কুম্ভের ভিড়ে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে। পরিবার ভেবেছিল এমনটাই। তবে দেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি। মনের দুঃখে বাড়ি ফিরেছিলেন পরিজনরা। মৃতের আত্মার শান্তি কামনায় আয়োজন করা হয়েছিল শ্রাদ্ধের। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানেই পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরলেন মৃত। কোথায় ঘটেছে এমন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
কুম্ভমেলা শেষ হতে আর হাতেগোনা কয়েকদিন বাকি। ইতিমধ্যেই স্নান সেরে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছেন অনেকে। ফিরতে শুরু করেছেন সাধুরাও। তবে সকলেই যে আনন্দ আর তৃপ্তি নিয়ে ফিরেছেন, এমন নয়। বরং তীব্র যন্ত্রণা বুকে নিয়ে ফিরতে হয়েছে। কারণ, কুম্ভের ভিড়েই এঁরা চিরতরে হারিয়েছেন নিজের প্রিয়জনকে।
কিন্তু ওই যে কথায় বলে, জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে তাতে কারও হাত থাকে না। আগেও সে প্রমাণ মিলেছে, সম্প্রতি আরও একবার মিলল। তবে এবারের ঘটনায় ওতপ্রতভাবে জড়িয়ে কুম্ভমেলা। বলা ভালো, কুম্ভমেলায় পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনার।
:আরও শুনুন:
পদপিষ্ট হওয়ার আতঙ্কে কুম্ভ ছাড়লেন ভক্তরা, ফেরার পথে আশ্রয় দিল স্থানীয় মসজিদ
শুরু থেকেই কুম্ভমেলায় ভিড় ছিল দেখার মতো। তবে শাহী স্নান দিনগুলো ভাষায় ব্যক্ত করা কঠিন। এতটাই ভিড় হচ্ছে বা হয়েছে, তাতে যে কারও অসুস্থ হয়ে পড়া স্বাভাবিক। দুর্ঘটনার আশঙ্কাও রয়েছে প্রতি মুহূর্তে। ঠিক যেমনটা হয়েছিল মৌনি অমাবস্যার স্নানে। হুড়োহুড়ি আর ভিড়ের চাপে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছিল ২৯ জনের। সরকারি হিসাব অন্তত তেমনটাই বলেছিল। তবে কেউ কেউ দাবি তোলেন, এই সংখ্যা সঠিক নয়। কারণ দেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি এমন নিখোঁজ মানুষের সংখ্যাও নেহাতই কম ছিল না। তাঁরা আদৌ বেঁচে আছেন কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেননি কেউ। এমনই একজন খুঁটি গুরু। বয়স ৬০ ছুঁইছুঁই। এলাহাবাদেরই বাসিন্দা। কুম্ভমেলার দূরত্ব বাড়ি থেকে খুব বেশি নয়। দুর্ঘটনার দিন মানে মৌনী অমাবস্যার ঠিক আগেরদিন সদলবলে হাজির হন সঙ্গমচত্বরে। তবে সেখানে গিয়েই আর দলের সঙ্গে তাঁকে দেখা যায়নি। বলেছিলেন চারদিকটা ঘুরে ফিরে আসবেন। বাধাও দেয়নি কেউ। এদিকে রাত হতেও খুঁটি ফিরছেন না দেখে সকলে ভেবে নিয়েছিলেন একেবারে ভোরের ব্রাহ্মমুহূর্তে স্নান সেরে ফিরবেন। কিন্তু না, ভোরের আলো ফুটলেও দলের কাছে ফিরে আসেননি খুঁটি। এদিকে ততক্ষণে পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে গিয়েছে। চারিদিকে কান্না আর হাহাকার। তাতেই সকলে একপ্রকার ধরে নিয়েছিল, খুঁটি আর নেই। ভিড়ের মধ্যে পদপিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন।
:আরও শুনুন:
শুধু মৃত্যুমিছিল নয়, কুম্ভে জাগছে নতুন জীবনের আলো, মেলা চত্বরেই জন্মাল ১১ শিশু
মনের দুঃখ চেপেই শোকে মুহ্যমান হয় পরিবার। দেহ না পেলেও নিয়ম মেনে অশৌচ পালন হয়। ১৩ তম দিনে ছিল শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠান। সেই উপলক্ষে খুঁটির বাড়িতে নিমন্ত্রিত ছিলেন অনেকেই। সারাদিন যাবতীয় আচার অনুষ্ঠান হয়েছে। তবে খেতে বসার আগেই ঘটল অদ্ভুত কাণ্ড। সবাইকে অবাক করে দরজায় হাজির, স্বয়ং খুঁটি গুরু। দিব্য সুস্থ আছেম! সমবেত প্রশ্ন, কোথায় ছিলেন এতদিন? খানিক ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে খুঁটি উত্তর দিলেন, ‘ঘুমিয়ে পড়েছিলাম!’
আসল ঘটনাটা অন্যরকম। সেদিন সবাই যা ভেবেছিল খুঁটির সঙ্গে আদতে তা হয়নি। বরং মনের আনন্দে তিনি সাধু সঙ্গে মজে ছিলেন। সেখানেই নেশায় বুঁদ হয়ে কাটিয়েছেন এই কদিন। কোথায় শাহী স্নান, কোথায় বাড়ি, কোথায় পরিবার, এইসব নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবনা ছিল না। তাই বাড়ি ফেরার কথা মনেও আসেনি। তবে এইভাবে তাঁকে যে সবাই মৃত ভেবে নেবেন এমনটা ভাবতেও পারেননি। যদিও পরিবারের লোকজন তাঁকে ফিরে পেয়ে মহানন্দে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করতে বসেন। অতিথি তো আগেই হাজির ছিল, খাওয়ার আয়োজনও ছিল, স্রেফ উপলক্ষ বদলে যাওয়ায় দুঃখের বদলে আনন্দে মেতে ওঠেন সবাই।