দেশজুড়ে চালু হোক অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। এই দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই সরব গেরুয়া শিবির। কিন্তু মুসলিম সম্প্রদায়ের একাংশের ভোট মুসলিম ল বোর্ড জারি রাখার পক্ষেই। এই পরিস্থিতিতে মুসলিম মহিলাদের অভিন্ন দেওয়ানি বিধির সুবিধা বোঝাতে চায় বিজেপি। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা করে কোনও আইনি ব্যবস্থা থাকবে না। বদলে গোটা দেশ জুড়ে চালু হবে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। দীর্ঘদিন ধরেই এই দাবি তুলেছে বিজেপি। সত্যি বলতে গত কয়েক দশক ধরেই নিজেদের প্রধান কর্মসূচি বলে যে বিষয়গুলিকে তুলে ধরেছিল গেরুয়া শিবির, তার মধ্যে অন্যতম এই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হলে দেশের সব ধর্মের মানুষ একইরকম পারিবারিক বিবাহ এবং সম্পত্তির উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আইন মানতে বাধ্য হবে। কার্যত অস্তিত্ব হারাবে মুসলিম ল’বোর্ড। আর সেইখানেই আপত্তি মুসলিম সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশের। মোদি সরকার অভিন্ন দেওয়ানি বিধির রূপায়ণের উদ্যোগ নিতেই তাই পালটা আন্দোলন শুরু করেছে তারা। এই পরিস্থিতিতে মুসলিম মহিলাদের এই আইনব্যবস্থার সুবিধা বোঝাতে চায় শাসক দল। নয়া ব্যবস্থায় কী কী সুবিধা মিলবে, সে কথা বুঝিয়েই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার ক্ষেত্রে জনমত গড়ে তুলতে চাইছে বিজেপি সরকার।
আরও শুনুন: ২০১৪ থেকে এই প্রথম সাংবাদিকদের মুখোমুখি মোদি! আসল সত্যিটা কী?
ঠিক কী সুবিধার কথা মুসলিম মেয়েদের বোঝাতে চায় বিজেপি? তিন তালাক নাকচ করার পরে বিজেপি লিঙ্গবৈষম্য দূর করা এবং নারীদের সমান অধিকারের পক্ষে রীতিমতো প্রচার চালিয়েছে। এই ক্ষেত্রেও সেই বিষয়গুলিকেই গুরুত্ব দিতে চাইছে তারা। লিঙ্গবৈষম্য ঘুচিয়ে মুসলিম মহিলাদের সমানাধিকারের জন্যই ইউনিফর্ম সিভিল কোড জরুরি, এমনটাই বোঝাতে তৎপর বিজেপি। একইসঙ্গে তাদের দাবি, এই আইনি ব্যবস্থায় সম্পত্তির উত্তরাধিকার পেতে সুবিধা হবে মুসলিম মেয়েদের, সুবিধা বাড়বে দত্তক গ্রহণের ক্ষেত্রেও। এই তিনটি সুবিধার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেই মুসলিম নারীদের অধিকারের পক্ষে সওয়াল বিজেপির। এর আগে মুসলিম মহিলাদের একটি অংশও অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আনার দাবিতে মোদি সরকারের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। এই ইস্যুতে বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার প্রধান জামাল সিদ্দিকির সাফ কথা, তিন তালাক যেভাবে মুসলিম মহিলাদের জীবন সুগম করেছে, পারিবারিক সম্পত্তিতে তাদের অধিকার স্বীকৃত হলে একইভাবে তাদের পরিস্থিতির উন্নতি হবে। একইসঙ্গে, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি মুসলিমদের ধর্মে আঘাত করবে এই রটনাকে চক্রান্ত বলেই দাবি করছেন সিদ্দিকি।
আরও শুনুন: ভারতে সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে মোক্ষম প্রশ্ন মোদিকে, কে এই সাবরিনা সিদ্দিকি?
জানা যাচ্ছে, এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করেছে গেরুয়া শিবির। আর সেই ছক অনুযায়ী মুসলিম মহিলাদের পাশাপাশি মুসলিম সম্প্রদায়ের বুদ্ধিজীবী এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গেও কথা বলতে ইচ্ছুক বিজেপি। সংঘাত নয়, বরং পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমেই দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করা যাবে, সম্প্রতি এমন আশা প্রকাশ করেছিলেন সংঘপ্রধান মোহন ভাগবত। সেই বোঝাপড়ার রাস্তা সুগম করতেই নয়া পরিকল্পনা গেরুয়া শিবিরের।