই দেখা গেল না তেরঙা। স্বাধীনতা দিবসে বিশেষ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় আচার পালন নিয়েও ঘোরতর আপত্তি জানাল একটি পক্ষ। দেওয়া হল স্মারকলিপিও। কী ঘটেছে আসলে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
দিন কয়েক আগেই হিজাব-বিতর্কে উত্তাল হয়ে উঠেছিল কর্ণাটক। তবে তার রেশ কাটতে না কাটতেই নয়া বিতর্কে জড়াল মেঙ্গালুরু বিশ্ববিদ্যালয়। বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভারতমাতা পুজোর ব্যবস্থা করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ। তবে সেই পুজোয় বাধ সাধে ক্যাম্পাস ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া (CFI)। তাদের তরফে পুজোয় সাফ আপত্তি জানানো হয়েছে।
আরও শুনুন: হর ডিশ তিরঙ্গা… স্বাধীনতার উদযাপনে সমস্ত খাবারই জাতীয় পতাকার রঙে সাজাল রেস্তরাঁ
একাধিক অভিযোগ রয়েছে তাঁদের। ওই পুজো উপলক্ষে কয়েক দিন আগে থেকেই পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এমনকী বিলি করা হয় ভারতের মানচিত্রও। যেখানে বড়সড় ভুল রয়েছে বলেই অভিযোগ জানিয়েছে সিএফআই। পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ এবং মায়ানমারকে সেই ম্যাপে ভারতের অংশ বলে প্রচার করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ক্যাম্পাসে ভারতমাতার যে ছবি পোস্টার হিসেবে টাঙানো হয়েছে, সেখানে ভারতমাতার হাতে তেরঙা নয়, স্থান পেয়েছে গেরুয়া পতাকা। দক্ষিণ কন্নড় জেলার সিএফআই প্রেসিডেন্ট তাজুদ্দিন জানান, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি পালনের নাম করে আদতে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে ছাত্র সংসদ। যা ভারতীয় সংবিধানবিরোধী তো বটেই। পাশাপাশি হিজাব-মামলায় কর্ণাটক হাইকোর্টের দেওয়া রায়েরও সরাসরি বিরোধিতা করছে এই পদক্ষেপ। আর সেই অভিযোগ তুলে পুজো বন্ধের দাবিও জানিয়েছে ক্যাম্পাস ফ্রন্ট। এই মর্মে জমা দেওয়া হয়েছে স্মারকলিপিও। বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও সরব হন তাঁরা।
আরও শুনুন: ভারতের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে বেছে নেওয়া হল ১৫ আগস্টকে, নেপথ্যের কারণ কী?
যদিও ছাত্রপরিষদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই তারা এই পুজোর আয়োজন করেছিল। আর সে বিষয়টি নিয়েই আরও বেশি করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সিএফআই। তাদের বক্তব্য, যেখানে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরে ক্যাম্পাসে পা রাখতে পর্যন্ত বাধা দেওয়া হয়, সেখানে ক্যাম্পাসের মধ্যে অন্য একটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় আচার পালনের ব্যাপারে কোনও রকম আপত্তিই জানান না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বরং তাদের অনুমতি দেওয়া হয় পুজোআচ্চা করার। আর এই বিষয়টিকে সামাজিক বৈষম্য বলেই তোপ দেগেছেন সিএফআইয়ের ওই নেতা। ব্যাপারটি নিয়ে ইতিমধ্যেই শোরগোল শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ভারত মাতার হাতে তেরঙার বদলে গৈরিক পতাকা কেন? তা নিয়েও শুরু হয়েছে জোর সমালোচনা। স্বাধীনতা দিবসের মতো একটি জাতীয় দিনকে ধর্মীয় ঘেরাটোপের মধ্যে বেধে ফেলা নিয়েও তোপ দেগেছেন নেটিজেনরা।