অগ্নিকাণ্ড বা ভূমিকম্প, দুর্ঘটনা-দুর্যোগে বিপর্যয়স্থলে প্রায়শই আটকে পরে মানুষ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র যোগাযোগের অভাবে সেইসব আটকে থাকা মানুষদের বেঘোরে প্রাণ হারাতে হয়। কিন্তু সেই সমস্যার সমাধান করতে পারে ইঁদুর। আকারে ছোট বলেই, মানুষ যা পারে না, সেই কাজ করে ফেলতে পারে তারা। কীভাবে সম্ভব সেই কাজ? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
দুর্যোগ বা দুর্ঘটনা মোকাবিলায় মানুষ যত ব্যবস্থাই নিক না কেন, কিছু অসুবিধা থেকেই যায়। বিপর্যয় মুহূর্তে অনেক সময় সঠিকভাবে জানাও যায় না যে, ঠিক কতজন ঘটনাস্থলে আটকে রয়েছেন। ফলত তাঁদের বাঁচার আশঙ্কাও ক্ষীণ হয়ে যায়। কিন্তু সেই সমস্যা মিটিয়ে দিতে পারে ছোট্ট একটি ইঁদুর। শুনতে অবাক লাগলেও, ইঁদুরের মাধ্যমেই দুর্ঘটনাস্থলে আটকে পড়া মানুষদের খোঁজ পাওয়া সম্ভব।
আরও শুনুন: ধর্ম বাধা নয়, পাকিস্তানের মানুষ সযত্নে আগলে রেখেছেন শংকরাচার্যের স্মৃতি
সম্প্রতি বেলজিয়ামের একটি সংস্থা বিজ্ঞানীরা এমনই এক অসাধারণ কৌশল আবিষ্কার করেছেন। বিশেষ প্রজাতির কিছু ইঁদুরকে গবেষণাগারে রেখে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তারপর সেই ইঁদুরগুলির দেহের মাপ অনুযায়ী বানানো হয়েছে একটি ছোট্ট ব্যাগ। বিজ্ঞানীদের দাবি, এই ব্যাগের মধ্যেই থাকবে বিশেষ ক্যামেরা। যা অন্ধকারেও ছবি তুলতে বা সামান্য শব্দ হলেও তা রেকর্ড করতে সক্ষম। সেই ব্যাগ-সহ ক্যামেরা জুড়ে দেওয়া হবে ইঁদুরের পিঠে এবং সেইভাবেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে কোনও দুর্ঘটনাস্থলে। বিজ্ঞানীদের দাবি, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইঁদুরগুলির সেই বিপর্যয়স্থলের একেবারে গভীরে পৌঁছে যাবে অনায়াসেই। আর তাদের শরীরে লাগানো ক্যামেরার মাধ্যমে ভিতরের ছবি স্পষ্ট ভাবে দেখতে পাবেন বাইরে থাকা উদ্ধাকারীর দল।
আরও শুনুন: শুধু কোজাগরী পূর্ণিমাতেই নয়, ঘোর অমাবস্যা তিথিতেও হয় দেবী লক্ষ্মীর পুজো
ডোনা কিন নামে গবেষকের নেতৃত্বেই এই অদ্ভুত কৌশল আবিষ্কার করেছেন বেলজিয়ামের ওই বিজ্ঞানীর দল। আকারে অত্যধিক ছোট হওয়ার কারণেই ইঁদুরকে এহেন কাজের জন্য বেছেছিলেন তাঁরা। ২০১৯ সালে এই বিষয়ে গবেষণার কাজ শুরু হয়। দীর্ঘ গবেষণার পর ২০২১ সালে তাঁদের এই কৌশলকে স্বীকৃতি দেয় সে-দেশের সরকার। তবে গবেষণার সব কৃতিত্ব শুধুমাত্র ওই বিজ্ঞানীদের নয়। ইঁদুরের পিঠে আটকানোর ব্যাগটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন আইন্দোভেন ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির গবেষকেরাও। তবে এই মুহূর্তে ইঁদুরগুলিকে এই বিশেষ কাজে ব্যবহার করা সম্ভব নয়। কারণ একটি ইঁদুরকে সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত করতে প্রায় ১২ মাস সময় লাগছে। এবং কোনও দুর্ঘটনাস্থলে আটকে থাকা মানুষদের খোঁজা একটিমাত্র ইঁদুরের কাজ নয়। তাই আর বেশ কিছু সংখ্যক ইঁদুরকে প্রশিক্ষিত করার পরেই এই কাজ সম্পূর্ণভাবে শুরু করা যাবে বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।