মানুষ বড় একলা। তার পাশে মানুষ কীভাবে এসে দাঁড়াবে? না, সামাজিক ভাবে এর উত্তর খুঁজে পাওয়া মুশকিল। সরকারও কি খুঁজছে? সে প্রশ্ন মুলতুবি থাক। তবে, এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছে প্রাইভেট সংস্থাগুলো। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মতো জরুরি বিষয়ই তাই-ই খুলে দিয়েছে ব্যবসার নতুন পথ।
UNFPA বা ইউনাইটেড নেশনস্ পপুলেশন ফান্ড পূর্বাভাস দিয়েই রেখেছে। ২০৫০ সালের মধ্যে ভারতে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা, বর্তমান সংখ্যার দ্বিগুণ হবে। শিশুর সংখ্যাও ছাপিয়ে যাবে বয়স্কের সংখ্যা। প্রতি পাঁচ জনে একজন হবেন বয়স্ক মানুষ। যদিও পূর্বাভাসের আগামী আড়াই দশকের কথা মাথায় রেখে। তার মধ্যে নানারকম ওলটপালট হতে পারে। সব পূর্বাভাস যে মিলে যায়, তা তো নয়। তবে, এই আভাস আমাদের জানায় যে, দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। আর সবথেকে বড় কথা, সেই বয়স্ক মানুষদের একাকিত্ব ও নিরাপত্তা ক্রমশ উদ্বেগের জায়গাতেই পৌঁছে যাচ্ছে। এ যখন সামাজিক উদ্বেগ, তখন তাই-ই আবার ব্যবসার রুপোলি রেখা হয়ে দেখা দিচ্ছে। বয়স্কদের পরিষেবা দেওয়ার নানা ক্ষেত্রে বাড়ছে নতুন সংস্থা। বলা যায়, সার্ভিস সেক্টরের ক্ষেত্রে বয়স্কদের খেয়াল রাখা সংক্রান্ত সংস্থার ডিমান্ড-ই বাড়াচ্ছে সাপ্লাই।
:আরও শুনুন:
গোঁফ দিয়ে যায় চেনা… কথায় বা কাজে নয়, গোঁফের জোরে জগৎ মাত করেছেন যারা
বিশ্বায়ন-উত্তর পৃথিবীতে ঘরের সংজ্ঞা বদলেছে। সারা বিশ্বই যেখানে ঘর, সেখানে থিতু হওয়ার এক ঠিকানা নেই কয়েক প্রজন্মের। মিলিয়ে গিয়েছে যৌথ পরিবারের ধারণা। এই প্রেক্ষিতেই দেখতে হবে, বয়স্কদের সংখ্যা বাড়ার বিষয়টি। বিশ্বায়ন কয়েক প্রজন্মকে যেদিকে ঠেলে দিয়েছে, তার উলটো পথেই চলন বয়স্কদের। তাঁরা এখনও আঁকড়ে এক পিন কোড। অনেক সময় কোনও কোনও শহরের দিকে তাকিয়ে কেউ কেউ তো বলেই ফেলেন, যে, ক্রমশ শহরটি বৃদ্ধাশ্রম হয়ে উঠছে। জীবনের প্রান্তবেলায় যাঁরা এক ঠিকানাতেই থেকে যেতে রাজি, তাঁদের দরকার হয়ে পড়ছে নানাবিধ পরিষেবা। শুধু বাহ্যিক কাজকর্মের সুবিধাই নয়, চিকিৎসা পাওয়াও এক্ষেত্রে বড় বিষয়। সবথেকে বড় বিষয় বোধহয় নিরাপত্তার আশ্বাস। এমন একটি উপায়, যেখানে ডাকলেই কেউ কাছে চলে আসেন। বিপদে সহায়ক হয়ে ওঠেন। এই যে চাহিদা, এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই তৈরি হচ্ছে একের পর এক স্টার্ট-আপ সংস্থা। একজন বয়স্ক মানুষের দেখভাল থেকে শুরু করে, তাঁর অসুখ হলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, এমনকী ইনসিওরেন্সের কাগজপত্র গুছিয়ে জমা দেওয়া, সব কাজই করে দিচ্ছেন সংস্থার তরফ থেকে পাঠানো কর্মীরা। তাঁরা যথেষ্ট যত্নের সঙ্গেই এ-কাজ করছেন। ফলত বয়স্করা এই ধরনের সংস্থার উপর বিশ্বাসও রাখছে। দেখা যাচ্ছে, চাহিদা ও ভরসার কারণেই সিনিয়র-কেয়ারের ব্যবসা ক্রমশ বাড়ছে। ২০২৪ সালের নীতি আয়গের রিপোর্টেও তা স্পষ্ট।
:আরও শুনুন:
ভজন-কীর্তনে নয়, অবসরে কীভাবে সুখের হদিশ খুঁজছেন দেশের বয়স্করা?
সেদিক থেকে দেখতে গেলে, এই পুরো অর্থনীতির মূল জায়গা হল একাকীত্ব ও অসহায়ত্ব। মানুষ বড় একলা। তার পাশে মানুষ কীভাবে এসে দাঁড়াবে? না, সামাজিক ভাবে এর উত্তর খুঁজে পাওয়া মুশকিল। সরকারও কি খুঁজছে? সে প্রশ্ন মুলতুবি থাক। তবে, এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছে প্রাইভেট সংস্থাগুলো। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মতো জরুরি বিষয়ই তাই-ই খুলে দিয়েছে ব্যবসার নতুন পথ।