কোথাও ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া তো কোথাও গণহারে বনবাসে যাওয়া- বৃষ্টির কামনায় বিভিন্ন আশ্চর্য আচার পালন করার চল রয়েছে দেশজুড়ে। কিন্তু তা বলে মৃতদেহকে জল পান করানো? বৃষ্টি নামানোর জন্য নাকি এই তুকেই আস্থা রাখেন দেশের একটি অঞ্চলের বাসিন্দারা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
মৃতের উদ্দেশে জল দান করার প্রথা, অর্থাৎ তর্পণের প্রচলন রয়েছে হিন্দু শাস্ত্রে। পিতৃপক্ষের সূচনায় তর্পণ করে থাকেন অনেকেই। কিন্তু সে তো আত্মাকে উদ্দেশ্য করে জল দান করা। সত্যি সত্যি মৃতদেহকে জল পান করানোর কথা কি শুনেছেন কখনও? আজ্ঞে হ্যাঁ। শুনতে যতই আশ্চর্য লাগুক না কেন, ঠিক এই কাজটিই করে থাকেন দেশের একটি বিশেষ অঞ্চলের মানুষেরা। তাও আবার সদ্যমৃত কোনও ব্যক্তিও নয়, একেবারে কবর খুঁড়ে মৃতদেহ বের করে তার মুখে জল দিয়ে থাকেন তাঁরা।
আরও শুনুন: খুনের কিনারায় হিমশিম গোয়েন্দা, আততায়ীকে ধরিয়ে দিল ছাপোষা এক ডাকটিকিট
কিন্তু কেন এমন কাজ করেন ওই মানুষেরা? তাহলে খুলেই বলা যাক।
কর্ণাটকের কালাকেরি গ্রামে সংঘটিত এই কাণ্ড প্রকাশ্যে এসেছে সম্প্রতি। কর্ণাটকে যথেষ্ট পরিমাণে বৃষ্টি হয়, যা কোথাও কোথাও বন্যা পর্যন্ত ডেকে আনে। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে, এই গ্রামটিতে এক ফোঁটাও বৃষ্টি হয়নি। যে ঘটনাকে ‘অভিশাপ’ বলেই মনে করেছেন গ্রামবাসীরা। আর সেই অভিশাপ কাটানোর উদ্দেশ্যেই এই প্রথার দ্বারস্থ হন তাঁরা। জানা গিয়েছে, গত মাসে মৃত্যু হয়েছে এমন গ্রামবাসীদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছিল প্রথমে। তারপরে এক এক করে ২৫টি কবরের কাছে যান গ্রামবাসীরা। প্রতিটি কবর অন্তত দু’ফুট খুঁড়ে ফেলা হয়, যাতে মৃতদেহের মুখটি দেখা যায়। তারপর সেই মুখে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়েছিল একটি নল, যার অন্য মুখটি ছিল একটি জলের পাত্রে। এইভাবেই ২৫টি মৃতদেহকে কার্যত জলপান করিয়েছেন গ্রামবাসীরা। ঘটনাচক্রে, শেষ মৃতদেহটিকে জলপান করানোর পরেই নাকি গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে এলাকায়।
আরও শুনুন: গরমের দাবদাহে হাঁসফাঁস দশা! বৃষ্টি নামাতে কী কী কাজ করেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ?
জানা গিয়েছে, এহেন কার্যকলাপ এই প্রথম নয়, আগেও একাধিকবার ঘটিয়েছেন ওই অঞ্চলের বাসিন্দারা। বহু বছর আগে নাকি ওই অঞ্চলে মারা গিয়েছিলেন এক ব্যক্তি, মৃত্যুর পরেও তাঁর মুখটি সামান্য খোলা অবস্থায় ছিল। ওইভাবেই তাঁকে কবর দেওয়া হয়। কিন্তু সেই বছরেই গ্রামে নেমে আসে তীব্র খরা আর তার জেরে শুরু হয় দুর্ভিক্ষ। এই পরিস্থিতিতে এক গণৎকার জানান, ওই মৃতদেহটিই আসলে তৃষ্ণার্ত। আর সেই থেকেই এহেন প্রথার উৎপত্তি। সেই সময়েও নাকি মৃতকে জলপান করানোর পর বৃষ্টি হয়েছিল বলে দাবি করেন ওই গ্রামবাসীরা। আর সেই কারণেই, আজও এই প্রথাকে মান্যতা দিয়ে পালন করে চলেছেন তাঁরা।