আমার দাবি মানতে হবে। আমাদের দাবি মানতে হবে। মিছিল নয় এই দাবি উঠছে অনশন মঞ্চ থেকে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই! এমনটাই তো হয়ে থাকে। তবে এক্ষেত্রে অবাক হওয়ার বিষয় আছে বইকি। কারণ অনশন মঞ্চ আলো করে যে বসে আছে, তার বয়স মাত্র ১০। এই বয়সে কীসের দাবিতে অনশন করছে সে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি—
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গিকার।’
লিখেছিলেন কবি সুকান্ত। চেয়েছিলেন এমনটাই সত্যি হোক। হয়নি, বলা ভালো চেষ্টাও করা হয়নি। তার জন্য দায়ী বড়রা। অর্থাৎ সমাজটা যাঁদের ইচ্ছা অনিচ্ছার উপর নির্ভর করে সেইসব বিজ্ঞজনেরা। না রাখা হয়েছে পরিবেশের খেয়াল, না রাখা হয়েছে সামাজিকতার। দিনে দিনে এ পৃথিবী যেন আরও অযোগ্য হয়ে উঠছে, শিশুর বসবাসের জন্য। তাই বলে খুদেরা কি চুপ করে থাকতে পারে? কবি তাঁদের কোনও দায়িত্ব দেননি, অথচ এরা নিজেরাই ঠিক করে নিয়েছে, আগামী পৃথিবী সুন্দর করে রাখবে। যোগীরাজ্যের কোলারা কালান গ্রামের কথাই ধরা যাক। জানা গিয়েছে, সেখানকার এক খুদে, যার বয়স মাত্র ১০, স্থানীয় এক মদের দোকান বন্ধের জন্য অনশন করেছে। এবং ১৭ দিন নিজের দাবিতে অনড় থেকে তা কার্যকরও করেছে।
শুনতে অবাক লাগছে, তাই না? সেটাই অবশ্য স্বাভাবিক। যে কাজ বড়দের করার কথা ছিল অনেক আগে, সেই কাজ মাত্র ১০ বছরের এক খুদেকে করতে হচ্ছে, ব্যাপারটা অবাক করার মতোই। মদের নেশা সর্বনাশা, একথা নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে যোগীরাজ্যের ওই গ্রামের মানুষজন অতিষ্ট হয়ে উঠেছিলেন এই মদের কারণে। নেপথ্যে গ্রামের একমাত্র মদের দোকান। বিগত কয়েক মাস ধরে সন্ধে হলেই সে দোকানে ভিড় জমতে শুরু করত। স্থানীয়রা তো বটেই, বাইরে থেকেও অনেকে এসে যোগ দিত সেই ঠেকে। নিভু নিভু আলোয়, নেশা নেশা চোখে কতশত অসামাজিকের ভিড় জমত সেই দোকানে তার ইয়ত্তা নেই। অপরাধও কম হত না। একটু অন্ধকার হলেই ও পথ পেরোতে ভয় পেতেন অনেকে। বিশেষ করে মহিলারা। প্রয়োজনে যদিবা যেতে হয়, তাহলে সহ্য করতে হবে কটাক্ষ। মাত্রা ছাড়িয়ে তা শ্লীলতাহানির পর্যায়ও পৌঁছতেই পারে। একবার নয়, কয়েকবার এমন ঘটনার সাক্ষী থেকেছে ওই গ্রাম। শুধু তাই নয়, মদের নেশায় বাড়ি ফিরে বউ পেটানো, যেন এই গ্রামের অধিকাংশ পুরুষের গড় অভ্যেস হয়ে উঠেছিল। গার্হস্ত্য হিংসা, অসামাজিক পরিবেশ নিয়ে অতিষ্ট হয়ে গ্রামের মানুষ প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। সবাই নয় অবশ্যই। দাবি ওঠে দোকান বন্ধের। কিন্তু আদতে তা হয়নি। বরং নতুন করে রিনিউ হয়েছে মদের দোকানের লাইসেন্স। তাই বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ শুরু করেন। আর এখানেই ঘটে অদ্ভুত এক কাণ্ড।
শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অংশ হিসেবে গ্রামবাসী বেছে নেন অনশন। আর তাতেই যোগ দিতে এগিয়ে আসে এক খুদে। কথা শুরু হল যাকে দিয়ে, সেই ১০ বছর বয়সী বংশীকা। বাবা-মায়ের কড়া নিষেধ সত্তেও নিজের দাবিতে অনড় ছিল সে। বাধ্য হয়ে বাকিরাও মেনে নেয় তার কথা। খাবার-জল ছাড়াই সকলের সঙ্গে মিলে অনশন শুরু করে। এভাবেই দিনের পর দিন কাটতে থাকে। ১৭ দিন পেরোলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নেওয়া হয়। মদের দোকান বন্ধ না করা গেলেও, তার জায়গা সরানো হয়। পুরোপুরি না হলেও, এতে গ্রামের পরিস্থিতি অনেকটা ঠিক হবে, তা জানতেন সকলে। বাকীটা সময়ের অপেক্ষা। আপাতত গ্রামের মানুষ ওই ছোট্ট মেয়ের কাছে কৃতজ্ঞ। ভাগ্যিস বড়দের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে নিজের মতো করে সেও আন্দলনে শামিল হয়েছিল, তাইতো এতবড় বদল হল এত সহজে।