যে কোনও খবরের কাগজে ‘নিরুদ্দেশের সন্ধানে’ কলামে দেখা যায় একের পর এক হারিয়ে যাওয়া মানুষের নাম, ঠিকানা, ছবি। কেবল মানুষ নয়, পোষা জীবজন্তুদের হারিয়ে যাওয়ার খবরও শোনা যায় মাঝেমধ্যেই। কিন্তু তা বলে একটা আস্ত ঘরই হাপিস হয়ে যেতে পারে কখনও? তাও একটা প্রাসাদের মাঝমধ্যিখান থেকে? শুনে নেওয়া যাক তেমনই এক ঘটনা।
প্রাশিয়ার ‘অ্যাম্বার রুম’-কে বলা হত পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য। বলা হত ততদিনই, যতদিন তা উধাও হয়ে যায়নি। হ্যাঁ, প্রাসাদের মধ্যে থেকেই হারিয়ে গিয়েছিল গোটা ‘অ্যাম্বার রুম’। তাও আবার প্রাশিয়ার কোনও প্রাসাদ নয়, রাশিয়ার একটি প্রাসাদের ভেতর থেকে। আর সেই যে গেল, তার আর কোনও খোঁজই মিলল না এতদিনেও। কি, সব গুলিয়ে যাচ্ছে তো? ভাবছেন তো, প্রাসাদের মধ্যে থেকে একটি ঘর হারিয় যায় কী করে, আর এক দেশের প্রাসাদের একটি ঘর আরেক দেশে যায়ই বা কীভাবে? তাহলে খুলেই বলি।
আরও শুনুন: ইংল্যান্ডের রাজমুকুটের মণি নাকি অভিশপ্ত! বহু দুর্ঘটনার সাক্ষী এই রত্ন
এই বিশেষ ঘরটি নির্মাণ করা শুরু হয়েছিল অষ্টাদশ শতকে। প্রাশিয়ার বার্লিনে, শার্লটেনবার্গ প্রাসাদে এই অ্যাম্বার রুম গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়। অ্যাম্বার পাওয়া যায় গাছের বহুপ্রাচীন ফসিল থেকে, কিন্তু অপূর্ব রং ও সৌন্দর্যের কারণে এর গুরুত্ব বহুমূল্য রত্নের মতোই। অ্যাম্বার প্যানেলের উপর কাচ এবং সোনা দিয়ে এই ঘরের অলংকরণ করা হয়েছিল। নকশা বানিয়েছিলেন বারোক শৈলীর জার্মান ভাস্কর আন্দ্রেজ শ্লাটার। রানি সোফি-শার্লটকে উপহার দেওয়ার জন্যই এমন একটি অভিনব ঘর বানাবার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন প্রাশিয়ার রাজা প্রথম ফ্রেডরিক।
আরও শুনুন: কেবল শান্তির দূত নয়, বিশ্বযুদ্ধে গুপ্তচরের কাজও করেছিল পায়রা
কিন্তু দুর্ভাগ্য, এই ঘর দেখে যেতে পারলেন না তাঁরা। ১৭১৩ সালে রাজা রানির মৃত্যুর পর সিংহাসনে অভিষেক হল ফ্রেডরিক উইলিয়াম-এর। পুরনো রাজার এই দামি শখকে পাত্তা না দিয়ে নির্মাণকাজ বন্ধ করার আদেশ দিলেন তিনি। কিন্তু এমন সময়েই প্রাশিয়া ভ্রমণে এলেন দাপুটে তরুণ জার পিটার দ্য গ্রেট। সেটা ১৭১৬ সাল। রাশিয়ার জারকে কী উপহার দিলে তা তাঁর মনে ধরবে? ভাবতে ভাবতেই উপায় পেয়ে গেলেন ফ্রেডরিক। যার পরিণতি, বিশাল বিশাল বাক্সে গোটা অ্যাম্বার রুমটাই স্থানান্তরিত হয়ে গেল রাশিয়ায়। রাশিয়ার ক্যাথারিন প্রাসাদে এই ঘরটিকে স্থাপন করা হয়। ঘরটির আয়তন প্রায় ৬০০ স্কোয়ার ফিট ছিল বলে জানা যায়, আর তাতে অ্যাম্বার ছিল অন্তত ৬ টন। ঐতিহাসিকদের অনুমান, পুরো ঘরটি তৈরি হতে সেই সময়ে খরচ হয়েছিল প্রায় ১৪২০ কোটি মার্কিন ডলার।
শুনে নিন বাকি অংশ।